25 November 2018

জেনে নিন যতীন্দ্রনাথ দাস কেন জেলে আমরণ অনশন করেছিলেন-

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীন্দ্রনাথ দাস এক স্মরণীয় নাম। তিনি যতীন দাস নামেও পরিচিত ছিলেন। ১৯০৪ সালের ২৭শে অক্টোবর কলকাতাতে তাঁর জন্ম। তাঁর আত্মত্যাগ, দেশের জন্য জীবন বলিদান আজও প্রতিটি ভারতবাসী তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করেন।  ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অনশন করে যাঁরা যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম হলেন যতীন্দ্রনাথ দাস।
১৯২৩ সনে বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কলকাতার ভবানিপুরে ঘাঁটি করলে তিনি এই দলে যোগ দেন। পরে দক্ষিণেশ্বরের বিপ্লবী দলের সংগেও তাঁর যোগাযোগ হয়। ১৯২৪ সালে যতীন্দ্রনাথ দাস গ্রেপ্তার হয়ে ময়মনসিংহ জেলে প্রেরিত হন। জেল কর্তৃপক্ষের আচরণের প্রতিবাদে যতীন্দ্রনাথ দাস ও পান্নালাল মুখার্জী  অনশন  শুরু করেন এবং দীর্ঘ ২২ দিন পর ডি আই জি লেম্যানের হস্তক্ষেপে তাঁরা অনশন তুলে নেন। ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি মুক্তি পান।
সারা দেশ যখন লালা লাজপৎ রায়ের শোচনীয় মৃত্যু নিয়ে  বিক্ষুব্ধ; সেদিন তা প্রকাশের ভাষা দিয়েছিল বিপ্লবী ভগৎ সিং ও বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত। তাঁরা অ্যাসেম্বলি হলে একটি উন্মুক্ত স্থানে কোনো মানুষকে হত্যা না করে সজোরে একটি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা বানাতে যতীন্দ্রনাথ দাস পারদর্শী ছিলেন। বোমা নিক্ষেপের ঘটনা একই দলের কাজ- এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটি ষড়যন্ত্রের মামলা সরকারি পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা’।এই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১৯২৯ সালের ১৪ জুন আত্মত্যাগী, সাহসী যতীন্দ্রনাথ দাসকে তাঁর কলকাতার বাড়ি থেকে লাহোর পুলিশের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয় এবং লাহোর জেলে প্রেরণ করা হয়।
সে সময় স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্দিদের সাধারণ অপরাধী হিসাবে বিচার করা হতো। অনান্য ও ইউরোপিয়ান অপরাধীদের জেলের মধ্যে যে ভাবে রাখা হতো  তার থেকে অনেক খারাপ পরিবেশে স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্দিদের রাখা হতো। সাথে চলত অকথ্য অত্যাচার ও  দুর্ব্যবহার। খাবারের মান ছিল খারাপ। খবরের কাগজ বা বই পড়ার কোনো সুযোগ থাকতনা। তাছারা জেলের মধ্যের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর। জেলের ভেতর রাজনৈতিক বন্দিদের মর্যাদার দাবীতে এবং মানবিক সুযোগ সুবিধার আন্দোলন শুরু হয় এবং তা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। ১৩ জুলাই থেকে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের সমর্থনে যতীন্দ্রনাথ অনশন সংগ্রাম আরম্ভ করে। যতীন্দ্রনাথ  ছাড়া আর কারো অনশন আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ছিল না। ভাবাবেগে চালিত হয়ে অনশন সংগ্রামে যোগ দিতে নিষেধ করেছিল অন্য সাথীদের। তিনি বলেছিলেন  রিভলবার পিস্তল নিয়ে লড়াই করাই চেয়ে অনেক বেশি কঠোর এক অনশন সংগ্রামে আমরা নামছি। অনশন সংগ্রামীকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হয়। যতীন দাস আরো বলেন, সে নিজে অনশন আরম্ভ করলে যতদিন না সরকার দাবী মেনে না নেয়, ততদিন অনশন চালিয়ে যাবে। যতীন্দ্রনাথের হুশিয়ারি সত্ত্বেও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  অনশন শুরু হয়। এই সময় তাঁকে বহুবার জোর করে খাওয়াবার চেষ্টা করা হয়। এমন কি সেলের মধ্যেও বিভিন্ন খাবার ও পানীয় রাখা থাকত যাতে তিনি খাবার খেয়ে অনশন তুলে নেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অনড়। এমন কি তিনি ডাক্তারের ওষুধ পর্যন্ত মুখে নেন নি। দীর্ঘ ৬৩ দিন অনশনের পর তিনি ১৯২৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর মারা যান।এইভাবে মৃত্যুবরণ করার ফলে বন্দিদের  উপর অত্যাচার প্রশমিত হয়েছিলো এবং তাদের রাজবন্দির মর্যাদা দেওয়া শুরু হয়েছিল।



3 comments: