12 December 2018

মেরি কমের ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক্সে সোনা জেতার চাবি কাঠি-

১৬ বছর আগে ২০০২ সালে প্রথম সোনা জিতেছিলেন মেরি। ৩৫ বছর বয়সে এসেও সোনা জিতে নিলেন ভারতের মেয়ে। মেরি কমের বিশ্বরেকর্ড। পুরুষ বক্সারকেও ছুঁয়ে ফেললেন।
নয়া দিল্লিতে কেডি যাদব স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের হান্না ওখোতাকে ৫-০ হারিয়ে দিলেন। ষষ্ঠবার বিশ্বখেতাব জিতে নিলেন ভারতের সোনার মেয়ে মেরি কম। কেটি টেলরকে টপকে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন মেরি। কিউবার পুরুষ বক্সার ফেলিক্স স্যাভনের সঙ্গেও জড়িয়ে গেল মেরি কমের নাম। স্যাভন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৬টি সোনা জেতেন। মেরি কমও তাই। এখন তাঁর বয়স ৩৫। বয়স যে একটা সংখ্যা সেটাই প্রমাণ করে দিলেন মেরি কম।
২০০২ সালে প্রথম বারের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ২০১০ সালের মধ্যে আরও চার বার। বিশ্বের দরবারে ভারতের পতাকা বয়ে নিয়ে যেতে নিরন্তর দৌড়ে চলেছিলেন ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি।  খেতাব জেতার পরে ভারতের সোনার মেয়ে বলেন, ‘‘বন্ধুদের প্রথমে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আমার খেলা দেখতে ওরা হাজির হয়েছিলেন। আমার হয়ে ওরা গলা ফাটিয়েছেন। আজ আমি আব্গেপ্রবণ হয়ে পড়েছি। বন্ধুদের ভালবাসায় এবং সাপোর্টে আমি ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি। দেশকে সোনা ছাড়া আমার আর দেওয়ার কিছু নেই। ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্সে সোনা জেতার স্বপ্ন দেখি।’’ 
এবার আমরা তাকিয়ে থাকব ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্সে সোনার আশায়। মেরি কম ৪৮ কেজি প্রতিযোগিতায় বিশ্বচাম্পিয়ন হলেন, কিন্তু টোকিও অলিম্পিক্সে মেরি কে ৫১ কেজি প্রতিযোগিতায় লড়তে হবে। এখানেই থাকছে বড় চ্যালেঞ্জ। মেরি কম এই বিভাগে ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন।
মেরি কম নিঃসন্দেহে ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত বক্সার যিনি ছয়টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব অর্জন করে  ইতিহাস তৈরি করেছেন। জাপানে সোনা জেতার জন্য মেরি কম এখন সঠিকভাবে গেমসের জন্য প্রস্তুতি নেবেন।
এই বছরের আগস্ট মাসে তিনি এশিয়া গেমসে  অংশ গ্রহন করেনি। সেখানে ৪৮ কেজির বিভাগ ছিল না। মেরি কম  তখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের  জন্য প্রস্তুতি নেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে মেরির ৪৮ কিলোগ্রাম থেকে ৫১ কিলোগ্রামে স্থানান্তর করতে এবং টোকিওতে সোনা জিততে দুই বছর যথেষ্ট  কিনা।
এখানে যুক্তি হ'ল মেরি কম ৪৮ কেজি বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার দুই বছর পর ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ৫১ কেজি বিভাগে  রুপো  জিতেছিলেন। তাহলে মেরি এখন কেন পারবে না।
আমরা জানি মেরি কম তার ওজনের বেশী প্রতিপক্ষকে পাঞ্চ করার  দক্ষতা আছে। তাছারা মেরি  দুবার শিশুর জন্ম দেবার পর  দেখিয়ে দিয়েছেন কি ভাবে ৩৫ বছর বয়সেও বড় শিরোনাম জেতা যায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে মেরির বয়স দিন দিন বাড়ছে এবং শরীর কে আগের মতন চন মনে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ৫১ কেজি বিভাগে  রুপো  জেতার পর ২০১৬ সালের রিও  অলিম্পিকে মেরি অংশ গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
১.৫৮ মিটার (৫ ফিট ২ ইঞ্চি) উচ্চতার মেরি কমের বক্সিংয়ের রিংয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি  তার গতি, দক্ষতা এবং কৌশলগত সচেতনতা। তিনি জানেন ক্রমাগত বুল ফাইটারের মত আক্রমণ না করে কি ভাবে কৌশলগত ভাবে শক্তি সঞ্চয় করে তরুণ প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা যায়। কিন্তু ৫১ কেজি বিভাগে  যেখানে তার প্রতিপক্ষ ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা সেখানে কি একই কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা  সহজ হবে।
অতীতের মত, ৫৪ কেজি বিভাগের শীর্ষ বক্সাররা নিজেদের ওজন কমিয়ে  ৫১ কেজির বিভাগে  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে মনে হয়। কারণ তাদের কম ওজন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার  সুবিধা রয়েছে। এরকম ঘটনা ২০১২ সালের লন্ডন গেমসে ঘটেছিল।
এ ক্ষেত্রে মেরিকে তার পায়ের উপর অনেক দ্রুততা বজায় রাখতে  হবে এবং প্রতিপক্ষের কাছাকাছি এসে পাঞ্চ করে দ্রুততার সাথে আবার নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হবে।
দ্বিতীয়বার অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের জন্য মেরি কে আরও দ্রুততা বজায় রাখতে এবং আরও আক্রমনাত্মক হতে হবে এবং তা ২০২০ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে।
আগামী ২০২০ অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের জন্য মেরির দুটো সুযোগ থাকবে। প্রথমটা আগামী বছরের বিশ্ব চাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা এবং তারপরে মহাদেশীয় যোগ্যতা টুর্নামেন্ট। এতে সন্দেহ নেই যে ভারতীয় বক্সিংয়ে মেরি কম ছাড়া আর অন্য কেউ এমন  কৃতিত্ব দেখাতে পারবে।

No comments:

Post a Comment