31 October 2021

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৬তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।















ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা রূপে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল খুবই বিখ্যাত  ছিলেন। তিনি ১৮৭৫ সালে ৩১শে অক্টোবর গুজরাটে জন্মগ্রহণ  করেন। তিনি ব্রিটেন  থেকে ব্যারিস্টারি  পাশ করে আমেদাবাদে ব্যারিস্টারি পেশায় যুক্ত হন।  এই পেশায় তিনি সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু মন পড়ে থাকে দেশসেবায়। সে সময় ভারতের সর্বত্র গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন  চলছিল। আইন ব্যবসা ত্যাগ করে তিনি গান্ধীজীর আহ্বানে কংগ্রেসে যোগদান করেন।

আমেদাবাদের মিল শ্রমিকদের ধর্মঘটে  মহাত্মা গান্ধী  ও  সর্দার প্যাটেল  ছিলেন সংগ্রামের অধিনায়ক। অহিংসা ও সংযমের প্রভাবে শ্রমিকদের জয় হয়। এই আন্দোলনে সর্দার প্যাটেলের অসাধারণ দক্ষতা দেখান।

১৯৩১ সালে ক রাচীতে ক ং গ্রেসের অধিবেশনে সর্দার প্যাটেল  সভাপতি হন। তিনি গান্ধীজীর ডান্ডি অভিযানের পূর্বে গ্রেপ্তার  হন। সর্দার প্যাটেলের প্রচেষ্টায় ভারতের দ্বিতীয় বারের নৌবিদ্রহ তুলে নেওয়া হয়েছিল।  ১৯৪৬ সালে অন্তর্বতী সরকার প্রতিষ্টিত  হলে সেখানে  তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  ছিলেন। স্বাধীন  ভারতের ইনি উপ প্রধানমন্ত্রী ওস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করেন। দৃঢ়চেতা ও অসাধারণ  ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্যাটেলকে লৌহমানব বলা হত।

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৪ সাল থেকে ৩১শে অক্টোবরকে ভারতের রাষ্ট্রীয় একতা দিবস বা জাতীয় ঐক্য দিবস হিসাবে পালন করা হয়।  সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল প্রাক-স্বাধীন দেশের 562টি রাজ্যকে ভারতের প্রজাতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য একত্রিত করার কৃতিত্ব পান। ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুম্বাইতে সৰ্দার বল্লভভাই পটেল পরলোকগমন  করেন।



২০১৮ সালে সৰ্দার বল্লভভাই পটেলের স্মৃতির  উদ্দেশ্যে ভারত সরকার  ঐক্যের মূর্তি নামে তাঁর  একটি শ্রেষ্ঠ  ভাস্কর্য  ১৮২ মিটার লম্বা মূর্তি নির্মান করা হয়। এটি ভারতের গুজরাট  রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে  নর্মদা নদীর পাশে অবস্থিত ভাস্কর্যটি ২০ হাজার বর্গ  মিটারেও বেশি এলাকা  জুড়ে  অবস্থিত  এবং একটি কৃত্রিম  হ্রদ দ্বারা পরিবেষ্টিত।














21 October 2021

২১ অক্টোবর,২০২১ সালে আজাদ হিন্দ সরকার গঠনের ৭৮তম বার্ষিকীতে প্রতিবেদন। 








এই দিনে  ১৯৪৩ সালে আজাদ হিন্দ সরকার নামে ভারতের প্রথম স্বাধীন অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করা  হয়।  ক্যাপ্টেন-জেনারেল মোহন সিং ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু পরে তা ভেঙে যায়। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ) কে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ সালের  ২১ অক্টোবর নতুন রূপ দান করেন।

ব্রিটিশ শাসন থেকে সম্পূর্ণ ভারতীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আজাদ হিন্দ ফৌজ শুরু হয়েছিল। জাপান, ক্রোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, ইতালি এবং বার্মাসহ কয়েকটি দেশ আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ২১শেঅক্টোবর, ১৯৪৩ সালে, সুভাষচন্দ্র বসু অধিকৃত সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দের অস্থায়ী সরকার গঠনের ঘোষণা করেছিলেন।  তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে নির্বাসনে থাকা অস্থায়ী সরকারের ব্যানারে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতকে মুক্ত করার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।

সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ২৩শে জানুয়ারি, ১৮৯৭ সালে কটকে (সেই সময় বাংলা প্রদেশের উড়িষ্যা বিভাগের অংশ)।  'তোমরা আমায়  রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা  দেব'।  একথা বলেছিলেন বাংলার একজন তেজস্বী  বীরপুরুষ সুভাষচন্দ্র বসু। পিতার নাম জানকীনাথ বসু। ইনি কটকের বিখ্যাত  সরকারি উকিল ছিলেন।  মাতা প্রভাবতী দেবী। কটকের র‍্যাভেনশা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে সুভাষচন্দ্র তার স্কুল শিক্ষা শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অল্প সময়ের জন্য পড়াশোনা করেন।এই কলেজে পড়ার সময় এক ইংরেজ অধ্যাপক বাঙ্গালী জাতির সম্পর্কে কটুক্তি করেন। সুভাষচন্দ্র তাকে মেরে এই অপমানের প্রতিশোধ  নেন। ফলে সুভাষচন্দ্রকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়। পরে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শন অধ্যয়ন করেন এবং তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে যান।

যেহেতু সুভাষচন্দ্র একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন, তিনি মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় (ICS) যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।  কিন্তু, সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কাজ করতে চান না বলে  তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন এবং কংগ্রেস দলের সদস্য হন।  মহাত্মা গান্ধী এবং জওহর লাল নেহেরুর মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বের সাথে কাজ করা সত্ত্বেও, সুভাষচন্দ্রের  প্রধান মতাদর্শগত পার্থক্য ছিল।

সুভাষচন্দ্র  ১৯৩৮ সালে কংগ্রেস পার্টির সভাপতি হন। পরে মহাত্মাগান্ধী এবং দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে 'ফরওয়ার্ড ব্লক' দল গঠন করেন। ব্রিটিশ সরকার  সুভাষচন্দ্রকে গৃহবন্দি করলে ১৯৪১ সালের ১৭ই জানুয়ারির গভীর রাতে কলকাতার বাড়ী থেকে অন্তর্ধান হন। ভারতের উপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি গান্ধীর অহিংসার আন্দোলন থেকে ভিন্ন মতে বিশ্বসী ছিলেন। সুভাষচন্দ্র  গোপনে কলকাতা ত্যাগ করে জার্মানিতে গমন করেন। বার্লিনে তিনি জার্মানির সমর্থনে ভারতের অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠন করেন এবং বার্লিন বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে তাঁর ধ্যানধারণা প্রচার করতে থাকেন। জার্মানি থেকে তিনি জাপানের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করেন। এ সময়ই জার্মানির ভারতীয় সম্প্রদায় সুভাষচন্দ্রকে ‘নেতাজী’ উপাধি দেয়। এখানেই ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের জন্ম।

ক্যাপ্টেন-জেনারেল মোহন সিং ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু পরে তা ভেঙে যায়।  নেতাজী সুভাষচন্দ্র দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত ভারতীয়দের সহায়তায় পুনরায় আইএনএ গঠন করেন এবং গর্বের সাথে এর দায়িত্ব নেন।যদিও নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি, তাদের এ চেষ্টা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে পরবর্তীকালে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে এক বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

১৯৪৫ সালে ফরমোজার তাইহোকু  বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন বলে প্রচার করা হয়।







26 September 2021

২৬শে সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০১তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতা  সংস্কৃত কলেজে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন, যেখানে তিনি বিদ্যাসাগর ("শিক্ষার মহাসাগর") উপাধি পান এবং ১৮৫০ সালে সালে তিনি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিত (পণ্ডিত-শিক্ষক) নিযুক্ত হন।  এক বছর পরে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন, যেখানে তিনি ইংরেজি অধ্যয়নের প্রচার করেন এবং নিম্নবর্ণের ছাত্রদের ভর্তি করেন।

বিদ্যাসাগর ইংরেজি সাহিত্যে বেশ পাণ্ডিত্য ছিল এবং পাশ্চাত্য ধারনা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।  তিনি যদিও একজন গোঁড়া উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ছিলেন, তিনি সমাজ সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী অংশ নিয়েছিলেন, বিশেষত বিধবাদের পুনর্বিবাহকে বৈধ করার একটি সফল করা যাদের অনেকেরই শৈশবে প্রথম বিয়ে হয়েছিল।  তিনি বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের বিরোধিতা করেছিলেন এবং মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নে অনেক কিছু করেছিলেন, কিন্তু তার সংস্কারমূলক উদ্যোগের জন্য গোঁড়া তিনি অনেক হিন্দুদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন প্রফুল্ল এবং বলিষ্ঠ লেখক।  তাঁর রচনার মধ্যে রয়েছে বেতাল পঞ্চবিংশতী  “  শকুন্তলা"  যা সংস্কৃত কবি এবং নাট্যকার কালিদাসের একটি বিখ্যাত নাটক অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল;  এবং সিতার বনবাস 

20 September 2021

২০শে সেপ্টেম্বর, অ্যানি বেসান্তের ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকীয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


একজন বিদেশিনী হয়েও অ্যানির ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতি সম্প্রর্কে শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠার ঘটনা ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে তুললীয়।এনারা দুজনই হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।

অ্যানি যিনি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। অ্যানি বেসান্ত প্রথম ১৮৯৩ সালে ভারতে আসেন, এবং পরে এখানে স্থায়ী হন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে স্বাধীনতার জন্য দেশের সংগ্রামে জড়িত হন।

অ্যানি বেসান্ত ১৯১৬ সালে অল ইন্ডিয়া হোম রুল লীগ চালু করেছিলেন।অ্যানি বেসান্ট ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের১৯১৭ সালের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

"ব্রিটিশরা ভাল, যদিও প্রায়শই নিষ্ঠুর, উপনিবেশবাদী যেখানে তারা সম্পূর্ণ অসভ্য উপজাতিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে যাদের অতীত ভুলে যাওয়া যায় না।  কিন্তু তারা তাদের ভারী বুট দিয়ে পদদলিত করে ভারতের মতো একটি প্রাচীন, অত্যন্ত সভ্য এবং সংস্কৃতিশীল জাতির সংবেদনশীল, সূক্ষ্ম সংবেদনশীলতার উপর"।  ব্রিটিশ সমাজ সংস্কারক, সমাজসেবী এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সমর্থক অ্যানি বেসান্ট একসময় বলেছিলেন, মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রচার করে।  আজ তার ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।

অ্যানি উড ১৮৪৭সালের ১ অক্টোবর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। ২০ বছর বয়সে অ্যানি, যিনি আইরিশ বংশোদ্ভূত মহিলা ছিলেন, ফ্রাঙ্ক বেসান্ট নামে একজন পাদ্রীকে বিয়ে করেন এবং এই দম্পতি দুটি সন্তানের আশীর্বাদ লাভ করেন। যাইহোক, অ্যানির অপ্রচলিত ধর্মীয় মতামতের কারণে, এই দম্পতি ১৮৭৩ সালে আলাদা হয়ে যান। ১৮৭৪ থেকে ১৮৯৩ এর মধ্যে, অ্যানি মহিলাদের ভোটাধিকার, পরিবার পরিকল্পনা, ট্রেড ইউনিয়ন এবং আইরিশ হোম রুলের জন্য কাজ করেছিলেন।

অ্যানি ১৯৮৩ সালে প্রথমবার ভারত সফর করেন। পরে তিনি এখানে বসতি স্থাপন করেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে স্বাধীনতার জন্য দেশের সংগ্রামে জড়িত হন।  বাল গঙ্গাধর তিলকের সঙ্গে তিনি ১৯১৬সালে অল ইন্ডিয়া হোম রুল লীগ চালু করেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম বিশিষ্ট সদস্যও ছিলেন।  তিনি কংগ্রেসের ১৯১৭ সালের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯১৭  সালের জুন মাসে, ব্রিটিশ রাজ্য তাকে গ্রেফতার করার পরে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ তাকে মুক্তি না দিলে প্রতিবাদ করার হুমকি দেয়।জাতীয় কংগ্রেস অনেকদিন ভারত শাসন করেছে কিন্তু তাদের সংগঠনের একজন সভাপতির স্মৃতি রক্ষায় তেমন কিছু করেনি।

অ্যানির এক ধরণের সর্বজনীন সত্যের ক্ষুধা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে সন্তুষ্ট হয়নি বলে মনে হয়।  পরে তিনি ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্মীয় আন্দোলন থিওসফিতে আগ্রহ দেখান। পুনর্জন্ম এবং কর্মের হিন্দু ধারণাগুলি থিওসফিকাল আন্দোলনের ভিত্তি ছিল।  অ্যানি, একজন সদস্য এবং পরে থিওসফিক্যাল সোসাইটির সভাপতি হিসাবে, ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে থিওসফিক্যাল বিশ্বাস ছড়িয়ে দেন। কাশীতে তিনি থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্টা করেন।এবং সেখানে বিখ্যাত সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন।

অ্যানি নিজের রচিত গ্রন্থাবলির আয় জন হিতকর কাজে ব্যয় করতেন।নিজের রাজনৈতিক মত প্রকাশের উদ্দেশ্যে তিনি "কমন উইন" নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। অ্যানি তার অনন্য ব্যক্তিত্ব এবং সাংগঠনিক পদ্ধতির মাধ্যমে ১ম বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলিতে অ্যানি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে পরিবর্তন এনেছিলেন।অ্যানি পৃথিবী থেকে ১৯৩৩ সালে চিরতরে বিদায়  নেন।

15 September 2021

১৫ই সেপ্টেম্বর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৪৫ তম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে দাঁত ফোটানো সাধারণ মানুষের পক্ষে যখন কঠিন হয়ে উঠেছিল সেই সময় শরৎচন্দ্রের  আবির্ভাব। তাঁর সহজ সরল অনাড়ম্বর ভাষা সাধারণ মানুষকে আগ্রহী  করে তোলে। শরৎচন্দ্রের কলম অবহেলিত নারী চরিত্র নিয়ে বেশী চলেছে। এক সময় কেন এখনও শরৎচন্দ্র আদরের মানুষ। মা বোনেরা শরৎচন্দ্রেকে তাদের আপনার মানুষ বলেই ভাবেন। এখানের শরৎচন্দ্রের সাফল্য।

১৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৭৬ সালে হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কিশোর ও প্রথম জীবন কাটে ভাগলপুরে মাতুলালয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি দেবানন্দপুরের হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুল ও ভাগলপুরের দুর্গাচরণ স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তার পর জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করার পর ওই একই কলেজে এফএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্রের কারণে তাঁর শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

অধ্যয়নে বিরতি ঘটার পর শরৎচন্দ্র বনেলি স্টেটে সেটেলমেন্ট অফিসারের সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক এবং বার্মা রেলওয়ের হিসাব দফতরের কেরানি পদে চাকরি করেন। এক সময় তিনি সন্ন্যাসী দলে যোগ দেন এবং গান ও নাটকে অভিনয় করেন। শরৎচন্দ্র কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কয়েক বছর বাদে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং হাওড়া জেলা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

তাঁর প্রথম উপন্যাস 'বড়দিদি' ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যজগতে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এর পর তিনি একে একে 'বিন্দুর ছেলে ও অন্যান্য', 'পরিণীতা', 'বৈকুণ্ঠের উইল', 'পল্লীসমাজ', 'দেবদাস', 'চরিত্রহীন', 'নিষ্কৃতি', 'শ্রীকান্ত', 'দত্তা', 'গৃহদাহ', ‘দেনাপাওনা’, ‘পথের দাবী’, ‘শেষ প্রশ্ন’ ইত্যাদি গল্প উপন্যাস এবং ‘নারীর মূল্য’, ‘স্বদেশ ও সাহিত্য’ প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলির মধ্যে 'শ্রীকান্ত', 'চরিত্রহীন' 'গৃহদাহ', ‘দেনাপাওনা’, ‘পথের দাবী’ খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর 'পথের দাবী' উপন্যাসটি বিপ্লববাদীদের প্রতি সমর্থনের অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে।

শরৎচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের এক জন অমর কাব্যশিল্পী। তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয় পল্লীর জীবন ও সমাজ। ব্যক্তিমানুষের মন পল্লীর সংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার আঘাতে কতটা রক্তাক্ত হতে পারে তারই রূপচিত্র এঁকেছেন তিনি তাঁর রচনায়। তবে তাঁর উপন্যাসে ব্যক্তিবর্গের ইচ্ছাভিসার ও মুক্তি সর্বদাই সমাজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় বলে তাঁকে রক্ষণশীলও বলা হয়ে থাকে। তবে নারীর প্রতি সামাজিক নির্যাতন ও তার সংস্কারবন্দি জীবনের রূপায়ণে তিনি বিপ্লবী লেখক বিশেষত গ্রামের অবহেলিত ও বঞ্চিত নারীর প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধা তুলনাহীন। সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার ও শাস্ত্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। কাহিনী নির্মাণে অসামান্য কুশলতা এবং অতি প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষা তাঁর কাব্যসাহিত্যের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির প্রধান কারণ। বাংলাসহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অনেক উপন্যাসের চিত্রনাট্য নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে যা 'দেবদাস', 'শ্রীকান্ত', 'রামের সুমতি', ‘দেনাপাওনা’, ‘বিরাজবৌ’ ইত্যাদি।

সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র কুন্তলীন পুরস্কার, জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যপদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি লাভ করেন।১৯৩৮ সালের ১৫ই জানুয়ারি  তাঁর মৃত্যু হয়। কবিগুরু  রবীন্দ্রনাথও গল্প সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার করেছেন।

13 September 2021

১৩ই সেপ্টেম্বর  যতীন্দ্র নাথ দাস-বিপ্লবী যিনি কারাগারে রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের প্রতিবাদে আমরণ  অনশন  করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন।


 ৯৮ বছর আগে, রাজনৈতিক বন্দীদের অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ৬৩ দিনব্যাপী অনশন শেষে ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ সালে  বিপ্লবী যতীন্দ্র নাথ দাস শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।  সেই সময় মাত্র ২৫ বছর বয়সী, দাস লাহোড় কেন্দ্রীয় কারাগারে শহীদ ভগত সিং এবং অন্যান্য বন্দী বিপ্লবীদের সাথে এই অনশন করেছিলেন।

তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল কারণ তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল এবং জোর করে খাওয়ানোর প্রচেষ্টা তার ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এমনকি প্যারালাইসিস তার শরীরের কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে এবং তার যন্ত্রণা বেড়ে গেলেও তিনি অনশন চালিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেন।  প্রকৃতপক্ষে, তার অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে, একটি জেল কমিটি তার মুক্তির সুপারিশ করেছিল, কিন্তু সরকার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ এটি মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তার আশঙ্কা ছিল।

