13 April 2020

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড ও রবীন্দ্রনাথ এবং সর্দার উধম সিং

আজ থেকে ১০১ বছর আগের সেই আভিশপ্ত দিন।ইংরেজ শাসকের দখল করে বসে থাকা ভারতীয় উপমহাদেশের সাম্রাজ্য হারানোর ভয়, উপমহাদেশের শোষিত জনতার শক্তি কবে একত্রিত হয়ে তাঁদের গদিছাড়া করে, সেই ভয়। যথারীতি এই ভয় কমাতে সে সময় মরিয়া হয়ে উঠল ইংরেজ প্রশাসন। এ সময় ইংরেজদের সুবিধা করে দিতে জনতার ওপর অত্যাচার ও ভয়ানক নির্মমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দিয়ে ১৯১৯ সালের ১০ মার্চ বলবৎ করা হয় কুখ্যাত ‘রাওলাট অ্যাক্ট’। এমনই এক সময়ে নানা ঘটনা পরিক্রমায় পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল ডাকা হলো এক প্রতিবাদসভা। স্থান নগরীর বিরাট জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যান। সেদিন আবার ছিল পাঞ্জাবের অন্যতম বৃহৎ উৎসব বৈশাখীরও দিন। আইনের ছলাকলা দেখিয়ে তখন পাঞ্জাবে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ হলেও সাতসকালেই উদ্যান ভরে গেল উৎসাহী  মানুষে। ইংরেজ সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত জেনারেল রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে মুহূর্তেই গুলি ছুটল  জনসমষ্টির দিকে। সরকারি হিসাবে মারা গেল ৩৭৯ জন কিন্তু ধারণা করা হয়, আসল সংখ্যা এর থেকেও ঢের ঢের বেশি।এর পেছনে পাঞ্জাবের দুঃশাসক গর্ভনর মাইকেল ও’ডায়ারের ভূমিকাও ছিল নৃশংস।উৎসব-আনন্দের বৈশাখী মুহূর্তেই পরিণত হলো ‘খুনি বৈশাখীতে’।

