04 December 2018

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কেন বাঘের সাথে লড়াই করেছিলেন জানেন কি।

স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিপ্লবী শহীদ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়-তিনি 'বাঘা যতীন' নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিত। ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ায়  বাড়িতে জন্ম নেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামের এক পর্যায়ে সম্মুখ যুদ্ধে উড়িষ্যার বালেশ্বরে তিনি গুরুতর আহত হন এবং বালাসোর হাসপাতালে ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ মৃত্যুবরণ করেন।
যতীন্দ্রনাথের মামার বাড়ীর অঞ্চলে একটা বাঘ এক সময় খুব অত্যাচার করছিল।  ঘোর যন্ত্রণায় যখন মানুষজন অস্থির তখন যতীন্দ্রনাথের মামাতো ভাই ফণিবাবু বাঘটিকে মারার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাক্রমে যতীন্দ্রনাথ তখন তার মামার বাড়িতেই। সকলের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সামান্য এক ভোজালি নিয়ে ফণিবাবুর সাথে বাঘ মারা দেখতে গেলেন। সমগ্র গ্রাম তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও বাঘটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সবাই জঙ্গলের পাশের মাঠে বাঘ শিকারের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।ফণিবাবুর বন্দুক তাক করা ছিল জঙ্গলের দিকে। বাঘ বোধহয় বন্দুকটি দেখতে পেয়েছিল, তাই বন্দুকের দিক দিয়ে বের না হয়ে যতীন্দ্রনাথের পেছন দিয়ে বের হল। বাঘ দেখামাত্রই গ্রামবাসী স্বভাবসুলভ ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। ফণিবাবু সতর্কভাবেই বাঘের দিকে গুলি ছোঁড়েন। দুর্ভাগ্যবশত গুলিটি বাঘের মাথা ঘেঁষে চলে যায় এবং প্রতিক্রিয়ায় বাঘটি আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং সর্বনিকটে অবস্থানরত যতীন্দ্রনাথকেই আক্রমণ করে বসে। যতীন্দ্রনাথও দমবার পাত্র নয়। সামান্য ভোজালি দিয়ে সেও বাঘটিকে আঘাত করতে থাকে।উভয়ের মধ্যে মিনিট দশেক ধরে ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে। উভয়ের ক্ষেত্রেই একটি শর্ত, জানে বাঁচতে হলে অপরকে হত্যা করতে হবে। তাই চলে মরণপণ যুদ্ধ। বাঘের আঁচড়ে যতীন্দ্রনাথের সমগ্র শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যতীন্দ্রনাথের পা। যতীন্দ্রনাথও ভোজালি দিয়ে ক্রমাগত বাঘের মাথায় আঘাত করতে থাকে সে এবং শেষ পর্যন্ত বাঘটিই পরাজিত হয়। প্রায় ৩০০ স্থানে জখম হয় যতীন্দ্রনাথের। মামারা তাকে সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। তত্‍কালীন কলকাতার সেরা ডাক্তার সুরেশপ্রসাদ তার চিকিত্‍সার ভার গ্রহণ করলেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয় না। ধীরে ধীরে একটু উন্নতি হলেও দুটি পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা কেটে ফেলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে মামাদের অসামান্য সেবা-যত্নের দৌলতে এক সময় সম্পূর্ণ সুস্থ হন যতীন্দ্রনাথ। আর তার বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সুরেশপ্রসাদ তার নাম দেন 'বাঘা' যতীন।
আগামী ৭ই ডিসেম্বর, ২০১৮, বাঘা যতীনের ১৩৯তম জন্মদিন। বাঘা যতীন অমর রহে, জানাই  সশ্রদ্ধ  প্রণাম। 

No comments:

Post a Comment