বিপ্লবী যতীন্দ্র নাথ দাসের মৃত্যুতে গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী এবং জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে কানপুরে এবং কমলা নেহরুর নেতৃত্বে এলাহাবাদে কিছু বড় সমাবেশ হয়েছিল।  কলকাতায়, সুভাষ চন্দ্র বসু যখন কফিন গ্রহণের জন্য হাওড়া রেল স্টেশনে এগিয়ে আসেন, তখন বিশাল মিছিলের শেষ পর্যন্ত দৃশ্যমান ছিল না।  কিছু অনুমান অনুসারে, শহরে সাত লাখেরও বেশি মানুষ শ্মশান মিছিলে ছিলেন।

রাজনৈতিক বন্দীদের অধিকারের জন্য দাসের অনশন এবং মৃত্যু মানুষের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।  

যতীন্দ্র নাথ দাস একজন যুবক হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল বিপ্লবী।  তিনি প্রথমে অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন, তারপর হিন্দুস্তান রিপাবলিকান সোশ্যালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে ভগৎ সিং এবং তার সহকর্মীদের সাথে যোগ দেন এবং ১৭ বছর বয়সেও তিনি মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন অসহযোগ আন্দোলনের একজন উৎসাহী অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

এই সবের মাঝখানে, তিনি তার পড়াশোনায় ভাল ছিলেন কিন্তু পুলিশ তাকে ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠালে পড়াশুনায় ছেদ পরে। সেখানে, তিনি অবিলম্বে রাজনৈতিক বন্দীদের অবস্থার উন্নতির জন্য একটি অনশন শুরু করেন।  তরুণ বিপ্লবীর এমন প্রভাব ছিল যে জেল সুপার দুঃখ প্রকাশ করে এবং কিছু সংশোধন করতে সম্মত হন।

সুতরাং এই যুবক, যিনি মাত্র ২৫ বছর বেঁচে ছিলেন, রাজনৈতিক বন্দীদের অধিকারের প্রতি ব্যাপকভাবে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দুইবার সফল হন এবং তাও এমনভাবে যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে এই সমস্যাটির প্রতি সাড়া দেয়।

সর্বোপরি, পৃথিবীতে খুব কম লোকই আছেন যারা এত অল্প বয়সে রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য এত কাজ করতে পেরেছেন।  

08 September 2021

আপনার এসবিআই, এইচডিএফসি ও অন্যান্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নিষ্ক্রিয় হতে পারে।


আপনার এসবিআই, এইচডিএফসি ও অন্যান্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নিষ্ক্রিয় হতে পারে। জেনে নিন কেন আপনার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হতে পারে।

এসবিআই তার গ্রাহকদের তাদের স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর (প্যান) কে তাদের আধার কার্ডের সাথে লিঙ্ক করার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে কারণ এটি করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকিং সুবিধা স্থগিত হয়ে যাবে।  

ব্যাংকগুলি তাদের গ্রাহকদের তাদের প্যানকে আধারের সঙ্গে লিঙ্ক করার পরামর্শ দিচ্ছে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় এবং নির্বিঘ্নে ব্যাংকিং পরিষেবা উপভোগ করা  যায়।  যদি লিঙ্ক করা না থাকে, তাহলে PAN  নিষ্ক্রিয় হবে এবং নির্দিষ্ট লেনদেন পরিচালনার জন্য উদ্ধৃত করা যাবে না,

প্যান-আধার লিঙ্ক করার শেষ তারিখ ৩০শে সেপ্টেম্বর  ২০২১ 


এবং যে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যেখানে প্যান-আধার  লিঙ্ক করা নেই সেটা নিষ্ক্রিয় ঘোষণা করা হবে। 

এখানে জেনে নিন কিভাবে আপনার অ্যাকাউন্টে প্যান-আধার লিঙ্ক করবেন।

এখানে একটি সহজ ধাপে ধাপে নির্দেশিকা রয়েছে:

১)আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টাল 2.0 খুলুন।

২)'লিঙ্ক আধার' বিকল্পটি খুঁজে পেতে হোমপেজে নিচে স্ক্রোল করুন, এটিতে ক্লিক করুন।

৩)প্যান নম্বর, আধার নম্বর, আধার অনুযায়ী নাম এবং মোবাইল নম্বর অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করুন । 

৪)"আমি আমার আধার বিশদ যাচাই করতে রাজি" লেখা বাক্সে টিক দিন

৫)নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে প্রাপ্ত ছয় সংখ্যার ওটিপি লিখুন। 

৬)'ভ্যালিডেট' টিপুন

৭)একটি পপ-আপ বার্তা স্ক্রিনে দেখাবে যে, আধারের অনুরোধের সঙ্গে আপনার লিঙ্ক প্যান জমা দেওয়া হয়েছে। 

এখানে জেনে রাখা দরকার প্যান-আধার লিঙ্ক ক রার জন্য আপনার আধার কার্ড এবং প্যানের উপর আপনার নাম, জন্ম তারিখ এবং লিঙ্গ যাচাইয়ের উপর নির্ভর করবে।  উভয় আইডি প্রমাণের বিবরণ অভিন্ন হতে হবে।




05 September 2021

টোকিও ২০২০ প্যারা অলিম্পিকে ৫টি সোনা সহ রেকর্ড ১৯টি পদক নিয়ে ভারত ২৪তম স্থানে রয়েছে।

 ভারত গেমসে ৯ টি ক্রীড়া শাখায় ৫৪ টি প্যারা-ক্রীড়াবিদদের সবচেয়ে বড় দল পাঠায়। ব্যাডমিন্টন এবং তায়কোয়ান্দো টোকিওতে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে, উভয় খেলায় ভারত প্রতিনিধিত্ব করেছিল।


মোট ১৬২ টি দেশের মধ্যে, ভারত সামগ্রিক পদক তালিকায় ২৪ তম স্থান অর্জন করেছে। 

টোকিও প্যারা অলিম্পিকে ভারতীয় দল থেকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্তরা হলেন:

মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল স্টান্ডিং এ -অবনী লেখারা,

পুরুষদের সিঙ্গেল এসএল  ব্যাডমিন্টনে প্রমোদ ভগত, 

পুরুষ একক এসএইচ  ব্যাডমিন্টনে কৃষ্ণ নগর,

পুরুষদের জ্যাভেলিন থ্রো এফ ৬৪ এ- সুমিত আন্টিল

এবং মণীশ নারওয়াল মিশ্র ৫০ মি পিস্তলে।  


রৌপ্য পদকপ্রাপ্তরা হলেন: 

মহিলা একক শ্রেণী ৪ টেবিল টেনিসে ভাবিনাবেন প্যাটেল, 

মিশ্র ৫০ মি পিস্তল তে সিংরাজ আধনা, 

পুরুষদের ডিস্ কাস F56 তে যোগেশ কাঠুনিয়া, পুরুষদের হাই জাম্প T47 এ নিষাদ কুমার, পুরুষদের হাই জাম্প T63 এ মারিয়াপ্পান থাঙ্গভেলু, 

পুরুষদের হাই জাম্প T64 এ প্রবীণ কুমার,

পুরুষদের জ্যাভেলিন F46 তে দেবেন্দ্র ঝাজরিয়া, এবং পুরুষদের একক ব্যাডমিন্টন SL4 তে সুহাস ইয়াতিরাজ। 

ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্তরা হলেন: 

মহিলাদের ৫০ মিটার রাইফেল ৩নং পজিশনে এসএইচ ১ -এ অবনী লেখারা,

পুরুষদের ব্যক্তিগত রিকার্ভ আর্চারিতে হরবিন্দর সিং, 

পুরুষদের হাই জাম্প টি ৬৩ -এ শরদ কুমার,

পুরুষদের জ্যাভেলিন থ্রো এফ ৪৬ -এ সুন্দর সিংহ গুর্জার, 

পুরুষ একক ব্যাডমিন্টন এসএল ৩ -এ মনোজ সরকার এবং 

সিংরাজ আধানা পুরুষদের ২০ মিটার এয়ার পিস্তলে । 




01 September 2021

২রা সেপ্টেম্বর, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ৭৫তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

প্রমথ চৌধুরী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে যে অবদান রেখে গেছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। তিনি রবীন্দ্র যুগে আবির্ভূত হলেও তাঁর সাহিত্য আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। 

পাবনার বিখ্যাত চৌধুরী বংশের সন্তান প্রমথ চৌধুরী কেবল কুলে-মানেই অভিজাত ছিলেন না, মনের দিক থেকেও ছিলেন উদার। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, প্রমথ চৌধুরীর লেখা ‘প্যারাডক্সে আক্রান্ত’; অর্থাৎ যে উক্তি আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও সত্যবর্জিত নয়। কিন্তু সত্য হলো—তাঁর লেখার ধরন খুবই বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুক্তিনিষ্ঠ। পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা এবং বয়োকনিষ্ঠ্য হয়েও গদ্য রচনারীতিতে রবী ঠাকুরকে প্রভাবিত করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী, যা কবিগুরু নিজেই স্বীকার করেছিলেন। তিনি খুব উদার মানসিকতা থেকে বলেছিলেন, তাঁর গল্প ও সনেট বাংলা সাহিত্যে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ ও ভাষাভঙ্গি আর ভাবনার ধারা পরবর্তী একটি গোষ্ঠীর ওপর বিশেষ ক্রিয়াশীল হয়েছে। বাংলায় কথ্যরীতি তাঁরই হাতে সাহিত্যিক স্বীকৃতি লাভ করে। রবীন্দ্রনাথের জোর সমর্থন ও ব্যক্তিগত চেষ্টায় সে রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বস্তুত, প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই এ দুজনের প্রচেষ্টাতে এই কথ্যরীতির পূর্ণতম প্রতিষ্ঠা ঘটে।

তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল বীরবল।

তাঁর রচনাসমগ্রগুলি হল

তাঁর প্রথম প্রবন্ধ জয়দেব (প্রকাশিত হয় সাধনা পত্রিকায় ১৮৯৩ সালে)