পাঞ্জাবজুড়ে জারি করা হয়েছিল জরুরি অবস্থা।  এমন এক বর্বর হত্যাযজ্ঞের খবর উপমহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে তখনই পারল না।আর সংবাদপত্রের ওপর ইংরেজ সরকারের নানা সেন্সরশিপ তো বহাল ছিলই। পাঞ্জাব থেকে বহু দূরের বঙ্গদেশে জালিয়ানওয়ালাবাগের খবর এল তাই দেরিতে। হত্যালীলার কিছুদিন পর নানা ছায়া-আবছায়াময় বাস্তব ও গুজবে মেশানো ছিন্নভিন্ন আকারে প্রকাশ্য হতে শুরু করল। কিন্তু তা থেকে তখনো পরিস্থিতির ভয়াবহতা পুরোটা আঁচ করা সম্ভব ছিল না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কানেও যথারীতি এ খবর সম্পূর্ণ আকারে আসছিল না। ব্রিটিশ ধর্মযাজক ও শান্তিনিকেতনের শিক্ষক সি এফ অ্যান্ডরুজ তখন শান্তিনিকেতন থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন। তিনি একাধারে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন বটে। দিল্লি ছাড়াও সিমলা ঘুরে এসে তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগের ন্যক্কারজনক ঘটনা সম্পর্কে কিছু খবর পেয়েছিলেন। ১৯১৯ সালের পয়লা মে লেখা এক চিঠিতে তিনি রবীন্দ্রনাথকে জানান, ‘অসহায় গ্রামবাসীর ওপর এয়ারপ্লেন বোমা ফেলছে আর কেবল লাঠি হাতে থাকা জনসমাবেশে মেশিনগান গুলি ছোটাচ্ছে।’ চিঠি গোয়েন্দাদের হাতে পড়তে পারে, এমন শঙ্কায় অ্যান্ডরুজ আর বেশি কিছু লিখতে পারেননি। অ্যান্ডরুজ এরপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অমৃতসর যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাঁকে ট্রেনেই গ্রেপ্তার করে দিল্লি পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনা পরে জেনে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত মর্মাহত হন, ওই সময়ের দুশ্চিন্তা ও রাগের প্রকাশ দেখা যায় ২২ মে ১৯১৯ সালে কিশোরী রানু অধিকারীকে লেখা এক চিঠিতে: ‘তোমরা তো পাঞ্জাবে আছ, পাঞ্জাবের দুঃখের খবর বোধ হয় পাও। এই দুঃখের তাপ আমার বুকের পাঁজর পুড়িয়ে দিলে।...’ ২২ মে তারিখেই রবীন্দ্রনাথ আসেন কলকাতায়। মনের মধ্যে ক্ষোভ আগুনের মতো জ্বলছে, তা সত্ত্বেও বহিরঙ্গে নিজের কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটা সময়ের পর আর পারলেন না। কথাবার্তা কমে যায় ও লেখালেখি বন্ধ করে দেন। মুখে হাসি নেই। শরীরও ক্ষোভে-রাগে খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় তাঁর মাথায় একটি প্রতিবাদের পরিকল্পনা আসে। তখন পাঞ্জাবে অন্য এলাকার বাসিন্দাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ব্রিটিশ সরকার। রবীন্দ্রনাথের মনে হয়, মহাত্মা গান্ধী আর তিনি মিলে প্রথমে দিল্লি গিয়ে তারপর যদি পাঞ্জাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তাহলে একটা বড় প্রতিবাদ হয়। যদি তাঁদের ইংরেজ প্রশাসন গ্রেপ্তার করেও, তাতে প্রতিবাদের ও জনমনের প্রতিক্রিয়ার স্ফুলিঙ্গ আরও শক্তিশালী হবে। অতঃপর এই প্রস্তাবে গান্ধী রাজি হবেন কি না, তা জানতে তাঁর কাছে পাঠালেন সি এফ অ্যান্ডরুজকে। অ্যান্ডরুজকে গান্ধী ‘না’ বলে দেন এই বলে, ‘আমি এখনই সরকারকে বিব্রত করতে চাইছি না।’ ফিরে এসে অ্যান্ডরুজ যখন এ কথা রবীন্দ্রনাথকে জানালেন, কবি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তবে হতোদ্যম হননি। গান্ধীকে যখন সঙ্গে পেলেন না, তখন স্বভাষী রাজনীতিবিদ চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁর পাশে দাঁড়াবেন—এমনটা তিনি ভেবেছিলেন। তাই ২৯ মে বিকেলবেলা নিজেই যান তাঁর কাছে। কিন্তু গান্ধীর মতো তিনিও কবিকে হতাশ করেন। চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছিল, সেই বয়ান তিনি পরে জানান প্রশান্তকুমার মহলানবিশকে এভাবে: ‘মহাত্মাজী রাজি হলেন না পাঞ্জাবে যেতে। কাল তাই নিজেই গিয়েছিলুম চিত্তরঞ্জনের কাছে। বললুম যে, এই সময় সমস্ত দেশ মুখ বন্ধ করে থাকবে তা অসহ্য। তোমরা প্রতিবাদসভা ডাকো।’ এ কথা শুনে চিত্তরঞ্জন দাশ সভা করার দায় ঘাড়ে নিতে চাননি। উল্টো রবীন্দ্রনাথ একাই একটা সভায় প্রতিবাদী বক্তব্য রাখবেন—এমন প্রস্তাব দেন তিনি। এ কথা স্বভাবতই রবীন্দ্রনাথের মনঃপূত হয়নি। তাঁর মনে হয়েছিল, যদি একাই কিছু করতে হয়, তবে লোক ডেকে জড়ো করা কেন? অন্তরে বিপুল বেদনা ও রাগ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ওই দিনই সিদ্ধান্ত নেন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করে বড়লাটকে চিঠি লিখলেন।  প্রশান্তকুমার মহলানবিশ সে সময় ছিলেন কবির কাছেই। ওই সময় কবি তাঁকে বলেছিলেন, ‘এই সম্মানটা ওরা আমাকে দিয়েছিল। কাজে লেগে গেল। এটা ফিরিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ করে আমার কথাটা বলবার সুযোগ পেলুম।’ ভোর শেষে সকাল হলে অ্যান্ডরুজ এলেন চিঠিটা নিতে। সেই সময় ঘটেছিল আরেক কাণ্ড। রবীন্দ্রনাথের ক্রোধতপ্ত চিঠির ভাষা খানিক নরমসরম করা যায় নাকি, এমন প্রস্তাব ছিল অ্যান্ডরুজের। এ কথা শুনে রবীন্দ্রনাথ ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ইংরেজ সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত জেনারেল রেগিনাল্ড ডায়ারনাইটহুড পরিত্যাগের এ চিঠি গোটা বাংলা তো বটেই, দেশজুড়েই আলোড়ন তুলল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই, ওই রকম একক ও সাহসী প্রতিবাদের পরও রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশে নানা নিন্দা-মন্দ প্রচার হতে শুরু করে। যেমন, ৩ জুন তারিখে নায়ক নামের এক পত্রিকা সম্পাদকীয়তে লেখে, ‘রবীন্দ্রনাথ উপাধী বর্জ্জন করিয়া নিজের সুবিধা কি করিয়াছেন তাহা জানি না, দেশের ও জাতির যে কোন সুবিধা করতে পারেন নাই, তাহা বলিবই। আমরা তাঁহার কার্য্যরে সমর্থন করিতে পারিলাম না।’ স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীও একটি ব্যক্তিগত পত্রে রবীন্দ্রনাথের এই ‘জ্বলন্ত’ চিঠিকে ‘অকালপক্ক’ বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে চলতে থাকে আরেক খেলা, ইংরেজ কর্তৃপক্ষের তরফে কয়েকজন রবীন্দ্রনাথের উপাধি ফেরত নিতে অক্ষম বলে নিজেদের দাবি করে কিছু চিঠিপত্র কবির কাছে চালাচালি করেন। সম্ভবত এই ছলচাতুরির উদ্দেশ্য ছিল কবিকে বিভ্রান্ত করা। কিন্তু কবি নিজের অবস্থানে ঠিকই অটুট থাকেন। বস্তুত নামের সামনে থেকে ইংরেজি ‘স্যার’-এর লেজুড়টুকু মুছে ফেলতে পেরে তিনি অনেকটা শান্ত হতে পেরেছিলেন। মনের বোঝা নামিয়ে লেখালেখিতেও তিনি দ্রুত ফিরে আসতে পারেন নাইটহুড উপাধি ত্যাগের পরই।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাযজ্ঞের পর পরাধীন ভারতবর্ষের রাজনীতিবিদেরা যখন চুপচাপ থাকার পথ বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে নাইটহুড বর্জনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের একক প্রতিবাদ এই বর্বরতার দিকে বিশ্ববাসীর চোখ ফেরাতে পেরেছিল। তবে রবীন্দ্রনাথ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পাল্টা সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সপক্ষে ছিলেন না। তাই
মনে হয় জালিয়ানওয়ালাবাগের ২১ বছর পর ১৯৪০ সালের ১৩ মার্চ লন্ডনে হত্যাকাণ্ডের মূল দুই হোতার একজন মাইকেল ও’ডায়ারকে হত্যা করেছিলেন যে বিপ্লবী উধম সিং (পরে ইংরেজ সরকার দ্রুত তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলায়), তাঁর প্রতি রবীন্দ্রনাথ সহানুভূতি নিশ্চয়ই রাখতেন, কিন্তু প্রশংসা করতে পারতেন না।


