21 July 2021

যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি


স্বাধীনতার দাবিতে বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন শতকে ভারতের আকাশ বাতাস মুুখরিত হয়ে ওঠে।ভারতের শ্রেষ্ঠ  সন্তান
 দের যৌথ প্রচেষ্টায় শৃঙ্খলিত ভারতের মুক্তি  ও স্বাধীনতা আন্দোলন সে যুগে তীব্র  আকার ধারণ করেছিল। ওই সমস্ত শ্রেষ্ঠ  সন্তানদের একজন হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। ১৮৮৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ধরবা গ্রামে জন্মগ্রহণ  করেন।

দক্ষিণ কলকাতার একটি খেলার  মাঠ দেশপ্রিয় পার্ক বা উদ্যানটির নামকরণ হয় জাতীয়তাবাদী ব্যারিস্টার  যতীন্দ্রমোহন  সেনগুপ্তর নামে।

দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ১৯০২ সালে হেয়ার স্কুল হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে বিলেতে যান উচ্চশিক্ষার্থে। ১৯০৮ এ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.এ. এবং ১৯০৯ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। ওখানে তার আলাপ ও প্রনয় হয় ইংরেজ মহিলা নেলী গ্রে'র সাথে। যিনি যতীন্দ্রমোহনকে ১৯০৯ সালে বিবাহ করে নেলী সেনগুপ্তা হন। নেলী সেনগুপ্তা নিজেও অসামান্য সমাজকর্মী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে ভারতে সমুজ্জ্বল হয়েছেন।যতীন্দ্রমোহন ব্যারিস্টারি পাশ করে কলকাতায় আইন ব্যবসা শুরু  করেন।

যতীন্দ্রমোহন ১৯১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন এবং আইনজীবী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। মাঝে কিছুদিন রিপন কলেজে (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইনের শিক্ষকতা করেন।অগ্নিযুগের বহু বিপ্লবীকে নিশ্চিত ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচিয়ে এনেছেন তার অসামান্য দক্ষতায়। ১৯২৩ সালে দ্বিতীয় আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় তার কৃতিত্বপূর্ণ সওয়ালে সাতজন বিপ্লবী মুক্ত হন। স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পক্ষ নিয়ে আদালতে লড়াই করতেন। ভারতবর্ষ থেকে বার্মাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে যতীন্দ্রমোহন রেঙ্গুন যান। সেখানে জনসমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। যতীন্দ্রমোহন ১৯২২ সালে জাতীয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। পরবর্তী সময়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠা করলে যতীন্দ্রমোহন স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর (১৯২৫) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত স্বরাজ পার্টির বিশেষ অধিবেশনে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি মোট ৫ বার কলকাতার মেয়র হন।

১৯৩০ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের আস্থায়ী  সভাপতি  ছিলেন। ওই বছর  ২৫শে অক্টোবর   জালিয়ানওয়ালাবাগে রাজদ্রোহমূলক বক্তৃতা দেওয়ার পরে গ্রেপ্তার  হন এবং মুক্তি পেয়ে বিলেতে যান। চট্টগ্রামে পুলিশি অত্যাচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিলেতে গিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করেন। তার দেওয়া তথ্য, ছবি ইত্যাদির ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার নেলসন অপসারিত হন। এছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্রেগ অবসর পুলিশ সুপার স্যুটার আত্মহত্যা করেন। ফলত সরকারের রোষানল তার ওপর পড়ে। কমিশনার টেগার্ট তখন বিলেতে ছিলেন। তিনি সরকারকে জানান যতীন্দ্রমোহন অহিংসবাদী নন। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগকারী ও মদতদাতা। পুলিশ দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বোম্বাই বন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করে যারবেদা জেল ও পরে দার্জিলিং এ অন্তরীণ করে পাঠায়। অসুস্থ হয়ে পড়লেও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেয়নি পুলিশ।১৯৩৩ সালের ২২শে জূলাই কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

No comments:

Post a Comment