15 August 2019

কিশোরকবি সুকান্তের ৯৩তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


মাত্র ২১ বছর বয়েসের মধ্যেই সুকান্ত ভট্টাচার্য  হয়ে উঠেছিল কিশোর কবি সুকান্ত।একুশ বছরের মধ্যে তিনি এমন কিছু কবিতা লিখেছেন সেগুলি এক সময় বিপ্লবের আগুনশিখা হিসাবে কাজ করেছে।সব সময় তিনি সামাজিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়াতে তাঁকে প্রতি মুহূর্তে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সমাজসেবার ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সুকান্ত যখন কৈশোর অতিক্রম করেন,তখন সমগ্র ভারতবর্ষ এক রাজনৈতিক ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছিল।

কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য  সুকান্তের সম্পর্কিত ভাতুষ্পুত্র।
দক্ষিণ কলকাতার একটি গুরুত্ব পূর্ণ উড়াল পুল  কবি সুকান্তের স্বরণে নামে রাখা হয়েছে সুকান্ত সেতু। এটি  যাদবপুরকে (সুলেখার নিকটে) সন্তোষপুর, গরফা, পালবাজার, হাল্টুর সাথে সংযোগকারী রেলওয়ে ওভার ব্রিজ। এটি পূর্ব মহানগর বাইপাসের সাথে সরাসরি সংযোগ সরবরাহ করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় থেকেই সুকান্তের  ছড়া লেখা সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় ছাত্রদের লেখা ও ছবি নিয়ে সপ্তমিকা নামে হাতে লেখা একটি পত্রিকা বার করেন।  ভাব, ভাষা, ছন্দ  সব আপন মন থেকেই আসত। তাঁর ছড়া ছিল নিপীড়িত মানুষদের কথা ভেবে লেখা যারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না।
মাতুলালয়ে সুকান্ত ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ও মাতার নাম ছিল সুনীতি দেবী। তাঁর পিতার সংসার ছিল অভাব অনটনে ভরা।১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলন,১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৪ সালের নেতাজীর কার্যকলাপ,১৯৪৫ এর নৌবিদ্রোহ এবং ১৯৪৬ সালের ডাক ও তার বিভাগের ধর্মঘট - প্রভৃতি অসংখ্য আন্দোলন ও বিদ্রোহে সারা ভারত উত্তাল। এই দ্রুত পরিবর্তন সুকান্তকে উদ্বেলিত করে। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়,  নানা সমাজ সেবামূলক কাজও তিনি করতেন। এর মধ্যে সুকান্ত যোগ দেন ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিতে। তখন স্বাধীনতা নামে ছিল কম্যুনিস্ট পার্টির  দৈনিক পত্রিকা। এই পত্রিকায় 'কিশোর সভা' বিভাগের সম্পাদক ছিলেন তিনি।। এই বিভাগের সব ছড়াই তাঁর লেখা ছিল। তিনি কৃষ ক ও শ্রমিক আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন।তাঁর লেখা গান 'রানার' খুব ই জনপ্রিয়। বিদ্রোহ কবিতাটি আজও অনেককে অনুপ্রাণিত করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সুকান্ত অনেক গান রচনা করেন বিভ্রান্ত জনগণকে সতর্ক করবার জন্য।দেশের দুঃখদুর্দশা, অপমান নিয়ে তাঁর লেখা ছিল---

অবাক  পৃথিবী অবাক করলে তুমি।

জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ-স্বদেশ ভুমি।।

এ দেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম

অবাক পৃথিবী। সেলাম তোমাকে সেলাম।

তরুণ কবি সুকান্ত তাঁর কবিতায় রোষ,অভিমান, বেদনা ও বিদ্রোহ ফুটিয়ে তোলেন।তাঁর কতকগুলো কবিতা যথা রানার, সিঁড়ি,,হে মহাজীবন,বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি প্রবন্ধ ও কয়েকটি গল্পও লিখেছিলেন।পরবর্তীকালে সুকান্তের সমস্ত কাব্য গ্রন্থ ও কতকগুলো চিঠিসহ 'সুকান্ত সমগ্র' প্রকাশিত হয়েছে।
আর্থিক অনটন ও পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত  হয়েছিল সুকান্তের জীবন। স্কুলের গন্ডি তিনি পার হতে পাতেরেন নি। কিন্তু অভাব অনটন সত্বেও তাঁর কলম থেমে থাকেনি।
তাঁর লেখা শেষ কবিতার বই 'ছাড়পত্র' যখন ছাপা হচ্ছিল সেই সময় সুকান্ত যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হন। 'ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের ‘হে মহাজীবন’ কবিতাটিতে সুকান্ত 

পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটির

সাথে তুলনা করেছেন। ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে  যক্ষ্মারোগে কবি সুকান্ত পরলোক গমন করেন।


প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।


No comments:

Post a Comment