৩১শে জুলাই ১৯৪০ সালে উধম সিং-এর ফাঁসি হয়।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর উধম সিং যিনি রাম মহম্মদ সিং আজাদ নামেও পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর দাদাকে অমৃতসরের সেন্ট্রাল খালসা অনাথআলয় পুটলিগড় তাদের কাছে নিয়ে আসেন। এখান থেকেই তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯১৮ সালে। ১৩ই এপ্রিল ১৯১৯ সাল, জালিয়নওয়ালা বাগে যখন জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে ব্রিটিশ পুলিশ নির্বিচারে নিরীহ মানুষের উপর গুলি বর্ষণ করেন তখন উধম সিং এবং তাঁর অনাথআলয়ের বন্ধুরা সেখানে আগত মানুষদের জল দিচ্ছিলেন। উদম সিং দেখেন যে শুধু গুলি চালিয়ে চলে যায়নি ব্রিটিশ পুলিশ, ফেরার পথে যে যে ভারতীয় তাদের নজরে এসেছে তাদের টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে খুন করেছিল তারা। অসংখ ভারতীয়ের মৃত্যু হয়। এ সবই উদম সিং নিজের চোখে দেখেছিলেন এবং সেখানে দাড়িয়ে তিনি এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। পাঞ্জাবের রাজ্যপাল মাইকেল ও'ডায়ার এই হত্যাকে সমর্থন করেন। উদম সিং মাইকেল ও'ডায়ারকে ভারতীয়দের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন এবং সেই মুহূর্ত থেকে তাঁর জীবনের এক মাত্র উদ্দেশ্য হয় মাইকেল ও'ডায়ার মৃত্যু। জানিয়নওয়ালা বাগের হত্যালীলা চালাবার পর ব্রিটিশ সরকার ডায়ারের পদোন্নতি করে তাঁকে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এর ফলে উধম সিং-কে ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হয়।

উধম সিং, ভগত সিং-এর বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন।  দেশে থেকে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করা সম্ভব হবে না দেখে কাশ্মীর থেকে জার্মানি হয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছে যান।

ইংল্যান্ডে পৌঁছে দিন মজুরের কাজ করে অল্প অল্প করে অর্থ যোগার করতে থাকেন বন্দুক এবং গুলি কেনার জন্য। ১০বছর আরও লেগে যায় এই অর্থ যোগার করতে। এবং অবশেষে সেই দিনটি চলে আসে যার জন্য উধম সিং ২০বছর ধরে অপেক্ষা করছিলেন। ১৩ই মার্চ ১৯৪০ সালে, ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশান এবং সেন্ট্রাল এশিয়ান সোসাইটির একটি যৌথ সভা হয় কাক্সটন হলে। মাইকেল ও'ডায়ার তা যোগ দিতে আসেন। উধম সিংও সেখানে পৌঁছে যান এবং মাইকেল ও'ডায়ারকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেন। ও'ডায়ারকে বাঁচাতে এলে কিছু ব্রিটিশ আহত হন। কিন্তু উধম সিং পর পর দুটি গুলি করে মাইকেল ও'ডায়ারকে সেখানেই ইহলোক থেকে পরলোকে পাঠিয়ে দেন। গুলি করার পর উধম সিং পালিয়ে না গিয়ে নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দেন। আহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং বলেন যে তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে জালিয়নওয়ালা বাগে করা অত্যাচারের শাস্তি  হিসাবে।

১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল রাওলাট আইন নামক কালাকানুনে পাঞ্জাবের দুই জনপ্রিয় জননেতা ডঃ সত্যপাল ও ডঃ সইফুদ্দিন কিচলুকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে জালিয়ানওয়ালাবাগে জনগন এক শান্তিপূর্ন সমাবেশে সমবেত হলে বৃটিশ সেনাপতি জেনারেল ও ডায়ার শুধুমাত্র নরহত্যার বিকৃত বাসনায় সম্মিলিত জনগণকে কোনো রকম সতর্ক না করেই গুলিবর্ষনের আদেশ দেন ৷ সরকারি হিসাব অনুসারে ৩৭৯ জন নিহত ও ১৫২৬ জন আহত হয়েছিল সেই হত্যাকাণ্ডে ৷ বেসরকারি হিসাবে হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশী ৷ এই ঘটনায় জেনারেল ও ডায়ার প্রকাশ্যেই অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন এবং যাঁরা কোনোভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁদের কোনোভাবে হত্যা করতে না পারার জন্য আক্ষেপও প্রকাশ করেন তিনি ৷
এই ঘটনা ভারতে বৃটিশ শাসনের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল, সন্দেহ নেই ৷ মুক্তিকামী জনগনের স্বাধীনতা আন্দোলন এক নতুন গতি পেয়েছিল এবং জাতীয় রাজনীতিতে বহু পট পরিবর্তনও ঘটে গিয়েছিল ৷ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য জেনারেল ও ডায়ার কে ভারত থেকে ইংল্যাণ্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বরাবরের মতো ৷
দূর থেকে সেই বীভৎস হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছিলেন ২০ বছর বয়সী পাঞ্জাবি যুবক উধম সিং ৷ সেই সময় তাঁর কোনো ক্ষমতাই ছিল না সেই হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করার ৷ ব্যক্তিগত জীবনে মার্ক্সবাদী কমিউনিজমের আদর্শে বিশ্বাসী সেই যুবকটি সেদিন থেকেই মানবতার ঘৃণ্য শত্রু জেনারেল ও ডায়ার কে অনুরূপভাবে হত্যা করে দেশবাসীর রক্তঋণ শোধ করার তীব্র বাসনা পোষন করতে থাকেন ৷ সেই বাসনা থেকেই ১৯৩৪ সালে পাড়ি জমান ইংল্যাণ্ডে এবং এই ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ লণ্ডনের ক্যাক্সটন হলে এক প্রকাশ্য জনসভায় গুলির পর গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেন মানবতার ঘৃণ্য শত্রু জেনারেল ও ডায়ারের দেহ ৷ উধম সিং এই মহৎ কর্মে ব্যবহার করেছিলেন সেই ধরনের রিভলবার ও কার্তুজ, যা জালিয়ানওলাবাগ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল ৷ এইভাবেই দেশবাসীর রক্তঋণ শোধ করেছিলেন ৪১ বছরের বীর সর্দার উধম সিং ৷ পরিনামে ৩১শে জুলাই ১৯৪০ সালে লণ্ডনের পেন্টনভেলি জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় এই মহান বিপ্লবীকে ৷

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।


No comments:

Post a Comment