তেল-নুন-লকড়ী (১৯০৬)

বীরবলের হালখাতা (১৯১৬)

নানাকথা (১৯১৯)

আমাদের শিক্ষা (১৯২০)

রায়তের কথা (১৯১৯) ইত্যাদি 

গল্পগ্রন্থসম্পাদনা

চার-ইয়ারী কথা (১৯১৬)

এই গল্পগ্রন্থে চার বন্ধুর প্রেমের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রেমই অভিশপ্ত। নায়িকা চারজন ইউরোপীয়। প্রথম নায়িকা উন্মাদ, দ্বিতীয় জন চোর, তৃতীয় জন প্রতারক এবং চতুর্থ জন নায়িকা। মৃত্যুর পরে তার ভালোবাসা ব্যক্ত করেছে। ভাষার চাতুর্য, পরিহাসপ্রিয়তা এবং সুক্ষ্ণ ব্যঙ্গ উদ্ভাসিত এই কাহিনি বাংলা ভাবালু প্রেম কাহিনির প্রতিবাদী।

আহুতি (১৯১৯)

নীললোহিত (১৯৪১) ইত্যাদি 

"অনুকথা সপ্তক"

"ঘোষালে ত্রিকথা"

বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত দিকপাল ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষার প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

30 August 2021

টোকিও প্যারা অলিম্পিক্সে প্রথম সোনা জয় ভারতের।

এ বারের টোকিও প্যারা অলিম্পিক্সে প্রথম সোনা জয় ভারতের। প্যারা অলিম্পিক্স কর্তৃপক্ষ টুইট করে লেখেন, 'সোনার দিন। শুটিংয়ে ভারতের প্রথম পদক এবং সেটা সোনা। অবনী বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করেন। অলিম্পিক্স এবং প্যারালিম্পিক্স মিলিয়ে অবনী প্রথম মহিলা যে সোনা জিতেছে।'
১০ মিটার এয়ার রাইফেল শুটিংয়ে সোনা জিতলেন অবনী লেখারা।  প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে প্যারালিম্পিক্সে সোনা জিতলেন তিনি।২০১২ সালে ১৯ বছর বয়সী অবনী  একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পান। এটা টোকিয়ো প্যারা অলিম্পিক্সে ভারতের চতুর্থ পদক জয়।

24 August 2021

২৫ অগস্ট কবি অতুলপ্রসাদ সেনের ৮৭ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

কবি অতুল প্রসাদ সেন
১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায়  অতুলপ্রসাদের জন্ম। তাঁদের আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরের দক্ষিণ বিক্রমপুরের মগর গ্রামে। বাল্যকালে পিতৃহীন হয়ে অতুলপ্রসাদ ভগবদ্ভক্ত, সুকণ্ঠ গায়ক ও ভক্তিগীতিরচয়িতা মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের আশ্রয়ে প্রতিপালিত হন। পরবর্তীকালে মাতামহের এসব গুণ তাঁর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়।

অতুলপ্রসাদ ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাসের পর কিছুদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং পরে লক্ষ্ণৌতে স্থায়িভাবে বসবাস করেন। সেখানে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং আউধ বার অ্যাসোসিয়েশন ও আউধ বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হন। লক্ষ্ণৌ নগরীর সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েন।অতুলপ্রসাদ প্রবাসী (বর্তমানেনিখিল-ভারত) বঙ্গ-সাহিত্য সম্মিলন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি উক্ত সম্মিলনের মুখপত্র উত্তরার একজন সম্পাদক এবং সম্মিলনের কানপুর ও গোরখপুর অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, পরে লিবারেলপন্থী হন। 
 সৎপিতার সহায়তায় বিলেতে যান এবং বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। বিলেত থেকে ফিরে আপন মামাতো বোন হেমকুসুমের প্রেমে পড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বহু সমালোচনার সন্মুখিন হন এবং এই বিবাহ সম্পর্ক সুখের ছিল না। পরে লক্ষ্ণৌতে স্থায়িভাবে বসবাস করেন। সেখানে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং আউধ বার অ্যাসোসিয়েশন ও আউধ বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হন। লক্ষ্ণৌ নগরীর সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েন।
ছোটবেলায়  ঢাকা ও ফরিদপুরে বাউল, কীর্তন ও মাঝি-মাল্লাদের  ভাটিয়ালি গানের মূর্ছনা অতুলপ্রসাদের হূদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করেছিল। সে সুরের অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত তাঁর বাউল ও কীর্তন ঢঙের গানগুলিতে বাংলার প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়। অতুলপ্রসাদ প্রেম, ভক্তি, ভাষাপ্রীতি, দেশপ্রেম প্রভৃতি বিষয়ভিত্তিক বহু গান রচনা করেছেন। ১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবকদের অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে দেশাত্মবোধক গানটি রচনা করেন, তাতে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের সুর আছে: ‘দেখ মা এবার দুয়ার খুলে/ গলে গলে এল মা/ তোর হিন্দু-মুসলমান দু ছেলে’। ‘মোদের গরব, মোদের আশা/ আমরি বাংলা ভাষা’ গানটিতে অতুলপ্রসাদের মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। এ গান বাংলাদেশের  ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের মধ্যে অফুরন্ত প্রেরণা জুগিয়েছে। গানটির আবেদন আজও অম্লান। এভাবে বাণীপ্রধান গীতি রচনা, সুললিত সুর সংযোজন, সুরারোপে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রচলন ও করুণা রসসঞ্চারের মাধ্যমে অতুলপ্রসাদ বাংলা সঙ্গীতভান্ডারকে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট লক্ষ্ণৌতে তাঁর মৃত্য হয়।

18 August 2021

২৬শে আগষ্ট ২০২১ সালে করুণাময়ী জননী মাদার টেরেসার ১১১তম জন্ম বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 


শৈশব হতেই বিশ্বের দুঃখী, আর্ত, অসহায় মানুষের কান্না তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠত।গৃহের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য পরিহার করে আর্তের সেবা করাই তিনি জীবনের মন্ত্ররূপে গ্রহন করেন। সুযোগও তাঁর এসে যায়। ১৯২৮ সালে ১৮ বছরের অ্যাগনেসকে যুগোশ্লোভিয়ার জেনুইট সঃস্থা আয়ারল্যান্ডের লরেটো সংঘে পাঠায়। স্কেপেজের পাবলিক স্কুলে পড়বার সময়েই সোডালিটি সংঘের মিশনারীদের কাজকর্মের প্রতি অ্যাগনেসের উৎসাহ ছিল। ক্লাসে যুগোশ্লোভিয়ার জেসুইটদের চিঠি  পড়ে শোনানো হত। সেখানে কলকাতার কথাও থাকত। সে সব শুনে কলকাতার প্রতি এক বিশেষ টান তৈরী হয়েছিল অ্যাগনেসের মনে।

খ ব র নিয়ে জানলেন আয়ারল্যান্ডের লরেটো সংঘ ভারতে কাজ করছে। তাদের প্রধান কার্যালয় ছিল ডাবলিনে। অ্যাগনেস তাদের সাথে যোগাযোগ  করে মায়ের অনুমতি নিয়ে যোগ দিলেন লরেটো সংঘে।আয়ারল্যান্ডের বাথার্নহামে গেলেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে।

১৯২৮ সালে অ্যাগনেস জাহাজে ভেসে চলে এলেন কলকাতায়। যোগ দিলেন আইরিস সন্নাসিনীদের প্রতিষ্ঠান সিস্টারস অব লরেটোতে। সেই থেকেই তিনি মনে প্রাণে বাংলার  মানুষ  হয়ে গেলেন। দু বছর দার্জিলিং এ থেকে সন্নাসিনী ব্রত নিয়ে সিস্টার অ্যাগনেস কলকাতায় আসেন। কলকাতার এন্টালির সেন্ট মেরিজ স্কুলে বাংলা বিভাগের শিক্ষয়িত্রী হিসাবে যোগ দেন। ভুগোল ও ইতিহাস ছিল তাঁর পড়াবার বিষয়। প্রায় কুড়ি বছর তিনি ঐ স্কুলের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। স্কুলে থাকাকালীন পাশে মতিঝিল  বস্তির বাসিন্দাদের দুঃখ- কষ্ট, দারিদ্র, শিশুদের কষ্ট তাঁকে গভীর  ভাবে পীড়া দেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মানুষ সৃষ্ট  দুর্ভিক্ষ কলকাতার  অবস্থা খুবই দুর্বিসহ  হয়ে ওঠে।একটু ভাতের আশায়, এক বাটি ফ্যানের আশায় দলে দলে গ্রামের মানুষ  ভিড় করে কলকাতায়। মানুষ কুখাদ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে। তিনি বুঝেছিলেন চার দেওয়ালের গন্ডীর মধ্যে থেকে দরিদ্রের, আর্তের সেবা হয় না। এর বাইরে তাঁকে বের হতে হবে। ওই বস্তিতে গিয়ে তিনি আর্ত মানুষের সেবা শুরু করেন। ১৯৩১সালে তিনি সন্নাসব্রত গ্রহন করেন। তখন তাঁর নাম করণ হয় মাদার টেরেসা নামে। মাদার লরেটোর সন্নাসিনীদের  বেশ ত্যাগ করে পরলেন মোটা নীল পাড় শাড়ী। সেদিন তাঁর সম্বল বলতে ছিল ৫ টাকা, একটি বাইবেল, ক্রুস সম্বলিত জপের মালা। আর সাথে ছিল ঈশ্বরের নির্ভরতা, মনোবল  আর বিশ্বাস।

