11 April 2020

আগামী কাল রবিবার, ২৯শে চৈত্র ১৪২৬, ১২ই এপ্রিল, ২০২০, বারো নীল পুজো বা নীলের উপবাস

আগামী কাল রবিবার, ২৯শে চৈত্র ১৪২৬, ১২ই এপ্রিল, ২০২০, বারো নীল পুজো বা নীলের উপবাস।বাঙালির বারোমাসে তেরো পার্বণ । একটা পুজো শেষ হতে না হতেই আরও একটা পুজো চলে আসে । তবে বাঙালির এমন অনেক উ‍ৎসব রয়েছে, যেগুলির হয়তো নাম ডাক নেই তেমন ৷ যেমন অশোক ষষ্ঠী ব্রত, আদর সিংহাসন ব্রত, আদা-হলুদ ব্রত, ইতু ব্রত, কালকুমারি পূজা ব্রত, কুলুই পূজা ব্রত, তুষ তুলসী ব্রত, দশ পুতুল ব্রত, পুন্যিপুকুর ব্রত, বানব্রতের উৎসব ব্রত, মাঘ মন্ডল ব্রত, মেছেনী ব্রত, মেঘারানীর ব্রত, যমপুকুর ব্রত, ষষ্ঠী ব্রত, সবুজ পাতার ব্রত, সাবিত্রী ব্রত, সেঁজুতি ব্রত, হরিচরণ ব্রত, হেলেনা ব্রত, অরন্য ষষ্ঠী ব্রত, নীল ষষ্ঠী ব্রত, পাটাই ষষ্ঠী ব্রত, দুর্গা ষষ্ঠী ব্রত, রাধাষ্ঠমী ব্রত, জন্মাষ্ঠমী ব্রত, অক্ষয় তৃতীয়া ব্রত, জিতাষ্টমী ব্রত, পৃথিবী ব্রত, চাঁপাচন্দন ব্রত, নখ ছুটের ব্রত, সুবচনী ব্রত, বসন্তবুড়ী ব্রত, মাকাল ব্রত, ওলাই চন্ডী ব্রত, মঙ্গল চন্ডী ব্রত, নাগপঞ্চমী ব্রত, মধুসংক্রান্তি ব্রত, বিবিঞ্চি ব্রত ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে বাঙালির বারোমাস্যা এই সব পুজো কিংবা ব্রত ছাড়া কিন্তু অসম্পূর্ণ ৷ গ্রাম বাংলায় বহুল প্রচলনে থাকলেও কালের নিয়মে শহরের বুকে কৌলীন্য হারিয়েছে তারা ৷ এমনই এক উৎসব হল-‘নীল পুজো’ বা ‘নীল ষষ্ঠী’ ৷

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পালন করা হয় নীল ষষ্ঠী। এই সময় মাটি দিয়ে শোয়ানো অবস্থায় একটি দেব মূর্তি তৈরী করা হয়। যে মূর্তিকে শিবের মূর্তি বলা হয়। এটি অনেকটাই অমসৃণ থাকে। ঠিক শিবের আদল বোঝা যায় না। নরম মাটি দিয়ে তৈরী এই মূর্তির গায়ে খেজুর দিয়ে আবরণ দেওয়া হয়। চারি পাশে খেজুর পাতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। কোথাও কোথাও মাটির মূর্তির বদলে একটি মাটির ঢিবি তৈরী করা হয়। এর পর ফুল-বেল পাতা দিয়ে শুরু হয় নীল পুজো। একই সঙ্গে চলে বালা গান। এই দিন বাড়ির মহিলারা সারাদিন ধরে উপোস করে থাকেন। বিকেলে পুজো দিয়ে তবেই কিছু মুখে দেন তাঁরা। সাধারণত পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনার্থে নীলের উপবাস করে থাকেন।

পুজোর রীতি

চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন সারা দিন উপোস করার পর সন্ধ্যাবেলা শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবকে প্রণাম করে গর্ভবতী মহিলারা বা মায়েরা। অনেকে নির্জলা থেকেও ব্রত পালন করেন। সন্ধেয় প্রদীপ জ্বালিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালার পরেই ব্রত ভঙ্গ হয়। কথায় বলে, নীলের ব্রত নিষ্ঠামতো পালন করলে কোনওদিন সন্তানের অমঙ্গল হয় না। সন্তান দীর্ঘজীবন লাভ করে।
লকডাউনের নিয়ম বা নির্দেশ মেনে পুজো করুন। সবাই ভালো থাকুন।

নীল পুজোর ব্রত কথা
-----------------
এক বামুন আর বামনীর পাঁচছেলে আর দুটি মেয়ে। তারা খুব পুজোআচ্চা করত। কিন্তু এত পুজো, বারব্রত করেও তাদের সব ছেলেমেয়েগুলো একে একে মারা গেল। তখন বামনীর ঠাকুরদেবতায় বিশ্বাস চলে গেল। তাদের আর সেই জায়গায় থাকতেও ভালো লাগল না। বামুন-বামনী ঠিক করল সব ছেড়েছুড়ে তারা মনের দুঃখে কাশীবাসী হবে। দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করে অন্নপূর্ণার পুজো করে মণিকর্ণিকার ঘাটে বসে আছে, এমন সময় মা-ষষ্ঠী এক বুড়ি বামনীর বেশে এসে বললে "কি ভাবছ গো মা?"
বামনী বললে "আমার সব ছেলেমেয়েদের হারিয়েছি। এত পুজোআচ্চা সব বিফলে গেল আমাদের। সব অদৃষ্ট। ঠাকুর দেবতা বলে কিছ্ছু নেই।"
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন "বারব্রত নিষ্ফল হয়না মা, ধর্মকর্ম যাই কর ঈশ্বরে বিশ্বাস চাই। তুমি মা-ষষ্ঠীকে মানো? তাঁর পুজো করেছ কখনো? তিনি সন্তানদের পালন করেন।
বামনী বললে "আমি এযাবতকাল সব ষষ্ঠী করে আসছি কিন্তু তবুও আমার ছেলেরা র‌ইল না।
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন, "তুমি নীলষষ্ঠীর পুজো করেছ কখনো? চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে শিবের পুজো করবে। শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে জল খাবে। সন্তানদের মঙ্গলকামনা করবে" -- বামনী সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পুনরায় মাতৃত্ব লাভ করল।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment