30 August 2021

টোকিও প্যারা অলিম্পিক্সে প্রথম সোনা জয় ভারতের।

এ বারের টোকিও প্যারা অলিম্পিক্সে প্রথম সোনা জয় ভারতের। প্যারা অলিম্পিক্স কর্তৃপক্ষ টুইট করে লেখেন, 'সোনার দিন। শুটিংয়ে ভারতের প্রথম পদক এবং সেটা সোনা। অবনী বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করেন। অলিম্পিক্স এবং প্যারালিম্পিক্স মিলিয়ে অবনী প্রথম মহিলা যে সোনা জিতেছে।'
১০ মিটার এয়ার রাইফেল শুটিংয়ে সোনা জিতলেন অবনী লেখারা।  প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে প্যারালিম্পিক্সে সোনা জিতলেন তিনি।২০১২ সালে ১৯ বছর বয়সী অবনী  একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পান। এটা টোকিয়ো প্যারা অলিম্পিক্সে ভারতের চতুর্থ পদক জয়।

24 August 2021

২৫ অগস্ট কবি অতুলপ্রসাদ সেনের ৮৭ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

কবি অতুল প্রসাদ সেন
১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায়  অতুলপ্রসাদের জন্ম। তাঁদের আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরের দক্ষিণ বিক্রমপুরের মগর গ্রামে। বাল্যকালে পিতৃহীন হয়ে অতুলপ্রসাদ ভগবদ্ভক্ত, সুকণ্ঠ গায়ক ও ভক্তিগীতিরচয়িতা মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের আশ্রয়ে প্রতিপালিত হন। পরবর্তীকালে মাতামহের এসব গুণ তাঁর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়।

অতুলপ্রসাদ ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাসের পর কিছুদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং পরে লক্ষ্ণৌতে স্থায়িভাবে বসবাস করেন। সেখানে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং আউধ বার অ্যাসোসিয়েশন ও আউধ বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হন। লক্ষ্ণৌ নগরীর সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েন।অতুলপ্রসাদ প্রবাসী (বর্তমানেনিখিল-ভারত) বঙ্গ-সাহিত্য সম্মিলন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি উক্ত সম্মিলনের মুখপত্র উত্তরার একজন সম্পাদক এবং সম্মিলনের কানপুর ও গোরখপুর অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, পরে লিবারেলপন্থী হন। 
 সৎপিতার সহায়তায় বিলেতে যান এবং বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। বিলেত থেকে ফিরে আপন মামাতো বোন হেমকুসুমের প্রেমে পড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বহু সমালোচনার সন্মুখিন হন এবং এই বিবাহ সম্পর্ক সুখের ছিল না। পরে লক্ষ্ণৌতে স্থায়িভাবে বসবাস করেন। সেখানে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং আউধ বার অ্যাসোসিয়েশন ও আউধ বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হন। লক্ষ্ণৌ নগরীর সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েন।
ছোটবেলায়  ঢাকা ও ফরিদপুরে বাউল, কীর্তন ও মাঝি-মাল্লাদের  ভাটিয়ালি গানের মূর্ছনা অতুলপ্রসাদের হূদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করেছিল। সে সুরের অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত তাঁর বাউল ও কীর্তন ঢঙের গানগুলিতে বাংলার প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়। অতুলপ্রসাদ প্রেম, ভক্তি, ভাষাপ্রীতি, দেশপ্রেম প্রভৃতি বিষয়ভিত্তিক বহু গান রচনা করেছেন। ১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবকদের অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে দেশাত্মবোধক গানটি রচনা করেন, তাতে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের সুর আছে: ‘দেখ মা এবার দুয়ার খুলে/ গলে গলে এল মা/ তোর হিন্দু-মুসলমান দু ছেলে’। ‘মোদের গরব, মোদের আশা/ আমরি বাংলা ভাষা’ গানটিতে অতুলপ্রসাদের মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। এ গান বাংলাদেশের  ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের মধ্যে অফুরন্ত প্রেরণা জুগিয়েছে। গানটির আবেদন আজও অম্লান। এভাবে বাণীপ্রধান গীতি রচনা, সুললিত সুর সংযোজন, সুরারোপে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রচলন ও করুণা রসসঞ্চারের মাধ্যমে অতুলপ্রসাদ বাংলা সঙ্গীতভান্ডারকে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট লক্ষ্ণৌতে তাঁর মৃত্য হয়।