একান্ত নিঃস্ব অবস্থায় ১৯৫০ সালে তাঁর সেবার জন্য  কলকাতায় স্থাপিত করেন 'মিশনারি অব চ্যারিটি'। ওই বছরেই তিনি কালিঘাটে নির্মল হৃদয় আশ্রম প্রতিষ্টা করেন।

নির্মল হৃদয় আশ্রম

তাঁরই প্রচেষ্টায় হাওরায় স্থাপন করলেন  কুষ্টরোগীদের আশ্রম। এর পরেও তিনি  বিভিন্ন জায়গায় বহু স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, উদ্ধারাশ্রম প্রতিষ্টা করেন। ১৯৭৮ সালে রোমের  কর্তৃপক্ষর অনুমতি নিয়ে আশ্রমের বাইরে থেকেও আর্ত মানুষের সেবায় লেগে পরলেন। সারা বিশ্বে তাঁর কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৫-৬৯ সালের মধ্যে ভেনেজুয়েলা, কলম্বো, তানজানিয়া, রোম, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডন, নিউ ইয়র্ক প্রভৃতি জায়গায় গড়ে ওঠে 'মিশনারি অব চ্যারিটি'।চিরন্তনী জননীর রূপ প্রত্যক্ষ করে সারা বিশ্বের মানুষ  ধন্য হয়। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে করুণাময়ী  জননী মাদার টেরেসার নাম।ভারতের বাইরে তাঁর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

তাঁর মহৎ কীর্তির বিভিন্ন স্বীকৃতিএল দেশ দেশান্তর  হতে। ১৯৯৭ সালে ৫ই সেপ্টেম্বর  এই বিশ্ব জননী চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হলেও আমাদের কাছে তিনি অমর হয়েই থাকবেন।

২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে 'সন্ত' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি ভারতের  'কলকাতার সন্ত টেরিজা' হিসেবে আখ্যায়িত হন।

16 August 2021

১৬ই আগষ্ট ২০২১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের ১৩৫ তম প্রয়াণ দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রামকৃষ্ণ পরমহংস

ভক্তিমতী রাণী রাসমণিও নেই, অনুগত সেবক মথুর বাবুও নেই। এখনকার কর্তাদের জমিদারি  মেজাজ,  দক্ষিণেশ্বর মন্দির নিয়ে তারা বিশেষ  মাথা ঘামান না। রামকৃষ্ণ অসুস্থ  হয়ে পড়লেও খোঁজখবর নিলেন না কর্তারা। দিন দিন ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সারাদিন ধরে মানুষ আসে,তারা দর্শন চায়, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। কথা বলতে বলতে গান আসে, এক সময় ভাবাবেশে মূর্ছা যান। ইদানীং রামকৃষ্ণ পরমহংসের শরীর কৃশ হয়ে আসছে, মাঝেমধ্যে কাশির দমক আসে, তখন খুবই দুর্বলতা ও যন্ত্রণা বোধ করেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের অবস্থাপন্ন ভক্তরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ডাক্তারদের ওষুধে কাজ হয় না। ব্যাথা ক্রমশই বাড়ছে। একদিন পরমহংসকে গাড়িতে করে তালতলায় এনে বিখ্যাত  ডাক্তার দূর্গাচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায়কে দেখানো হয়। এই দুর্বল শরীরে তাঁকে বারবার  কলকাতায় আনা যায় না, আর ব্যস্ত ডাক্তারও দক্ষিণেশ্বরে যেতে চাইবেন  না।দক্ষিণেশ্বরের ঘরটিও স্বাস্থ্যকর  নয়।স্যাঁতসেঁতে। অবিরাম গঙ্গার জলো হাওয়া আসে।প্রাতঃকৃত্য সারবার জন্য তাঁকে অনেকটা দূরে যেতে হয়, তাতে তাঁর এখন কষ্ট হয়।

রামকৃষ্ণের উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য ভক্তরা তাঁকে কলকাতায় এনে রাখবেন ঠিক করলেন। বাগবাজারে গঙ্গার ধারে বাড়ি ভাড়া নেওয়া  হল। এক সকালবেলায় দক্ষিণেশ্বর ছেড়ে বাগবাজারের ভাড়া বাড়িতে গেলেন। গঙ্গার ধারেই বেশ নিরিবিলি পরিবেশে বাড়ি রামকৃষ্ণের বাড়ি পছন্দ হল না।  পরিশেষে রামকান্ত বসু স্ট্রিটে রামকৃষ্ণের সংসারী ভক্তদের অগ্রগণ্য  বলরাম বসুর বাড়ি রামকৃষ্ণের থাকার ব্যবস্থা হল। এলোপ্যাথিক ওষুধ তাঁর সহ্য হয় না, তাই নাম করা হোমিওপ্যাথ প্রতাপচন্দ্র মজুমদারকে ডাকা হয়েছে। তাঁর ওষুধে সাময়িক ভাবে ব্যাথার নিবৃতি হয় কিন্তু মূল রোগ বেড়েই চলেছে। এখন কাশির সাথে রক্ত পড়ে, শক্ত কিছুই খেতে পারেন না রামকৃষ্ণ। নানান চিকিৎসকেরঅভিমত  শুনে বোঝা যাচ্ছে সহজ রোগ এটা না।প্রখ্যাত কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সহ একদল কবিরাজ    রামকৃষ্ণকে দেখলেন। রোগের উপসর্গ শুনে ও রামকৃষ্ণের গলা পরীক্ষা করে গঙ্গাপ্রসাদ ভক্তদের  বললেন এ রোগের নাম রোহিণী,  ইংরেজ ডাক্তাররা যাকে বলে ক্যান্সার যার চিকিৎসা তাদের সাধ্যের অতীত। এই শ্যাম পুকুরের বাড়িতেই রামকৃষ্ণের শিষ্য মন্ডলি আস্তে আস্তে জমা হতে থাকল। অনেক ডাক্তারই তো দেখানো হচ্ছে, একবার মহেন্দ্রলাল সরকারকে ডাকার কথা ওঠে।  ধন্বন্তরি বলে তাঁর নাম রটেছে। প্রতাপ মজুমদারেরও সেই মত। সেই মত মহেন্দ্রলাল সরকারকে ডাকা হল। শ্রী  রামকৃষ্ণের শারীরিক  অবস্থার অবনতি হচ্ছে দিন দিন। একনাগারে কাশি ও রক্তপাত। কোন খাবারই গলা দিয়ে নামতে চায় না।
ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার পরামর্শ  দিলেন যে কলকাতার  দূষিত  আবহাওয়ায় রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। রামকৃষ্ণ চিরদিন খোলা মেলা জায়গায় থেকেছেন। সেই জন্য রামকৃষ্ণকে স্বাস্থ্যকর খোলা মেলা জায়গায় রাখা দরকার।রামকৃষ্ণের দক্ষিণেশ্বরের সে ঘরটির প্রতি এখন আর কোনো  টান নেই। ভক্তরা ঠিক করল  কলকাতার বাইরে কোথাও একটা বাড়ি ভাড়া নিতে হবে।অনেক  অনুসন্ধানের পর  কাছাকাছির মধ্যে  বাগবাজারের খাল পেরিয়ে বরানগরের পথে কাশীপুরে একটি উদ্যান বাটি মাসিক আশি টাকায় ভাড়া পাওয়া গেল । এগারো বিঘার বেশী জমির মাঝখানে দোতলা বাড়ি, চারিদিক পাঁচিল  দিয়ে ঘেরা, ভেতরে দুটি পুকুর  ও নানারকম  ফুল ফলের বাগান। কাশীপুরের বাড়িতে যেতে রামকৃষ্ণ সন্মত হয়েছেন। অঘ্রান মাসের শুক্লাপঞ্চমীর দিনে দুটো ঘোড়ার গাড়িতে কাশীপুরের দিকে যাত্রা শুরু হল। একটা গাড়িতে রামকৃষ্ণ  ও সারদামণি আর নরেন। অন্য গাড়িতে  কয়েক জন ভক্ত।বাড়িটির দোতালার ঘরে রামকৃষ্ণর  থাকার ব্যবস্থা  করা হয়। নিচের বড় হল ঘরটা বসার জায়গা।  তার পাশের ঘরে থাকবে ভক্তরা। উত্তর দিকে কোনের ঘরটাতে থাকবেন সারদামণি। 
ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার জানতেন যে রামকৃষ্ণের ভক্তরা তাঁর ওষুধের ওপরে পুরোটা  ভরসা না করে এলোপ্যাথিক. বায়োকেমিক,  কবিরাজি  ইত্যাদি কোনো কিছুই বাকি রাখেনি।  সারদামণি তারকেশ্বরে হত্যে দিয়েও এসেছেন। মহেন্দ্রলাল আপত্তি করেননি। এ রকম হলে সাধারণত  বড় ডাক্তাররা রুগির দায়িত্ব নিতে চান না। কিন্তু মহেন্দ্রলালের অহংবোধ বাধার সৃষ্টি করেননি।

না ডাক পেলেও মহেন্দ্রলাল নিজে থেকেই কাশীপুরে  চলে যেতেন।অবশেষে সমস্ত চেষ্টা  ব্যর্থ করে ১৮৮৬ সালের ১৬ই অগষ্ট বেলা সাড়ে এগারোটায় তাঁর প্রাণবায়ু বহির্গত হয়। বিকালে কাশীপুরের শ্মশানে তাঁর শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়।

11 August 2021

১১ই আগষ্ট ক্ষুদিরাম বসুর ১১৩ তম প্রয়াণ দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

ক্ষুদিরাম বসু






শহিদ ক্ষুদিরামের মৃত্যুর পর বাংলায় যে গান 'এক বার বিদায় দে মা ঘুরে আসি' রচিত হয়ে ছিল সেই গান আজও পুরানো হয়নি। বাংলার পথে প্রান্তরে ওই গানের সুর আজও আমাদের বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।  ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সদ্য তরুণ ক্ষুদিরাম বসু। ১৯০৮ সালের ১১ই আগষ্ট মজফ্ফরপুরে সকালে ক্ষুদিরামের  ফাঁসি হয়।

বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বিতীয়  শহিদ হলেন ক্ষুদিরাম বসু। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে দেশকে মুক্ত করার  জন্য যত আন্দোলন  হয়েছে তাতে মেদিনীপুরের নাম পুরোভাগে। এই মেদিনীপুর জেলার হবিবপুরে তাঁর ১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর  জন্ম হয়।

ক্ষুদিরামের পূর্বে তাঁর দুটি ভাই মারা যায়। তাই সেকালের প্রথা অনুসারে তাঁর জ্যেষ্ঠা  ভগিনী অপরূপা দেবীর কাছে মুষ্ঠি ক্ষুদের বিনিময়ে  ক্ষুদিরাম কে বিক্রয় করা হয়। এই জন্যই তাঁর নাম হয় ক্ষুদিরাম।

শৈশবে ক্ষুদিরাম ছিলেন অত্যন্ত দুরন্ত। পড়াশুনার থেকে খেলাধুলোয় অগ্রহ বেশি ছিল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে যখন  অষ্টম শ্রেণিতে উঠেন তখন  বৈপ্লবিক অন্দোলনে সারা বাংলা  চঞ্চল হয়ে ওঠে।  মেদিনীপুরও জেগে ওঠে। ক্ষুদিরাম বিদ্যালয়ছেড়ে মত্ত হলেন সেই আন্দোলনে।

সে সময় মেদিনীপুরের গুপ্ত সমিতির নায়ক ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। স্বদেশি অন্দোলন উপলক্ষে ১৯০৫ সালে মেদিনীপুরে সর্বপ্রথম ১০ হাজার লোকের যে মিছিল হয় তার অগ্রভাগে ছিলেন ক্ষুদিরাম। এসময় সমস্ত সভা সমিতিতে ক্ষুদিরাম যোগ দিতেন। ১৯০৬ সালে মেদিনীপুরের কৃষিপ্রদর্শনীতে সত্যেন্দ্রনাথ রচিত 'সোনার বাংলা' নামক প্রচার পত্র বিলি করে ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। সত্যেন্দ্রনাথ অবশ্য মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ক্ষুদিরাকে মুক্ত করেন।১৯০৮ সালে এপ্রিল  মাসে কলকাতার বৈপ্লবীচক্রে মজফ্ফরপুরে কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা গৃহিত হয়। বিভিন্ন  হত্যাকার্যে অংশগ্রহনকারী প্রফুল্ল চাকীর সহযোগী হিসেবে মেদিনীপুর গুপ্ত সমিতি ক্ষুদিরামকে নির্বাচিত করে।

৩০ শে এপ্রিল  তাঁরা কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা ছুড়লে মি.কেনেডি ও তার পত্নী নিহত হন। ওই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিল না।

ঘটনার পর দুজন পরস্পরের বিপরীত দিকে যাত্রা করেন। ১লা মে ক্ষুদিরাম  উইনী ষ্টেশনের কাছে পুলিশের হাতে ধরা পরেন।বিচারে ক্ষুদিরামের প্রাণদন্ডের আদেশ হয়।

হাইকোর্টে আপিল করা হলেও মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল থাকে। ওই বছর ১১ই অগষ্ট মজফ্ফরপুরে সকাল ছয়টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। প্রফুল্ল চিত্তে ও দৃঢ় পদক্ষেপে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হন ক্ষুদিরাম। মাত্র ১৯ বছরের কিশোর ছিলেন এরূপ কঠিন ধাতুতে গড়া।

04 August 2021

ঋষি অরবিন্দের ১৪৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ঋষি অরবিন্দ

ঋষি অরবিন্দের ১৪৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি 

অরবিন্দ ঘোষ ১৮৭২ সালের ১৫ই আগষ্ট কলকাতার থিয়েটার রোডের এক  সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কৃষ্ণধন ছিলেন বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বিলেত ফেরত চিকিৎসক। মাতা স্বর্ণলতা ছিলেন কলকাতার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব রাজনারায়ণ বসুর জ্যেষ্ঠা কন্যা। অরবিন্দের  পিতা পাশ্চাত্য শিক্ষা- দীক্ষা রীতি- নীতির অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন।  অরবিন্দের বয়স যখন ৫ বছর তখন অরবিন্দ দার্জিলিংয়ে সাহেবদের লরেটো কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হন।অত্যন্ত শান্ত, মিতভাষী স্বভাবের ছিলেন বলেই অরবিন্দ শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। তাঁর ইংরাজি উচ্চারণ খুব শুদ্ধ ছিল। মাত্র দশ বছর বয়সেই ইংরাজি ও ল্যাটিন  ভাষায় সুন্দর  কবিতা লিখতে পারতেন।

অরবিন্দের বয়স যখন সাত বছর তখন তিনি ও তাঁর ভাই ইংল্যান্ডে পড়তে যান। অরবিন্দ প্রথমে ম্যাঞ্চেস্টারের এক স্কুলে  ভর্তি হন। কেম্ব্রিজ বিশ্যবিদ্যালয় থেকে ট্রাইপেজ নিয়ে বি,এ পাশ করেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেন। সে সময়  বরোদার মহারাজা ছিলেন লন্ডনে। তিনি অরবিন্দকে তাঁর রাজ্যের শিক্ষা বিভাগে ভালো বেতনে কাজ করার জন্য আহ্বান  জানান। 

বরোদায় চলে আসেন অরবিন্দ।  এই সময় তিনি সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শিক্ষা শুরু করেন। লেখক দীনেন্দ্রকুমার রায়ের কাছে তিনি বাংলা ভাষা শেখেন।

বরোদায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদে অধ্যাপকের চাকরি নেন। স্বাধীনতার বাণী ছড়িয়ে দেবার জন্য এই সময় তিনি বন্দেমাতরম নামে একটি ইংরাজি পত্রিকা বের করেন। ইংরেজ সরকার এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এর সঙ্গে চলে আলিপুর  বোমা মামলা, কিন্তু দুই ক্ষেত্রেইও অরবিন্দ মুক্তি পান। এর কিছুদিন  পরে অরবিন্দ জানতে পারেন যে ইংরেজ সরকার তাঁকে বরাবরের জন্য বন্দী  রাখার ব্যবস্থা  করছে। তখন ১৯১০ সালে তিনি চন্দননগর পরে ফরাসী উপনিবেশ পন্ডিচেরিতে যান এবং নতুন  জীবন  শুরু করেন। তিনি যোগ সাধনার মাধ্যমে মুক্তির পথের নিশানা তুলে ধরেন।

ভারতের সাধনা ও রাজনীতিতে বিশ্বাসী  হয়ে অনেক বিদেশী  মহিলা ভারতে এসে মিলে গেছেন। ভগিনী নিবেদিতা,  মীরা রিচার্ড, অ্যানি  বেশান্ত, মাদার টেরেসা প্রভৃতি কয়েকজনের নাম উল্লেখ  করলেই একথার সত্যতা প্রমাণিত  হয়।

১৯১৪ সালে মীরা রিচার্ড নামে এক বিপ্লবী ফরাসী মহিলা অরবিন্দের  আশ্রমে আসেন এবং তাঁর কাছে দীক্ষা নেন। তখন মীরা রিচার্ডের নাম হয় শ্রীমা।

পন্ডিচেরিতে থাকাকালীন  তিনি যে সব অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন তাঁর মধ্যে The Mother, এবং The life Divine অন্যতম।

অহ্নিযুগের মহানায়ক শ্রী অরবিন্দ  ঘোষ পরবর্তী জীবনে আধ্যাত্মিক সাধনায় সিদ্ধি করে হয়ে ছিলেন ঋষি অরবিন্দ। ১৯৫০ সালের ৫ই ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।

