31 October 2021

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৬তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।















ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা রূপে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল খুবই বিখ্যাত  ছিলেন। তিনি ১৮৭৫ সালে ৩১শে অক্টোবর গুজরাটে জন্মগ্রহণ  করেন। তিনি ব্রিটেন  থেকে ব্যারিস্টারি  পাশ করে আমেদাবাদে ব্যারিস্টারি পেশায় যুক্ত হন।  এই পেশায় তিনি সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু মন পড়ে থাকে দেশসেবায়। সে সময় ভারতের সর্বত্র গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন  চলছিল। আইন ব্যবসা ত্যাগ করে তিনি গান্ধীজীর আহ্বানে কংগ্রেসে যোগদান করেন।

আমেদাবাদের মিল শ্রমিকদের ধর্মঘটে  মহাত্মা গান্ধী  ও  সর্দার প্যাটেল  ছিলেন সংগ্রামের অধিনায়ক। অহিংসা ও সংযমের প্রভাবে শ্রমিকদের জয় হয়। এই আন্দোলনে সর্দার প্যাটেলের অসাধারণ দক্ষতা দেখান।

১৯৩১ সালে ক রাচীতে ক ং গ্রেসের অধিবেশনে সর্দার প্যাটেল  সভাপতি হন। তিনি গান্ধীজীর ডান্ডি অভিযানের পূর্বে গ্রেপ্তার  হন। সর্দার প্যাটেলের প্রচেষ্টায় ভারতের দ্বিতীয় বারের নৌবিদ্রহ তুলে নেওয়া হয়েছিল।  ১৯৪৬ সালে অন্তর্বতী সরকার প্রতিষ্টিত  হলে সেখানে  তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  ছিলেন। স্বাধীন  ভারতের ইনি উপ প্রধানমন্ত্রী ওস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করেন। দৃঢ়চেতা ও অসাধারণ  ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্যাটেলকে লৌহমানব বলা হত।

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৪ সাল থেকে ৩১শে অক্টোবরকে ভারতের রাষ্ট্রীয় একতা দিবস বা জাতীয় ঐক্য দিবস হিসাবে পালন করা হয়।  সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল প্রাক-স্বাধীন দেশের 562টি রাজ্যকে ভারতের প্রজাতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য একত্রিত করার কৃতিত্ব পান। ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুম্বাইতে সৰ্দার বল্লভভাই পটেল পরলোকগমন  করেন।



২০১৮ সালে সৰ্দার বল্লভভাই পটেলের স্মৃতির  উদ্দেশ্যে ভারত সরকার  ঐক্যের মূর্তি নামে তাঁর  একটি শ্রেষ্ঠ  ভাস্কর্য  ১৮২ মিটার লম্বা মূর্তি নির্মান করা হয়। এটি ভারতের গুজরাট  রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে  নর্মদা নদীর পাশে অবস্থিত ভাস্কর্যটি ২০ হাজার বর্গ  মিটারেও বেশি এলাকা  জুড়ে  অবস্থিত  এবং একটি কৃত্রিম  হ্রদ দ্বারা পরিবেষ্টিত।














21 October 2021

২১ অক্টোবর,২০২১ সালে আজাদ হিন্দ সরকার গঠনের ৭৮তম বার্ষিকীতে প্রতিবেদন। 








এই দিনে  ১৯৪৩ সালে আজাদ হিন্দ সরকার নামে ভারতের প্রথম স্বাধীন অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করা  হয়।  ক্যাপ্টেন-জেনারেল মোহন সিং ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু পরে তা ভেঙে যায়। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ) কে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ সালের  ২১ অক্টোবর নতুন রূপ দান করেন।

ব্রিটিশ শাসন থেকে সম্পূর্ণ ভারতীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আজাদ হিন্দ ফৌজ শুরু হয়েছিল। জাপান, ক্রোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, ইতালি এবং বার্মাসহ কয়েকটি দেশ আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ২১শেঅক্টোবর, ১৯৪৩ সালে, সুভাষচন্দ্র বসু অধিকৃত সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দের অস্থায়ী সরকার গঠনের ঘোষণা করেছিলেন।  তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে নির্বাসনে থাকা অস্থায়ী সরকারের ব্যানারে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতকে মুক্ত করার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।

সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ২৩শে জানুয়ারি, ১৮৯৭ সালে কটকে (সেই সময় বাংলা প্রদেশের উড়িষ্যা বিভাগের অংশ)।  'তোমরা আমায়  রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা  দেব'।  একথা বলেছিলেন বাংলার একজন তেজস্বী  বীরপুরুষ সুভাষচন্দ্র বসু। পিতার নাম জানকীনাথ বসু। ইনি কটকের বিখ্যাত  সরকারি উকিল ছিলেন।  মাতা প্রভাবতী দেবী। কটকের র‍্যাভেনশা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে সুভাষচন্দ্র তার স্কুল শিক্ষা শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অল্প সময়ের জন্য পড়াশোনা করেন।এই কলেজে পড়ার সময় এক ইংরেজ অধ্যাপক বাঙ্গালী জাতির সম্পর্কে কটুক্তি করেন। সুভাষচন্দ্র তাকে মেরে এই অপমানের প্রতিশোধ  নেন। ফলে সুভাষচন্দ্রকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়। পরে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শন অধ্যয়ন করেন এবং তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে যান।

যেহেতু সুভাষচন্দ্র একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন, তিনি মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় (ICS) যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।  কিন্তু, সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কাজ করতে চান না বলে  তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন এবং কংগ্রেস দলের সদস্য হন।  মহাত্মা গান্ধী এবং জওহর লাল নেহেরুর মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বের সাথে কাজ করা সত্ত্বেও, সুভাষচন্দ্রের  প্রধান মতাদর্শগত পার্থক্য ছিল।

সুভাষচন্দ্র  ১৯৩৮ সালে কংগ্রেস পার্টির সভাপতি হন। পরে মহাত্মাগান্ধী এবং দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে 'ফরওয়ার্ড ব্লক' দল গঠন করেন। ব্রিটিশ সরকার  সুভাষচন্দ্রকে গৃহবন্দি করলে ১৯৪১ সালের ১৭ই জানুয়ারির গভীর রাতে কলকাতার বাড়ী থেকে অন্তর্ধান হন। ভারতের উপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি গান্ধীর অহিংসার আন্দোলন থেকে ভিন্ন মতে বিশ্বসী ছিলেন। সুভাষচন্দ্র  গোপনে কলকাতা ত্যাগ করে জার্মানিতে গমন করেন। বার্লিনে তিনি জার্মানির সমর্থনে ভারতের অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠন করেন এবং বার্লিন বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে তাঁর ধ্যানধারণা প্রচার করতে থাকেন। জার্মানি থেকে তিনি জাপানের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করেন। এ সময়ই জার্মানির ভারতীয় সম্প্রদায় সুভাষচন্দ্রকে ‘নেতাজী’ উপাধি দেয়। এখানেই ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের জন্ম।

ক্যাপ্টেন-জেনারেল মোহন সিং ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু পরে তা ভেঙে যায়।  নেতাজী সুভাষচন্দ্র দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত ভারতীয়দের সহায়তায় পুনরায় আইএনএ গঠন করেন এবং গর্বের সাথে এর দায়িত্ব নেন।যদিও নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি, তাদের এ চেষ্টা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে পরবর্তীকালে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে এক বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

১৯৪৫ সালে ফরমোজার তাইহোকু  বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন বলে প্রচার করা হয়।