18 August 2021

২৬শে আগষ্ট ২০২১ সালে করুণাময়ী জননী মাদার টেরেসার ১১১তম জন্ম বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 


শৈশব হতেই বিশ্বের দুঃখী, আর্ত, অসহায় মানুষের কান্না তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠত।গৃহের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য পরিহার করে আর্তের সেবা করাই তিনি জীবনের মন্ত্ররূপে গ্রহন করেন। সুযোগও তাঁর এসে যায়। ১৯২৮ সালে ১৮ বছরের অ্যাগনেসকে যুগোশ্লোভিয়ার জেনুইট সঃস্থা আয়ারল্যান্ডের লরেটো সংঘে পাঠায়। স্কেপেজের পাবলিক স্কুলে পড়বার সময়েই সোডালিটি সংঘের মিশনারীদের কাজকর্মের প্রতি অ্যাগনেসের উৎসাহ ছিল। ক্লাসে যুগোশ্লোভিয়ার জেসুইটদের চিঠি  পড়ে শোনানো হত। সেখানে কলকাতার কথাও থাকত। সে সব শুনে কলকাতার প্রতি এক বিশেষ টান তৈরী হয়েছিল অ্যাগনেসের মনে।

খ ব র নিয়ে জানলেন আয়ারল্যান্ডের লরেটো সংঘ ভারতে কাজ করছে। তাদের প্রধান কার্যালয় ছিল ডাবলিনে। অ্যাগনেস তাদের সাথে যোগাযোগ  করে মায়ের অনুমতি নিয়ে যোগ দিলেন লরেটো সংঘে।আয়ারল্যান্ডের বাথার্নহামে গেলেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে।

১৯২৮ সালে অ্যাগনেস জাহাজে ভেসে চলে এলেন কলকাতায়। যোগ দিলেন আইরিস সন্নাসিনীদের প্রতিষ্ঠান সিস্টারস অব লরেটোতে। সেই থেকেই তিনি মনে প্রাণে বাংলার  মানুষ  হয়ে গেলেন। দু বছর দার্জিলিং এ থেকে সন্নাসিনী ব্রত নিয়ে সিস্টার অ্যাগনেস কলকাতায় আসেন। কলকাতার এন্টালির সেন্ট মেরিজ স্কুলে বাংলা বিভাগের শিক্ষয়িত্রী হিসাবে যোগ দেন। ভুগোল ও ইতিহাস ছিল তাঁর পড়াবার বিষয়। প্রায় কুড়ি বছর তিনি ঐ স্কুলের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। স্কুলে থাকাকালীন পাশে মতিঝিল  বস্তির বাসিন্দাদের দুঃখ- কষ্ট, দারিদ্র, শিশুদের কষ্ট তাঁকে গভীর  ভাবে পীড়া দেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মানুষ সৃষ্ট  দুর্ভিক্ষ কলকাতার  অবস্থা খুবই দুর্বিসহ  হয়ে ওঠে।একটু ভাতের আশায়, এক বাটি ফ্যানের আশায় দলে দলে গ্রামের মানুষ  ভিড় করে কলকাতায়। মানুষ কুখাদ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে। তিনি বুঝেছিলেন চার দেওয়ালের গন্ডীর মধ্যে থেকে দরিদ্রের, আর্তের সেবা হয় না। এর বাইরে তাঁকে বের হতে হবে। ওই বস্তিতে গিয়ে তিনি আর্ত মানুষের সেবা শুরু করেন। ১৯৩১সালে তিনি সন্নাসব্রত গ্রহন করেন। তখন তাঁর নাম করণ হয় মাদার টেরেসা নামে। মাদার লরেটোর সন্নাসিনীদের  বেশ ত্যাগ করে পরলেন মোটা নীল পাড় শাড়ী। সেদিন তাঁর সম্বল বলতে ছিল ৫ টাকা, একটি বাইবেল, ক্রুস সম্বলিত জপের মালা। আর সাথে ছিল ঈশ্বরের নির্ভরতা, মনোবল  আর বিশ্বাস।

একান্ত নিঃস্ব অবস্থায় ১৯৫০ সালে তাঁর সেবার জন্য  কলকাতায় স্থাপিত করেন 'মিশনারি অব চ্যারিটি'। ওই বছরেই তিনি কালিঘাটে নির্মল হৃদয় আশ্রম প্রতিষ্টা করেন।