29 July 2021

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩০ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩০ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিদ্যাসাগরের কর্মজীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন, দ্বিতীয়ত শিক্ষাসংস্কার ও শিক্ষাপ্রসারে ভৃমিকা,তৃতীয়ত ভাষা ও সাহিত্যে ঐতিহাসিক ভূমিকা। কঠোরতা ও কোমলতার অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যাসাগরের চরিত্র আমাদের একদিকে যেমন অভিভূত করে অপরদিকে যোগ্যতার সহিত তিন পর্যায়ের কর্মধারাকে বাস্তবে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমরা প্রশংসা না করে পারি না। বিদ্যাসাগরের মতো মানুষ সত্যিই বিরল আমাদের অনেক কিছু করার আছে ঊনবিংশ শতাব্দীর মহাপ্রাণ মানুষ টির প্রতি যোগ্য সন্মান আর একনিষ্ঠ শ্রদ্ধা জানাবার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতা বিশ্যবিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠিতা সদস্য ছিলেন। মাতৃভক্তির জন্য তাঁর নাম কিংবদন্তী হয়ে আছে। চিরদিন তিনি গোঁড়ামি, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। রামমোহনের সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদ হবার ফলে কৌলিন্য প্রথা ও বহু বিবাহ রদ হওয়ায় সমাজে বিধবাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৮৫৬ সালে বিধবাবিবাহ আইন বিধিবদ্ধ হয় তাঁরই প্রচেষ্টায়। তাঁকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। স্কুল বিভাগের শিক্ষার জন্য তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। বর্ণপরিচয়, কথামালা, চরিতাবলী, শকুন্তলা, সীতার বনবাস প্রভৃতি রচনা করে বাংলা ভাষার বল সঞ্চয় করে ছিলেন। এছাড়া তিনি সম্পাদনা করেছিলেন উত্তররামচরিত, রঘুবংশ সন্দর্ভ সংগ্রহ, কুমারসম্ভব, কাদ্ম্বরী, মেঘদূত প্রভৃতি গ্রন্থ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর মা ভগবতী দেবী। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপন্ডিত ব্যক্তি। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় স্বল্প বেতনের চাকরি করতেন। সেই কারণে ঈশ্বরচন্দ্রের শৈশব তাঁর মা ও ঠাকুরমার সাথে কাটে। ঈশ্বরচন্দ্র ছেলেবেলায় খুব দুরন্ত হলেও খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। গ্রামের পাঠশালায় মন দিয়ে পড়াশোনা করে অল্প দিনেই সব শিখে ফেলেন। ছেলে লেখাপড়া শিখুক এটাই ঠাকুরদাসের ইচ্ছা। অল্প মাইনের চাকরি করলেও সাহস করে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা দেবার জন্য নিয়ে চললেন কলকাতায়। সেই সময় রেল গাড়ি ছিল না। বীরসিংহ গ্রাম থেকে কলকাতা অনেক দূর। ছেলের হাত ধরে ঠাকুরদাস হাঁটা পথেই কলকাতা রওনা দিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র পথের ধারে মাইল পোস্ট দেখে ইংরাজি সংখ্যা গুলো শিখে নেন কলকাতা পৌঁছনোর আগেই। কলকাতায় ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। খুব কষ্টকরে ঈশ্বরচন্দ্র পড়াশোনা শুরু করেন। বাড়ির সব কাজ তাঁকে করতে হত। রান্না করা, বাসন মাজা সব কিছুর মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যান। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি সাহিত্য, অলঙ্কার, ব্যাকরণ, সংস্কৃত সহ আরও কিছু বিষয় আয়ত্ত করে ফেললেন। পরীক্ষায় সকলের চেয়ে বেশি নম্বর নিয়ে বৃত্তি পেলেন। তাঁর পান্ডিত্য দেখে দেশের পন্ডিতবর্গ তাঁকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করেন। তখন বিদ্যাসাগরের বয়স মাত্র কুড়ি। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র তখন চাকরিতে যোগ দেন।১৮৪১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডপন্ডিতের পদ পান ঈশ্বরচন্দ্র। ঈশ্বরচন্দ্র দানশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাঁকে 'দয়ার সাগর' বলা হত।গভীর মানবতাবোধ ও পরদুঃখ কাতরতা তাঁকে দয়ার সাগরে পরিণত করে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্যারিসে থাকাকালীনবেহিসেবী খরচের ফলে অর্থসঙ্কটে পড়লে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর টাকা পাঠিয়ে মাইকেলকে সাহায্য করেছিলেন। বাঙালি জাতি প্রথম বড় হবার, যোগ্য, মানবিক, আধুনিক, প্রগতিশীল ও বিশ্বজনীন হবার দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্রের মধ্যে।তাঁর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি-"তিনি হিন্দু বা বাঙালি ব্রাহ্মণ ছিলেন না। তাঁর মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয় বট তিনি বঙ্গভুমিতে রোপণ করে গেছেন, তার তলদেশ জাতির তীর্থস্থান হয়েছে"। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন-"আমি যে দরিদ্র বাঙালি ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা করি তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।" এই মহাপুরুষ ৭১ বছর বয়সে ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই আমাদের ছেড়ে চলে যান।

23 July 2021

২০২১ সালের ২৩শে জুলাই বাল গঙ্গাধর তিলকের ১৬৫তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

 


সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের জনক, শিবাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত ও কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতারূপে বাল গঙ্গাধর তিলক ঊনবিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশক হতে বিংশ শতাব্দীর প্রথম  দুইশতক পর্যন্ত সুনাম অর্জন করে ছিলেন। 

তিনি পুনা কলেজ হতে বি, এ পাশ করে  আইন  পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  হয়ে পুনার বিখ্যাত নিউ ইন্ডিয়ান  ইস্কুলের শিক্ষক হন।

এ সম য় তিনি সরকারের দোষ ত্রুটি তুলে ধরার জন্য  কেশরী ও মারাঠা নামক দুটি  সংবাদপত্র চালু করেন।

তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভারতীয় অস্থিরতার পিতা বলতেন। তাঁকে আরও সন্মানসুচক লোকমান্য বলা হত, যার অর্থ "জনগণ দ্বারা গৃহীত" (নেতা হিসাবে)। 

ভারতের জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের জনক বালগঙ্গাধর তিলক। এককথায় তাঁকে বিশেষিত করা দুঃসাধ্য। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজসংস্কারক, স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয় নেতা আবার অন্যদিকে ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃত, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও হিন্দুদর্শনে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী।  স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘স্বরাজ আমাদের জন্মগত অধিকার এবং আমরা তা অর্জন করবই’। তিলকের এই উক্তি উদ্বুদ্ধ করেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষকে।

১৮৫৬ সালের ২৩শে জুলাই মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে চিৎপাবন ব্রাহ্মণ বংশে তিলকের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং গণিতে তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তিনি অন্যায় অবিচার একেবারেই বরদাস্ত করতে পারতেন না। সত্যের প্রতি ছিলেন অবিচল। তিলক ছিলেন ভারতের যুবকদের মধ্যে প্রথম প্রজন্ম যাঁরা আধুনিক কলেজ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। তিলক গণিতে প্রথম শ্রেণির স্নাতক হন এবং তারপর আইন পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন । তিলকের কর্মজীবন শুরু হয় গণিতের শিক্ষকতার মাধ্যমে। পরবর্তীকালে তিনি সাংবাদিকতার কাজ গ্রহণ করেন। পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থায় ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব তাঁকে পীড়া দিত এবং এ কারণেই তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবল সমালোচনা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডেকান এডুকেশন সোসাইটি’ ভারতীয় যুবকদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য। এর পরের বছরই তিনি দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করতে শুরু করলেন – ‘কেশরী’ যেটি মারাঠি ভাষায় মুদ্রিত হত এবং ‘মারাঠা’ যার ভাষা ছিল ইংরেজী। তাঁর পত্রিকায় তিনি দেশের মানুষের প্রকৃত দুরবস্থার স্পষ্ট চিত্র এঁকেছিলেন। জ্বালাময়ী ভাষায় তিনি ঘুমন্ত ভারতবাসীদের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। দুটি পত্রিকাই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।বালগঙ্গাধর তিলকের রাজনৈতিক জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন ১৮৯০ সালে। এছাড়াও তিনি পুণে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং বম্বে বিধানমণ্ডলের সদস্য ছিলেন এবং তিনি বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো’ নির্বাচিত হন। সমাজসংস্কারমূলক কাজেও তাঁর মহৎ ভূমিকা ছিল। তিনি বাল্যবিবাহের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে ছিলেন। গণপতি উৎসব এবং শিবাজীর জন্মোৎসব পালনের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষকে একত্র করতে চেয়েছিলেন। 

১৮৯৭ সালে তিলকের বিরুদ্ধে বৃটিশ সরকার অভিযোগ আনে যে তিনি জনগণের মধ্যে বৃটিশ সরকারের প্রতি বিরুদ্ধ মনোভাব জাগিয়ে তুলছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এবং আইন ও শান্তি ভঙ্গ করছেন। এই অভিযোগে তিনি জেলবন্দী হন দেড় বছরের জন্য। ১৮৯৮ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিলক স্বদেশী আন্দোলন শুরু করেন। সংবাদপত্র এবং বক্তৃতার মাধ্যমে তিলক মহারাষ্ট্রের গ্রামে গ্রামে স্বদেশী আন্দোলনকে জোরদার করে তোলেন এমনকি তাঁর বাড়ির সামনে স্বদেশী জিনিসের বাজারও খোলা হয়।

ভারতের জাতীয় রাজনীতিও এই সময় থেকেই অন্য দিকে বাঁক নেয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় – নরমপন্থী এবং চরমপন্থী এই দুই মতবাদে। এতদিন যেখানে নরমপন্থী নেতৃত্বগণ ইংরেজ সরকারের প্রতি আবেদন-নিবেদন নীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন, সেখানে চরমপন্থীদের দাবী হল স্ব-শাসন। বলা বাহুল্য, চরমপন্থীদের নেতৃত্ব দেন বাল গঙ্গাধর তিলক। ১৯০৬ সালে বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার অপরাধে তিনি গ্রেফতার হন। ছয় বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর বার্মার মান্দালয় জেলে। এই দীর্ঘ সময় তিনি জেলের ভেতর লেখাপড়াতেই অতিবাহিত করেন। ‘গীতা-রহস্য’ তাঁর এই সময়ের রচিত গ্রন্থ। ১৯১৪ সালের ৮ই জুন তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। তিলক কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী মতবাদকে একত্রীভূত করতে চেষ্টা করলেও সে চেষ্টা সফল হয় নি। অবশেষে তিনি একটি পৃথক সংগঠন স্থাপন করেন – ‘হোমরুল লীগ’। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বরাজ। বালগঙ্গাধর তিলক গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বরাজের অর্থ আপামর ভারতবাসীর মনে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শরিক করতে চেয়েছিলেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। ‘হোমরুল লীগ’ এর কার্যপদ্ধতি গ্রামে গ্রামে ঘুরে সকলকে বুঝিয়ে তাদের হৃদয়ে স্বাধীন ভারতের চিত্র অঙ্কন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় ক্রমাগত ভ্রমণ করে গেছেন মানুষকে সংঘটিত করার জন্য। মানুষের জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য বাল গঙ্গাধর তিলকের এই আত্মত্যাগ তাঁকে মহীয়ান করে তুলেছে। 

১৮৯০ সালে তিনি  শিবাজি উৎসবের ব্যবস্থা করেন। এই উৎসব সারা ভারতে  ছড়িয়ে  পড়লে ভারতবাসীর  মনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়। 

