27 August 2019

প্রেম, শান্তি  ও আশ্রয়ের প্রতীক মাদার টেরেসার ১০৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রেম, শান্তি  ও আশ্রয়ের প্রতীক একটি নাম হল মাদার টেরেসা। মানুষ কে শোষণ,নিপীড়ন, নিষ্ঠুরতার হাত থেকে মুক্তি দেবার জন্য যে সব সাধু-মহাত্মা অণেক  কষ্ট  ভোগ করেছেন,  মাদার টেরেসা ছিলেন তাঁদেরই  একজন। ইনি ১৯১০ সালে ২৭শে আগস্ট আড্রিয়াটিক সাগরের তীরে ছোট শহর স্কোপেনে এক আলবেনিয়ান কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতার নাম ছিল নিকোলাস বোজাকসহিউ যিনি পেশায় ছিলেন মুদি। তিনি মেয়ের নাম রেখেছিলেন অ্যাগনেস গোনক্সহা বোজাকসহিউ।জন্ম সূত্রে মাদার যুগোশ্লোভিয়ার বাসিন্দা হলে ও জাতিসূত্রে তিনি আলবেনিয়ান। অ্যাগনেসের বয়স যখন ৭ বছর তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। মাতার কাছে তিনি মানু ষ হতে থাকেন। শৈশব হতেই বিশ্বের দুঃখী, আর্ত, অসহায় মানু ষের কান্না তার চোখের সামনে ভেসে উঠত।মায়ের প্রেরণাতেই গ রীবের প্রতি দয়া ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি বিশ্বাস
অ্যাগনেস লাভ করেছিলেন।

স্কেপেজের পাবলিক স্কুলে পড়বার সময়ই সোডালিটি সংঘের মিশনারীদের কাজকর্মের প্রতি অ্যাগনেসের উৎসাহ ছিল। সংঘের পত্র - পত্রিকাগুলি নিয়মিত পড়তেন তিনি।তার নিজের কথায় 'At the age of twelve I first knew I had a vocation to help the poor. I wanted to be a missionary'.

স্কেপেজের পাবলিক স্কুলে পড়বার সময়ে কলকাতার প্রতি এক বিশেষ আকর্ষণ তৈরী হয়েছিল অ্যাগনেসের মনে।

অ্যায়ারল্যান্ডের লরেটো সংঘ তখন  কাজ করছিল। তাদের প্রধান কার্যালয় ছিল ডাবলিনে। অ্যাগনেস সেখানে যোগাযোগ করলেন এবং মায়ের অনুমতি নিয়ে যোগদিলেন লরেটো সংঘে।অ্যায়ারল্যান্ডের বাথার্নহামে গেলেন মাত্র আঠারো বছর বয়সে।

১৯২৮ সালে অ্যাগনেস জাহাজে ভেসে চলে এলেন কলকাতায়। যোগ দিলেন সিস্টারস অব লরেটোতে- আইরিস  সন্নাসিনীদের প্রতিষ্ঠান। সেই থেকেই তিনি মনে প্রানে বাংলার মানুষ হয়ে গেলেন।
তখন ও  পুরোপুরি  সন্নাসিনী তিনি হননি। শিক্ষানবিশী পর্ব শেষ করার জন্য  দার্জিলিং পাঠানো হল তাঁকে। দু বছর সেখানে কাটিয়ে গ্রহন করলেন সন্নাসিনী ব্রত।

কলকাতায় ফিরে এলেন সিস্টার অ্যাগনেস হয়ে। এন্টালির সেন্ট মেরিজ স্কুলে শিক্ষয়ত্রী হিসাবে যোগ দেন।দীর্ঘ কুড়ি বছর তিনি ঐ স্কুলের শিক্ষয়ত্রী ছিলেন। ১৯৪২ সালে তিনি ঐ স্কুলের অধ্যক্ষা হন। স্কুলে থাকাকালীন পাশে মতিঝিল বস্তির বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্ট,দারিদ্র, শিশুদের কষ্ট তাঁকে গভীরভাবে পীড়া দিত।
তখন চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মানুষ সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে কলকাতার অবস্থা তখন খুবই দুর্বিসহ। একটু ভাতের আশায়,  একবাটি ফ্যানের আশায় দলে দলে গ্রামের মানুষ ভিড় করছে কলকাতায়। অনাহারে কু খাদ্য খেয়ে মানুষ  মারা যাচ্ছে। সিস্টার অ্যাগনেস এই সম য় তাঁর কাজ শুরু করলেন।তাঁর নাম হ ল মাদার অ্যাগনেস।
১০ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সালে দার্জিলিং যাবার সময় এক অলৌকিক উপলব্ধি তাঁর হল। এই উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে তুনিব লেছেন  ,'a call within a call.... The message was clear.I was to leave rhe convent and help the poor, while living among them.
গরিবের সেবা করতে হলে তাদের মধ্যে থেকেই সেটা করতে হবে। এটা তিনি সারা জীবন স্মরণে রেখেছিলেন। তিনি বলতেন  'দ্য ডে অব ডিমিশন'--- অনুপ্রেরণার দিন।  মাদার অ্যাগনেস পরিনত হলেন মাদার টেরেসাতে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অব চ্যারিটি এই দিন টিকেই অনুপ্রেরণার দিবস হিসাবে পালন করে।
মাদার অ্যাগনেসে অধ্যক্ষার কাজ ছেড়ে দেন।ল রে টোর স ন্নাসীদের বেশ ত্যাগ করে পরলেন মোটা নীল পাড় শাড়ী। সেদিন তার সম্বল বলতেছিল পাঁচ টাকা, একটি বাইবেল, ক্রস গাঁথা একটি জপের মালা। আর সাথে ছিল ঈশ্বরে নির্ভরতা, মনোবল আর বিশ্বাস।

