01 September 2021

২রা সেপ্টেম্বর, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ৭৫তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

প্রমথ চৌধুরী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে যে অবদান রেখে গেছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। তিনি রবীন্দ্র যুগে আবির্ভূত হলেও তাঁর সাহিত্য আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। 

পাবনার বিখ্যাত চৌধুরী বংশের সন্তান প্রমথ চৌধুরী কেবল কুলে-মানেই অভিজাত ছিলেন না, মনের দিক থেকেও ছিলেন উদার। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, প্রমথ চৌধুরীর লেখা ‘প্যারাডক্সে আক্রান্ত’; অর্থাৎ যে উক্তি আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও সত্যবর্জিত নয়। কিন্তু সত্য হলো—তাঁর লেখার ধরন খুবই বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুক্তিনিষ্ঠ। পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা এবং বয়োকনিষ্ঠ্য হয়েও গদ্য রচনারীতিতে রবী ঠাকুরকে প্রভাবিত করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী, যা কবিগুরু নিজেই স্বীকার করেছিলেন। তিনি খুব উদার মানসিকতা থেকে বলেছিলেন, তাঁর গল্প ও সনেট বাংলা সাহিত্যে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ ও ভাষাভঙ্গি আর ভাবনার ধারা পরবর্তী একটি গোষ্ঠীর ওপর বিশেষ ক্রিয়াশীল হয়েছে। বাংলায় কথ্যরীতি তাঁরই হাতে সাহিত্যিক স্বীকৃতি লাভ করে। রবীন্দ্রনাথের জোর সমর্থন ও ব্যক্তিগত চেষ্টায় সে রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বস্তুত, প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই এ দুজনের প্রচেষ্টাতে এই কথ্যরীতির পূর্ণতম প্রতিষ্ঠা ঘটে।

তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল বীরবল।

তাঁর রচনাসমগ্রগুলি হল

তাঁর প্রথম প্রবন্ধ জয়দেব (প্রকাশিত হয় সাধনা পত্রিকায় ১৮৯৩ সালে)

তেল-নুন-লকড়ী (১৯০৬)

বীরবলের হালখাতা (১৯১৬)

নানাকথা (১৯১৯)

আমাদের শিক্ষা (১৯২০)

রায়তের কথা (১৯১৯) ইত্যাদি 

গল্পগ্রন্থসম্পাদনা

চার-ইয়ারী কথা (১৯১৬)

এই গল্পগ্রন্থে চার বন্ধুর প্রেমের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রেমই অভিশপ্ত। নায়িকা চারজন ইউরোপীয়। প্রথম নায়িকা উন্মাদ, দ্বিতীয় জন চোর, তৃতীয় জন প্রতারক এবং চতুর্থ জন নায়িকা। মৃত্যুর পরে তার ভালোবাসা ব্যক্ত করেছে। ভাষার চাতুর্য, পরিহাসপ্রিয়তা এবং সুক্ষ্ণ ব্যঙ্গ উদ্ভাসিত এই কাহিনি বাংলা ভাবালু প্রেম কাহিনির প্রতিবাদী।

আহুতি (১৯১৯)

নীললোহিত (১৯৪১) ইত্যাদি 

"অনুকথা সপ্তক"

"ঘোষালে ত্রিকথা"

বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত দিকপাল ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষার প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

No comments:

Post a Comment