১৯০২ এবং ১৯০৪ সালে কলকাতায় শিবাজি উৎসব পালিত হয়। কবিগুরু  রবীন্দ্রনাথ ১৯০৪ সালে শিবাজি উৎসব কবিতাটি  সভায়  পাঠ করেন। চরমপন্থীরা ১৯০৫ সালে কলকাতায় শিবাজি উৎসবের ব্যবস্থা করলে তাতে  বাল গঙ্গাধর তিলক যোগ দেন।

১৮৯৭ সাল। মহারাষ্ট্রে প্লেগ মহামারীরূপে দেখা দিল। এক বৃটীশ অফিসার – পুণে শহরে মানুষের উপর নির্দয় ব্যবহারের জন্য যিনি কুখ্যাত ছিলেন – সেই অফিসার র‍্যাণ্ড প্লেগ কমিশনার নিযুক্ত হলেন। প্লেগ দমনে র‍্যাণ্ড অত্যন্ত অশোভন আচরণ শুরু করলেন। জোর করে শহর খালি করে দিতে লাগলেন এবং গোরা সৈন্যদের নিযুক্ত করা হল প্লেগ নিবারণের জন্য। তারা বাড়ি বাড়ি ঢুকে যুবতী মেয়েদের গা টিপে দেখতে লাগল প্লেগ হয়েছে কি না। প্লেগ রোগ নির্ণয় করা এবং তার চিকিৎসা করা গোরা সৈন্যদের কাজ নয় এবং প্লেগ বেছে বেছে যুবতী মেয়েদের দেহেই বাসা বাঁধে না। গোরা সৈন্যদের বদ মতলব সম্বন্ধে মারাঠা মানুষদের মনে আর কোন সংশয় রইল না। এই ঘটনায় সমগ্র মারাঠা সমাজে প্রচণ্ড অসন্তোষ দেখা দিল ও মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। লোকমান্য তিলক তাঁর ‘কেশরী’ পত্রিকায় লিখলেন, ‘এর চেয়ে প্লেগ অনেক ভাল’। কিন্তু কিছুতেই বৃটীশ সরকার র‍্যাণ্ডকে অপসারিত করল না প্লেগ কমিশনারের পদ থেকে। অবশেষে দামোদর চাপেকার এবং তার বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে সরিয়ে দিতে হবে এই ঘৃণ্য অফিসারটিকে। ১৮৯৭ সালের ২২শে জুন রাতে এল সুযোগ। রানী ভিক্টোরিয়ার রাজ্যাভিষেকের ষাট বছর পূর্তির উৎসব শেষে র‍্যাণ্ড এবং আর এক অফিসার লেফটেন্যান্ট আয়ার্স্ট যখন পুণে সরকারী ভবন থেকে ফিরছেন তখন একটি নির্জন স্থানে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে দামোদর এবং তাঁর ভাই বালকৃষ্ণ চাপেকার গুলি করে হত্যা করে তাদের। লেফটেন্যান্ট আয়ার্স্ট সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় র‌্যান্ডকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন পর র‌্যান্ডের মৃত্যু হয়।

ভারতে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য স্যার রাউলাটের অধীনে একটি কমিশন গঠিত হয়। রাউলাট কমিটি এই হত্যাকে ভারতের প্রথম বৈপ্লবিক হত্যা বলে অভিহিত করে। এ সময়ে তিলককে এই হত্যার  প্ররোচনার দায়ে গ্রেপ্তার  করা হয়। দোষ প্রমানিত  না হলেও  তিলককে ১৮ মাস কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯০৮ সালে ক্ষুদিরামের মজফ্ফরপুরে বোমা ফেলার ঘটনাকে সমর্থন করে কেশরী  পত্রিকায় জোরালো বক্তব্য  লেখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে  রাজদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলে ৬ বছর কারাদন্ড হয়।তাঁকে মান্দালয়ে পাঠানো হয়।

বাল গঙ্গাধর তিলক ছিলেন  ধার্মিক  মানুষ। ভারতের প্রধান ধর্মশাস্ত্র - গীতা, বেদ প্রভৃতি সম্পর্কে তাঁর গভীর  জ্ঞান ছিল। তিনি বেদের কাল নির্ণয় করেন এবং  হিন্দু  ধর্মের প্রাচীনত্ব নিয়ে 'আর্কটিক হোম ইন দি বেদস' নামক গ্রন্থ প্রকাশ করে পাশ্চাত্য দেশে সুনাম  অর্জন করেন। 'উত্তর মেরুতে  আর্যনিবাস' নামক গ্রন্থ তাঁর বিরাট অবদান।মান্দালয়ে নির্বাসনকালেই তিনি গীতা সম্বন্ধীয় পুস্তক  রচনা  করেন।

বলা বাহুল্য, বিচারে দামোদর চাপেকারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। জেলে থাকাকালীন বালগঙ্গাধর তিলক দামোদরকে শ্রীমদ্ভগবৎ গীতা উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। ১৮৯৮ সালের ১৮ই এপ্রিল পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে দামোদর চাপেকারের ফাঁসি হয়। সেই সময় তাঁর হাতে ছিল গীতা এবং তিনি আবৃত্তি করছিলেন গীতার শ্লোক।

বাল গঙ্গাধর তিলক ছিলেন  কর্মযোগী পুরুষ এবং তাঁর জীবন  কর্মবহুল ছিল। একদিকে তিনি বিশাল  জাতির শিক্ষক, নেতা, কর্মযোগী, নিষ্ঠাবান  ব্রাহ্মণ, চিন্তাশীল ব্যক্তি, দৃঢ়চেতা সাংবাদিক, অপরদিকে তিনি সমাজসেবক, দেশসেবকও রাজনীতিবিদ। ১৯২০সালের ১লা আগস্ট  তাঁর দেহাবসান ঘটে। 


 





 









21 July 2021

যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি


স্বাধীনতার দাবিতে বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন শতকে ভারতের আকাশ বাতাস মুুখরিত হয়ে ওঠে।ভারতের শ্রেষ্ঠ  সন্তান
 দের যৌথ প্রচেষ্টায় শৃঙ্খলিত ভারতের মুক্তি  ও স্বাধীনতা আন্দোলন সে যুগে তীব্র  আকার ধারণ করেছিল। ওই সমস্ত শ্রেষ্ঠ  সন্তানদের একজন হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। ১৮৮৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ধরবা গ্রামে জন্মগ্রহণ  করেন।

দক্ষিণ কলকাতার একটি খেলার  মাঠ দেশপ্রিয় পার্ক বা উদ্যানটির নামকরণ হয় জাতীয়তাবাদী ব্যারিস্টার  যতীন্দ্রমোহন  সেনগুপ্তর নামে।

দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ১৯০২ সালে হেয়ার স্কুল হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে বিলেতে যান উচ্চশিক্ষার্থে। ১৯০৮ এ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.এ. এবং ১৯০৯ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। ওখানে তার আলাপ ও প্রনয় হয় ইংরেজ মহিলা নেলী গ্রে'র সাথে। যিনি যতীন্দ্রমোহনকে ১৯০৯ সালে বিবাহ করে নেলী সেনগুপ্তা হন। নেলী সেনগুপ্তা নিজেও অসামান্য সমাজকর্মী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে ভারতে সমুজ্জ্বল হয়েছেন।যতীন্দ্রমোহন ব্যারিস্টারি পাশ করে কলকাতায় আইন ব্যবসা শুরু  করেন।

যতীন্দ্রমোহন ১৯১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন এবং আইনজীবী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। মাঝে কিছুদিন রিপন কলেজে (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইনের শিক্ষকতা করেন।অগ্নিযুগের বহু বিপ্লবীকে নিশ্চিত ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচিয়ে এনেছেন তার অসামান্য দক্ষতায়। ১৯২৩ সালে দ্বিতীয় আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় তার কৃতিত্বপূর্ণ সওয়ালে সাতজন বিপ্লবী মুক্ত হন। স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পক্ষ নিয়ে আদালতে লড়াই করতেন। ভারতবর্ষ থেকে বার্মাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে যতীন্দ্রমোহন রেঙ্গুন যান। সেখানে জনসমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। যতীন্দ্রমোহন ১৯২২ সালে জাতীয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। পরবর্তী সময়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠা করলে যতীন্দ্রমোহন স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর (১৯২৫) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত স্বরাজ পার্টির বিশেষ অধিবেশনে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি মোট ৫ বার কলকাতার মেয়র হন।

১৯৩০ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের আস্থায়ী  সভাপতি  ছিলেন। ওই বছর  ২৫শে অক্টোবর   জালিয়ানওয়ালাবাগে রাজদ্রোহমূলক বক্তৃতা দেওয়ার পরে গ্রেপ্তার  হন এবং মুক্তি পেয়ে বিলেতে যান। চট্টগ্রামে পুলিশি অত্যাচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিলেতে গিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করেন। তার দেওয়া তথ্য, ছবি ইত্যাদির ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার নেলসন অপসারিত হন। এছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্রেগ অবসর পুলিশ সুপার স্যুটার আত্মহত্যা করেন। ফলত সরকারের রোষানল তার ওপর পড়ে। কমিশনার টেগার্ট তখন বিলেতে ছিলেন। তিনি সরকারকে জানান যতীন্দ্রমোহন অহিংসবাদী নন। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগকারী ও মদতদাতা। পুলিশ দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বোম্বাই বন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করে যারবেদা জেল ও পরে দার্জিলিং এ অন্তরীণ করে পাঠায়। অসুস্থ হয়ে পড়লেও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেয়নি পুলিশ।১৯৩৩ সালের ২২শে জূলাই কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।