নির্মল হৃদয় আশ্রম

তাঁরই প্রচেষ্টায় হাওরায় স্থাপন করলেন  কুষ্টরোগীদের আশ্রম। এর পরেও তিনি  বিভিন্ন জায়গায় বহু স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, উদ্ধারাশ্রম প্রতিষ্টা করেন। ১৯৭৮ সালে রোমের  কর্তৃপক্ষর অনুমতি নিয়ে আশ্রমের বাইরে থেকেও আর্ত মানুষের সেবায় লেগে পরলেন। সারা বিশ্বে তাঁর কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৫-৬৯ সালের মধ্যে ভেনেজুয়েলা, কলম্বো, তানজানিয়া, রোম, অস্ট্রেলিয়া, জর্ডন, নিউ ইয়র্ক প্রভৃতি জায়গায় গড়ে ওঠে 'মিশনারি অব চ্যারিটি'।চিরন্তনী জননীর রূপ প্রত্যক্ষ করে সারা বিশ্বের মানুষ  ধন্য হয়। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে করুণাময়ী  জননী মাদার টেরেসার নাম।ভারতের বাইরে তাঁর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

তাঁর মহৎ কীর্তির বিভিন্ন স্বীকৃতিএল দেশ দেশান্তর  হতে। ১৯৯৭ সালে ৫ই সেপ্টেম্বর  এই বিশ্ব জননী চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হলেও আমাদের কাছে তিনি অমর হয়েই থাকবেন।

২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে 'সন্ত' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি ভারতের  'কলকাতার সন্ত টেরিজা' হিসেবে আখ্যায়িত হন।

16 August 2021

১৬ই আগষ্ট ২০২১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের ১৩৫ তম প্রয়াণ দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রামকৃষ্ণ পরমহংস

ভক্তিমতী রাণী রাসমণিও নেই, অনুগত সেবক মথুর বাবুও নেই। এখনকার কর্তাদের জমিদারি  মেজাজ,  দক্ষিণেশ্বর মন্দির নিয়ে তারা বিশেষ  মাথা ঘামান না। রামকৃষ্ণ অসুস্থ  হয়ে পড়লেও খোঁজখবর নিলেন না কর্তারা। দিন দিন ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সারাদিন ধরে মানুষ আসে,তারা দর্শন চায়, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। কথা বলতে বলতে গান আসে, এক সময় ভাবাবেশে মূর্ছা যান। ইদানীং রামকৃষ্ণ পরমহংসের শরীর কৃশ হয়ে আসছে, মাঝেমধ্যে কাশির দমক আসে, তখন খুবই দুর্বলতা ও যন্ত্রণা বোধ করেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের অবস্থাপন্ন ভক্তরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ডাক্তারদের ওষুধে কাজ হয় না। ব্যাথা ক্রমশই বাড়ছে। একদিন পরমহংসকে গাড়িতে করে তালতলায় এনে বিখ্যাত  ডাক্তার দূর্গাচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায়কে দেখানো হয়। এই দুর্বল শরীরে তাঁকে বারবার  কলকাতায় আনা যায় না, আর ব্যস্ত ডাক্তারও দক্ষিণেশ্বরে যেতে চাইবেন  না।দক্ষিণেশ্বরের ঘরটিও স্বাস্থ্যকর  নয়।স্যাঁতসেঁতে। অবিরাম গঙ্গার জলো হাওয়া আসে।প্রাতঃকৃত্য সারবার জন্য তাঁকে অনেকটা দূরে যেতে হয়, তাতে তাঁর এখন কষ্ট হয়।