১৯৫০ সালে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করে শুরু করলেন মানুষের সেবার কাজ।দুঃখী, দরিদ্র মানুষ কে একান্ত মায়ের স্নেহ- মমতায় তুলে নিলেন বুকে।
মাত্র পাঁচ টাকা মূলধন করে যে মিশনারিজ ইব চ্যারিটির  জন্ম হয়েছিল আজ তা বিশ্বে শত শত শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে।
মানবতার সেবা ও শিক্ষা প্রচারের জন্য তিনি বহু দেশে শিশু ভবন,  মহিলা কর্মক্ষেত্র, খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ কেন্দ্র, ভ্রাম্যমান চিকিৎসাকেন্দ্র ও কুষ্ঠাশ্রম ইত্যাদি স্থাপন করেন। বৃদ্ধ বয়সে ও  এই মহীয়সী নারী সেবার কাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
মানুষ্ কে ভালোবাসার এক অভাব ণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন ক রে ছেন মাদার টেরেসা।গোটা বিশ্ব সেটা স্বীকার করে নতমস্তকে তাকে দিয়েছে নানা পুরস্কার।১৯৬২ সালে ভারত স র কারের 'পদ্মশ্রী', ১৯৭১সালে 'পোপের শান্তি' পুরস্কার।  এছাড়াও তিনি 'নেহ রু' 'মাস্টার অফ ম্যাজেস্টি', 'ভার ত র ত্ন', 'ম্যাগশেশাই' পুরস্কার এবং সন্মান পান।১৯৭৯ সালে ১৭ই অক্টোবর ভারতবর্ষ, এবং কলকাতার গৌর বের দিন। ভারতের নাগরিক মাদার টেরেসা পালেন নোবেল পুরস্কার। পোপ ফ্রান্সিস ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তে ভ্যাটিকান সিটির  সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে সন্ত উপাধি প্রদান করেন।ক১৯৯৭সালের৫ই সেপ্টেম্বর এই বিশ্ব জ ন নীচি র নিদ্রায় নিদ্রিত হ লেও আমাদের কাছে তিনিও ম র হ য়েই থাকবেন।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।




15 August 2019

অগ্নিযুগের বিপ্লবী নেতা ও দার্শনিক শ্রী অরবিন্দ ঘোষের ১৪৭ তম জন্ম বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


