05 May 2020

অগ্নিকন্যা প্রথম বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী মহিলা শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৫ই মে জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রথম বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী মহিলা শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে চট্টগ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞানী হবার। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল।  সেই সময়ে ঝাঁসীর রানী তাঁর চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে। প্রীতিলতা চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি ১৯২৯ সালে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর দুই বৎসর পর প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডিস্টিংশনসহ গ্রাজুয়েশন করেন।গ্রাজুয়েশন করার পর তিনি চট্টগ্রামের নন্দনকানন অপর্ণাচরণ নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন
১৯৩০ সালে সমগ্র বাংলা জুড়ে অনেক বিপ্লবী দল সংগ্রামরত ছিল। ঐসব দলের সদস্যরা বিশ্বাস করত যে, কেবল সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা অর্জিত হতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোপন দলিলপত্র পাঠ থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হন। প্রীতিলতার এক ভাই মাস্টারদাকে তাঁর বিপ্লবী চেতনা সম্পর্কে অবহিত করেন। প্রীতিলতা সূর্যসেনের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী দলের প্রথম মহিলা সদস্য হন। তিনি টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইন দখল অভিযানে যুক্ত ছিলেন। তিনি জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ’ এইরূপ অবমাননামূলক কথার জন্য ক্লাবটির দুর্নাম ছিল। ক্লাব আক্রমণ সফল করে পুরুষবেশী প্রীতিলতা সামরিক কায়দায় তাঁর বাহিনীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এই সময়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হলে পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর আত্মদান বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামে আরো উজ্জিবিত করে তোলে।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

02 May 2020

সত্যজিৎ রায়ের ৯৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ ২রা মে, ২০২০ সত্যজিৎ রায়ের  ৯৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সত্যজিৎ রায়কে আমরা শুধু একজন আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার হিসাবে সম্মান জানাই তা নয় বাংলা এবং বাঙালিকে যে সব মহামানব সারা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি তাঁদের মধ্যে একজন।

সত্যজিৎ রায় বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন।১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ২৮টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন যা বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৯২ সালে চরম অসুস্থার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'লাইফ টাইম এচিভমেন্টের' জন্য অস্কার পুরস্কার পান। অসুস্থতার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকততে না পারার দরুন অনুষ্ঠানের কর্তারা  শয্যাশায়ী সত্যজিৎ রায়ের কাছে গিয়ে  পুরস্কার প্রদান করেন। এটা টিভিতে লাইভ সম্প্রচারনও করা হয়।

পিতা সুকুমার রায় ও ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী-

সত্যজিৎ রায়ের জন্ম  কলকাতায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য শালী রায় পরিপবারে ১৯২১ সালের ২ রা মে। পিতা সুকুমার রায় ও পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীছি লেন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। গড়পারের  বাড়িতে এক তলায় ছিলউ পেন্দ্রকিশোরের ছাপাখানা। সেখানেই চলত 'সন্দেশ' পত্রিকার লেখা ছাপান, বাঁধান।ছেলেবেলায় এই সব দেখতে দেখতেই সত্যজিৎ বেড়ে ওঠে এবং ইচ্ছে জাগে পত্রিকার জন্য লিখতে এবং আঁকতে।তাই তিনি কাগজে কিছু এঁকে বুড়ো চাকর রামদহনের হাতে দিতেন  'সন্দেশ' পত্রিকায় ছাপানোর জন্য।

শিক্ষাও কর্মজীবন-
সত্যজিতের বয়স যখন তিন বছর তখন পিতা সুকুমার রায় মারা যান। সত্যজিতের জন্মের ছবছ র আগে মারা যান ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। সুতরাং সত্যজিতের লালন পালনের দায়িত্ব এসে পড়ে মাতা সুপ্রভা দেবীর ওপর। মা সুপ্রভা দেবী সত্যজিৎকে রাত্রে কোনান ডয়েলের গল্প  বাংলায় শোনাতেন।
১৯৩৬ সালে সত্যজিৎ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্সি  কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হন। এরপর  রবীন্দ্রনাথের  শান্তিনিকেতনে কিছুদিন  কাটিয়ে চিত্রশিল্পে পারদর্শিতা অর্জন করেন। কলকাতায় ফিরে এসে কমার্শিয়াল  আর্টিস্ট  হিসাবে সিগনেট প্রেসে যোগদান করেন। এই সময় সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত  হয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ' পথের পাঁচালি' উপন্যাস।

সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা রম্য এবং শিশুসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। সাহিত্যিক হিসাবে তিনি
একসময়  কিংবদন্তী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীও ছিলেন একজন নামকরা লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক ও প্রকাশক। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পর তিনি বিয়ে করেন কাদম্বিনী দেবীকে। দ্বিতীয় স্ত্রী কাদম্বিনী দেবী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৮২ সালে প্রথম মহিলা গ্রাজুয়েট। এর পরে কাদম্বিনী বসু ডাক্তার হয়ে ছিলেন।  সত্যজিতের মা এবং রায় বংসের অন্য নারীদের জীবনেও সুগভীর প্রভাব ছিল এই নারীর। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তার সমবয়সী রবীন্দ্রনাথের তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং প্রায়সই তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত  করতেন।

বিখ্যাত ফরাসি চিত্র পরিচালক জাঁ রেনোয়া ১৯৫০ সালে কলকাতায় আসেন তাঁর ছবি 'রিভার' এর দৃশ্য গ্রহণ করার জন্য। সত্যজিৎ রায় তাঁর সাথে দেখা করেন এবং  আলাপচারিতার মাধ্যমে আধুনিক চলচ্চিত্র শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।এই সময় সত্যজিৎ ডি. জে.  কিমার কোম্পানিতে আর্ট ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছিলেন। তখন সত্যজিৎ প্রথমবার ইংল্যান্ড যাবার সুযোগ পান। ১৯৫০ সালে সত্যজিৎ সস্ত্রীক ইংল্যান্ডে যান।। সেখানে তিনি দেখেন 'বাই সাইকেল থীভস'।  এর পর চার মাসে তিনি ৯৯ টি বই দেখেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা করার একটা ইচ্ছা তীব্রতা বাড়তে থাকে 'বাই সাইকেল থীভস' দেখার পর। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পথে সত্যজিৎ পথের পাঁচালির চিত্রনাট্য  লিখে ফেলেন। প্রথম দিকে ছবির প্রযোজক না পাওয়ায় নিজের অর্থের ওপর নির্ভর  করে ছবিটি  শুরু  করেন। পরে পশ্চিমবঙ্গ-এর মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের আর্থিক সাহায্যে  ছবির কাজ শুরু হয়।১৯৫৫ সালের মাঝামাঝি  সময় ছবিটি মুক্তি পায়। পরের বছর
কান চলচ্চিত্র  উৎসবে পথের পাঁচালি পুরস্কার পায়। এর পরে  সত্যজিৎকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।এরপর একের পর একটা ছবি করে চলেন। পথের পাঁচালি, অপরাজিত এবং অপুর সংসার এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত। এই ত্রয়ী সত্যজিতের
জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্মজীবন হিসেবে স্বীকৃত। অপুর ট্রিলজি গোটা পৃথিবীর মানুষ কে একটা চিরন্তন সত্যের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জীবনে দুঃখ, কষ্ট,মৃত্যু, যন্ত্রণা থাকলেও জীবন থেমে থাকে না। সত্যজিৎ রায় স মাজের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতাথেকেই একের পর এক ছবি করে গেছেন। নির্মাণ করেন, পরশ পাথর , জলসা ঘর(জমিদারি প্রথার অবক্ষয় নিয়ে নির্মিত ‘জলসাঘর’)।  অপুর সংসার, অভিযান, মহানগর,
কাপুরুষ ও মহাপুরুষ , নায়ক, গুপি গাইন বাঘা বাইন      (উপেন্দ্রকিশোরের গল্প অবলম্বনে)। অরণ্যের দিন রাত্রি, সীমাবদ্ধ, অশনি সংকেত সোনার কেল্লা, জন অরণ্য, শতরঞ্জ কি খিলাড়ী, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, শাখা প্রশাখা এবং সর্বশেষ বানানো সত্যজিতের সিনেমার নাম আগুন্তুক।

সত্যজিৎ রায় কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ওপর একটি  তথ্যচিত্র  নির্মান করেন। ১৯৬১ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে যুগ্ম সম্পাদনায় 'সন্দেশে'র পুনঃ প্রকাশ  শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি গুরুতর ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আমেরিকায় গিয়ে বাইপাস সার্জারি  করেন এবং বুকে পেসমেকার বসান। তারপরও তিনি একাধিক  ছবির  কাজ করে গেছেন।

১৯৯২ সালের ২৩ শে এপ্রিল চিরনিদ্রায়  ঢলে পড়েন এই মহান ব্যক্তিত্ব। ভারত  সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সন্মান 'ভারতরত্ন' উপাধিতে ভূষিত করেছিল।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।