রামকৃষ্ণের উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য ভক্তরা তাঁকে কলকাতায় এনে রাখবেন ঠিক করলেন। বাগবাজারে গঙ্গার ধারে বাড়ি ভাড়া নেওয়া  হল। এক সকালবেলায় দক্ষিণেশ্বর ছেড়ে বাগবাজারের ভাড়া বাড়িতে গেলেন। গঙ্গার ধারেই বেশ নিরিবিলি পরিবেশে বাড়ি রামকৃষ্ণের বাড়ি পছন্দ হল না।  পরিশেষে রামকান্ত বসু স্ট্রিটে রামকৃষ্ণের সংসারী ভক্তদের অগ্রগণ্য  বলরাম বসুর বাড়ি রামকৃষ্ণের থাকার ব্যবস্থা হল। এলোপ্যাথিক ওষুধ তাঁর সহ্য হয় না, তাই নাম করা হোমিওপ্যাথ প্রতাপচন্দ্র মজুমদারকে ডাকা হয়েছে। তাঁর ওষুধে সাময়িক ভাবে ব্যাথার নিবৃতি হয় কিন্তু মূল রোগ বেড়েই চলেছে। এখন কাশির সাথে রক্ত পড়ে, শক্ত কিছুই খেতে পারেন না রামকৃষ্ণ। নানান চিকিৎসকেরঅভিমত  শুনে বোঝা যাচ্ছে সহজ রোগ এটা না।প্রখ্যাত কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সহ একদল কবিরাজ    রামকৃষ্ণকে দেখলেন। রোগের উপসর্গ শুনে ও রামকৃষ্ণের গলা পরীক্ষা করে গঙ্গাপ্রসাদ ভক্তদের  বললেন এ রোগের নাম রোহিণী,  ইংরেজ ডাক্তাররা যাকে বলে ক্যান্সার যার চিকিৎসা তাদের সাধ্যের অতীত। এই শ্যাম পুকুরের বাড়িতেই রামকৃষ্ণের শিষ্য মন্ডলি আস্তে আস্তে জমা হতে থাকল। অনেক ডাক্তারই তো দেখানো হচ্ছে, একবার মহেন্দ্রলাল সরকারকে ডাকার কথা ওঠে।  ধন্বন্তরি বলে তাঁর নাম রটেছে। প্রতাপ মজুমদারেরও সেই মত। সেই মত মহেন্দ্রলাল সরকারকে ডাকা হল। শ্রী  রামকৃষ্ণের শারীরিক  অবস্থার অবনতি হচ্ছে দিন দিন। একনাগারে কাশি ও রক্তপাত। কোন খাবারই গলা দিয়ে নামতে চায় না।
ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার পরামর্শ  দিলেন যে কলকাতার  দূষিত  আবহাওয়ায় রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। রামকৃষ্ণ চিরদিন খোলা মেলা জায়গায় থেকেছেন। সেই জন্য রামকৃষ্ণকে স্বাস্থ্যকর খোলা মেলা জায়গায় রাখা দরকার।রামকৃষ্ণের দক্ষিণেশ্বরের সে ঘরটির প্রতি এখন আর কোনো  টান নেই। ভক্তরা ঠিক করল  কলকাতার বাইরে কোথাও একটা বাড়ি ভাড়া নিতে হবে।অনেক  অনুসন্ধানের পর  কাছাকাছির মধ্যে  বাগবাজারের খাল পেরিয়ে বরানগরের পথে কাশীপুরে একটি উদ্যান বাটি মাসিক আশি টাকায় ভাড়া পাওয়া গেল । এগারো বিঘার বেশী জমির মাঝখানে দোতলা বাড়ি, চারিদিক পাঁচিল  দিয়ে ঘেরা, ভেতরে দুটি পুকুর  ও নানারকম  ফুল ফলের বাগান। কাশীপুরের বাড়িতে যেতে রামকৃষ্ণ সন্মত হয়েছেন। অঘ্রান মাসের শুক্লাপঞ্চমীর দিনে দুটো ঘোড়ার গাড়িতে কাশীপুরের দিকে যাত্রা শুরু হল। একটা গাড়িতে রামকৃষ্ণ  ও সারদামণি আর নরেন। অন্য গাড়িতে  কয়েক জন ভক্ত।বাড়িটির দোতালার ঘরে রামকৃষ্ণর  থাকার ব্যবস্থা  করা হয়। নিচের বড় হল ঘরটা বসার জায়গা।  তার পাশের ঘরে থাকবে ভক্তরা। উত্তর দিকে কোনের ঘরটাতে থাকবেন সারদামণি। 
ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার জানতেন যে রামকৃষ্ণের ভক্তরা তাঁর ওষুধের ওপরে পুরোটা  ভরসা না করে এলোপ্যাথিক. বায়োকেমিক,  কবিরাজি  ইত্যাদি কোনো কিছুই বাকি রাখেনি।  সারদামণি তারকেশ্বরে হত্যে দিয়েও এসেছেন। মহেন্দ্রলাল আপত্তি করেননি। এ রকম হলে সাধারণত  বড় ডাক্তাররা রুগির দায়িত্ব নিতে চান না। কিন্তু মহেন্দ্রলালের অহংবোধ বাধার সৃষ্টি করেননি।

না ডাক পেলেও মহেন্দ্রলাল নিজে থেকেই কাশীপুরে  চলে যেতেন।অবশেষে সমস্ত চেষ্টা  ব্যর্থ করে ১৮৮৬ সালের ১৬ই অগষ্ট বেলা সাড়ে এগারোটায় তাঁর প্রাণবায়ু বহির্গত হয়। বিকালে কাশীপুরের শ্মশানে তাঁর শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়।

11 August 2021

১১ই আগষ্ট ক্ষুদিরাম বসুর ১১৩ তম প্রয়াণ দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

ক্ষুদিরাম বসু






শহিদ ক্ষুদিরামের মৃত্যুর পর বাংলায় যে গান 'এক বার বিদায় দে মা ঘুরে আসি' রচিত হয়ে ছিল সেই গান আজও পুরানো হয়নি। বাংলার পথে প্রান্তরে ওই গানের সুর আজও আমাদের বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।  ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সদ্য তরুণ ক্ষুদিরাম বসু। ১৯০৮ সালের ১১ই আগষ্ট মজফ্ফরপুরে সকালে ক্ষুদিরামের  ফাঁসি হয়।

বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বিতীয়  শহিদ হলেন ক্ষুদিরাম বসু। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে দেশকে মুক্ত করার  জন্য যত আন্দোলন  হয়েছে তাতে মেদিনীপুরের নাম পুরোভাগে। এই মেদিনীপুর জেলার হবিবপুরে তাঁর ১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর  জন্ম হয়।

ক্ষুদিরামের পূর্বে তাঁর দুটি ভাই মারা যায়। তাই সেকালের প্রথা অনুসারে তাঁর জ্যেষ্ঠা  ভগিনী অপরূপা দেবীর কাছে মুষ্ঠি ক্ষুদের বিনিময়ে  ক্ষুদিরাম কে বিক্রয় করা হয়। এই জন্যই তাঁর নাম হয় ক্ষুদিরাম।

শৈশবে ক্ষুদিরাম ছিলেন অত্যন্ত দুরন্ত। পড়াশুনার থেকে খেলাধুলোয় অগ্রহ বেশি ছিল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে যখন  অষ্টম শ্রেণিতে উঠেন তখন  বৈপ্লবিক অন্দোলনে সারা বাংলা  চঞ্চল হয়ে ওঠে।  মেদিনীপুরও জেগে ওঠে। ক্ষুদিরাম বিদ্যালয়ছেড়ে মত্ত হলেন সেই আন্দোলনে।

সে সময় মেদিনীপুরের গুপ্ত সমিতির নায়ক ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। স্বদেশি অন্দোলন উপলক্ষে ১৯০৫ সালে মেদিনীপুরে সর্বপ্রথম ১০ হাজার লোকের যে মিছিল হয় তার অগ্রভাগে ছিলেন ক্ষুদিরাম। এসময় সমস্ত সভা সমিতিতে ক্ষুদিরাম যোগ দিতেন। ১৯০৬ সালে মেদিনীপুরের কৃষিপ্রদর্শনীতে সত্যেন্দ্রনাথ রচিত 'সোনার বাংলা' নামক প্রচার পত্র বিলি করে ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। সত্যেন্দ্রনাথ অবশ্য মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ক্ষুদিরাকে মুক্ত করেন।১৯০৮ সালে এপ্রিল  মাসে কলকাতার বৈপ্লবীচক্রে মজফ্ফরপুরে কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা গৃহিত হয়। বিভিন্ন  হত্যাকার্যে অংশগ্রহনকারী প্রফুল্ল চাকীর সহযোগী হিসেবে মেদিনীপুর গুপ্ত সমিতি ক্ষুদিরামকে নির্বাচিত করে।

৩০ শে এপ্রিল  তাঁরা কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা ছুড়লে মি.কেনেডি ও তার পত্নী নিহত হন। ওই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিল না।

ঘটনার পর দুজন পরস্পরের বিপরীত দিকে যাত্রা করেন। ১লা মে ক্ষুদিরাম  উইনী ষ্টেশনের কাছে পুলিশের হাতে ধরা পরেন।বিচারে ক্ষুদিরামের প্রাণদন্ডের আদেশ হয়।

হাইকোর্টে আপিল করা হলেও মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল থাকে। ওই বছর ১১ই অগষ্ট মজফ্ফরপুরে সকাল ছয়টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। প্রফুল্ল চিত্তে ও দৃঢ় পদক্ষেপে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হন ক্ষুদিরাম। মাত্র ১৯ বছরের কিশোর ছিলেন এরূপ কঠিন ধাতুতে গড়া।