অগ্নিযুগের বিপ্লবী নেতা ও দার্শনিক শ্রী অরবিন্দ ঘোষের ১৪৭ তম জন্ম বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। বাবা  কৃষ্ণধন ছিলেন বাঙালি দের মধ্যে প্রথম বিলেত ফেরত চিকিৎসক।আচার ব্যবহার চাল চলনে কৃষ্ণধন ছিলেন পুরোদস্তর সাহেব। শ্রী অরবিনন্দের মা স্বর্ণলতা ছিলেন অত্যন্ত স্নেহময়ী। ভাই বোন মিলে
অরবিন্দরা মোট  পাঁচজন  ছিলেন।
বাড়িতে বিলেতি পরিবেশে বড় হচ্ছিলেন।
অরবিন্দের জন্ম হয়ে ছিল কলকাতার থিয়েটার রোডে ১৫ই আগস্ট ১৮৭২ সালে। ঘোষ পরিবারের বাড়ি যেন ইংরেজ পরিবার। শ্রীঅরবিনন্দের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল একজন ইংরেজ আয়ার হাতে। ছোট থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অরবিন্দ জানতেই পারেননি যে তাঁর মাতৃভাষা বাংলা।শ্রীঅরবিন্দের বয়স যখন পাঁচ তখন তিনি দার্জিলিংয়ে সাহেব দের স্কুলে ভর্তি হন।
শ্রীঅরবিন্দের বয়স যখন সাত তখন তিনি ও  তাঁরভাই ইংল্যান্ডে পড়তে যান। শ্রী অরবিন্দ  কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করে দেশে ফিরে আসেন।ইংল্যান্ডে থাকার সময় তিনি জার্মান, ইতালিয়,স্পানিশ এবং গ্রীক ভাষা শিখেছিলেন।
লন্ডনে থাকাকালিন সে সময়কার বরোদার মহারাজা তাঁর রাজ্যের শিক্ষা বিভাগে ভালো বেতনে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। ১৮৯৩  সালে বিদেশে শিক্ষ্যিত হয়ে দেশ মাতৃকার সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে শ্রীঅরবিন্দ দেশে ফিরে বরোদায় চলে আসেন।বারোদায় অরবিন্দ ভারতীয় সংস্কৃতির উপর গভীর অধ্যয়ন শুরু করেন, নিজ ঊদ্যোগে সংস্কৃত, হিন্দি এবং বাংলা, বিলেতের শিক্ষায় যেসব থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।এই সময় তিনি সংস্কৃত হিন্দি ও বাংলা ভাষা শিক্ষা শুরু করেন। এরপর তিনি   অল্প টাকার বেতনে জাতীয় শিক্ষা পরিষদে অধ্যাপকের চাকরি নেন।তিনি বারোদা থেকেই তার প্রথম কাব্য সঙ্কলন "The Rishi" প্রকাশ করেন। একই সময়ে তিনি বৃটিশ বিরোধী সক্রিয় রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।বাংলা ও মধ্য প্রদেশে ভ্রমন করে বিপ্লবী দলগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। লোকমান্য তিলক এবং ভইগ নি নিবেদিতার সাথেও যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
১৯০৯ সালে যখন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সারা দেশ উত্তাল,সেই সময় তিনি বন্দেমাতরম  নামক একটি ইংরাজি পত্রিকা  সম্পাদনা করতেন। এই পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে লিখে তিনি পরিচিত হয়ে পড়েন। এমন সময় অনুজ বিপ্লবী বারীন ঘোষের মাধ্যমে বাংলার বিপ্লবী দলের সাথে তাঁর যোগাযোগ ঘটে।বারীন ঘোষ কে তিনি  চিঠি লিখে নির্দেশ দেন ছেলেদের মধ্যে শৃঙ্খলা  এনে ছোট ছোট দল গঠন করতে।কোন শহরই বাদ গেল না।এই ভাবে একে একে মুরারী পুকুরের ছেলেরা এক ত্রিত হয়ে দেশের কাজে একনিষ্ঠ সেবক হব, প্রাণ পণ করে। তাদের সকলের মুখেই  মাতৃমন্ত্র বন্দেমাতরম।

স্বাধীনতার বাণী ছড়িয়ে দেবার জন্য এই সময় বন্ন্দেমাতরম নামে একটা ইংরাজী প ত্রিকা সম্পাদনাক  করতেন। ইংরেজ সরকার এই পত্রিকার এবং আলিপুর বোমার মামলার কারণে শ্রীঅরবিন্দকে গ্রেপ্তার  করেন। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই অরবিন্দ  মুক্তি পান।এর আল্প কিছুদিন পর অরবিন্দ জানতে পারেন যে ইংরেজ সরকার তাঁকে বরাবরের জন্য বন্দী রাখার ব্যবস্থা করছেন।তখন ১৯১০ সালে তিনি বাংলা ছেড়ে প্রথমে চন্দনগর ও  পরে ফরাসি উপনিবেশ পন্ডিচেরিতে চলে যান।যে শ্রীঅরবিন্দ সুপ্ত ও মোহগ্রস্ত ভারতের তরু ন দের বুকে প্রেরণা জাগিয়ে দেশপ্রেমের বন্যা বইয়ে দেন তিনি আবার যোগ সাধনার মাধ্যমে মুক্তি পথের নিশানা তুলে ধরেন।
১৯১৪ সালে মীরা রিচার্ড নামে রক বিপ্লবী ফরাসী মহিলা শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে আসেন এবং অরবিন্দের কাছে দীক্ষা নিলে পর তাঁর নাম হ য় শ্রীমা।তাঁরই ওপর আশ্রম পরিচালনার ভার পড়ত।আওরবিন্দ প ন্ডিচেরীতে থাকাকালীন যে সব গ্রন্থ রচনা করেন তার মধ্যে The Motherএবং ছয় খন্ডে সমাপ্ত দিব্য জীবন The Life Divine উল্লেখযোগ্য।
শ্রী অরবিন্দ ঘোষ পরবর্তী জীবনে আধ্যাত্মিক সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে হয়েছিলেন ঋষিঅরবিন্দ।
ঋষি অরবিন্দ ১৯৫০সালের৪ঠা ডিসেম্বর  পরলোকগমন করেন।