04 August 2021

ঋষি অরবিন্দের ১৪৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ঋষি অরবিন্দ

ঋষি অরবিন্দের ১৪৯ তম জন্ম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি 

অরবিন্দ ঘোষ ১৮৭২ সালের ১৫ই আগষ্ট কলকাতার থিয়েটার রোডের এক  সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কৃষ্ণধন ছিলেন বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বিলেত ফেরত চিকিৎসক। মাতা স্বর্ণলতা ছিলেন কলকাতার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব রাজনারায়ণ বসুর জ্যেষ্ঠা কন্যা। অরবিন্দের  পিতা পাশ্চাত্য শিক্ষা- দীক্ষা রীতি- নীতির অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন।  অরবিন্দের বয়স যখন ৫ বছর তখন অরবিন্দ দার্জিলিংয়ে সাহেবদের লরেটো কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হন।অত্যন্ত শান্ত, মিতভাষী স্বভাবের ছিলেন বলেই অরবিন্দ শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। তাঁর ইংরাজি উচ্চারণ খুব শুদ্ধ ছিল। মাত্র দশ বছর বয়সেই ইংরাজি ও ল্যাটিন  ভাষায় সুন্দর  কবিতা লিখতে পারতেন।

অরবিন্দের বয়স যখন সাত বছর তখন তিনি ও তাঁর ভাই ইংল্যান্ডে পড়তে যান। অরবিন্দ প্রথমে ম্যাঞ্চেস্টারের এক স্কুলে  ভর্তি হন। কেম্ব্রিজ বিশ্যবিদ্যালয় থেকে ট্রাইপেজ নিয়ে বি,এ পাশ করেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেন। সে সময়  বরোদার মহারাজা ছিলেন লন্ডনে। তিনি অরবিন্দকে তাঁর রাজ্যের শিক্ষা বিভাগে ভালো বেতনে কাজ করার জন্য আহ্বান  জানান। 

বরোদায় চলে আসেন অরবিন্দ।  এই সময় তিনি সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শিক্ষা শুরু করেন। লেখক দীনেন্দ্রকুমার রায়ের কাছে তিনি বাংলা ভাষা শেখেন।

বরোদায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদে অধ্যাপকের চাকরি নেন। স্বাধীনতার বাণী ছড়িয়ে দেবার জন্য এই সময় তিনি বন্দেমাতরম নামে একটি ইংরাজি পত্রিকা বের করেন। ইংরেজ সরকার এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এর সঙ্গে চলে আলিপুর  বোমা মামলা, কিন্তু দুই ক্ষেত্রেইও অরবিন্দ মুক্তি পান। এর কিছুদিন  পরে অরবিন্দ জানতে পারেন যে ইংরেজ সরকার তাঁকে বরাবরের জন্য বন্দী  রাখার ব্যবস্থা  করছে। তখন ১৯১০ সালে তিনি চন্দননগর পরে ফরাসী উপনিবেশ পন্ডিচেরিতে যান এবং নতুন  জীবন  শুরু করেন। তিনি যোগ সাধনার মাধ্যমে মুক্তির পথের নিশানা তুলে ধরেন।

ভারতের সাধনা ও রাজনীতিতে বিশ্বাসী  হয়ে অনেক বিদেশী  মহিলা ভারতে এসে মিলে গেছেন। ভগিনী নিবেদিতা,  মীরা রিচার্ড, অ্যানি  বেশান্ত, মাদার টেরেসা প্রভৃতি কয়েকজনের নাম উল্লেখ  করলেই একথার সত্যতা প্রমাণিত  হয়।

১৯১৪ সালে মীরা রিচার্ড নামে এক বিপ্লবী ফরাসী মহিলা অরবিন্দের  আশ্রমে আসেন এবং তাঁর কাছে দীক্ষা নেন। তখন মীরা রিচার্ডের নাম হয় শ্রীমা।

পন্ডিচেরিতে থাকাকালীন  তিনি যে সব অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন তাঁর মধ্যে The Mother, এবং The life Divine অন্যতম।

অহ্নিযুগের মহানায়ক শ্রী অরবিন্দ  ঘোষ পরবর্তী জীবনে আধ্যাত্মিক সাধনায় সিদ্ধি করে হয়ে ছিলেন ঋষি অরবিন্দ। ১৯৫০ সালের ৫ই ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।