কিশোরকবি সুকান্তের ৯৩তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


মাত্র ২১ বছর বয়েসের মধ্যেই সুকান্ত ভট্টাচার্য  হয়ে উঠেছিল কিশোর কবি সুকান্ত।একুশ বছরের মধ্যে তিনি এমন কিছু কবিতা লিখেছেন সেগুলি এক সময় বিপ্লবের আগুনশিখা হিসাবে কাজ করেছে।সব সময় তিনি সামাজিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়াতে তাঁকে প্রতি মুহূর্তে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সমাজসেবার ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সুকান্ত যখন কৈশোর অতিক্রম করেন,তখন সমগ্র ভারতবর্ষ এক রাজনৈতিক ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছিল।

কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য  সুকান্তের সম্পর্কিত ভাতুষ্পুত্র।
দক্ষিণ কলকাতার একটি গুরুত্ব পূর্ণ উড়াল পুল  কবি সুকান্তের স্বরণে নামে রাখা হয়েছে সুকান্ত সেতু। এটি  যাদবপুরকে (সুলেখার নিকটে) সন্তোষপুর, গরফা, পালবাজার, হাল্টুর সাথে সংযোগকারী রেলওয়ে ওভার ব্রিজ। এটি পূর্ব মহানগর বাইপাসের সাথে সরাসরি সংযোগ সরবরাহ করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় থেকেই সুকান্তের  ছড়া লেখা সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় ছাত্রদের লেখা ও ছবি নিয়ে সপ্তমিকা নামে হাতে লেখা একটি পত্রিকা বার করেন।  ভাব, ভাষা, ছন্দ  সব আপন মন থেকেই আসত। তাঁর ছড়া ছিল নিপীড়িত মানুষদের কথা ভেবে লেখা যারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না।
মাতুলালয়ে সুকান্ত ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ও মাতার নাম ছিল সুনীতি দেবী। তাঁর পিতার সংসার ছিল অভাব অনটনে ভরা।১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলন,১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৪ সালের নেতাজীর কার্যকলাপ,১৯৪৫ এর নৌবিদ্রোহ এবং ১৯৪৬ সালের ডাক ও তার বিভাগের ধর্মঘট - প্রভৃতি অসংখ্য আন্দোলন ও বিদ্রোহে সারা ভারত উত্তাল। এই দ্রুত পরিবর্তন সুকান্তকে উদ্বেলিত করে। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়,  নানা সমাজ সেবামূলক কাজও তিনি করতেন। এর মধ্যে সুকান্ত যোগ দেন ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিতে। তখন স্বাধীনতা নামে ছিল কম্যুনিস্ট পার্টির  দৈনিক পত্রিকা। এই পত্রিকায় 'কিশোর সভা' বিভাগের সম্পাদক ছিলেন তিনি।। এই বিভাগের সব ছড়াই তাঁর লেখা ছিল। তিনি কৃষ ক ও শ্রমিক আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন।তাঁর লেখা গান 'রানার' খুব ই জনপ্রিয়। বিদ্রোহ কবিতাটি আজও অনেককে অনুপ্রাণিত করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সুকান্ত অনেক গান রচনা করেন বিভ্রান্ত জনগণকে সতর্ক করবার জন্য।দেশের দুঃখদুর্দশা, অপমান নিয়ে তাঁর লেখা ছিল---

অবাক  পৃথিবী অবাক করলে তুমি।

জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ-স্বদেশ ভুমি।।

এ দেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম

অবাক পৃথিবী। সেলাম তোমাকে সেলাম।

তরুণ কবি সুকান্ত তাঁর কবিতায় রোষ,অভিমান, বেদনা ও বিদ্রোহ ফুটিয়ে তোলেন।তাঁর কতকগুলো কবিতা যথা রানার, সিঁড়ি,,হে মহাজীবন,বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি প্রবন্ধ ও কয়েকটি গল্পও লিখেছিলেন।পরবর্তীকালে সুকান্তের সমস্ত কাব্য গ্রন্থ ও কতকগুলো চিঠিসহ 'সুকান্ত সমগ্র' প্রকাশিত হয়েছে।
আর্থিক অনটন ও পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত  হয়েছিল সুকান্তের জীবন। স্কুলের গন্ডি তিনি পার হতে পাতেরেন নি। কিন্তু অভাব অনটন সত্বেও তাঁর কলম থেমে থাকেনি।
তাঁর লেখা শেষ কবিতার বই 'ছাড়পত্র' যখন ছাপা হচ্ছিল সেই সময় সুকান্ত যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হন। 'ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের ‘হে মহাজীবন’ কবিতাটিতে সুকান্ত 

পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটির

সাথে তুলনা করেছেন। ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে  যক্ষ্মারোগে কবি সুকান্ত পরলোক গমন করেন।


প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।