28 January 2019

আজ স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায়ের ১৫৩ তম জন্মবার্ষিকী। আসুন আজকের দিনে ওঁনাকে স্মরণ করি-

আজ ২৮শে জানুয়ারী ২০১৯ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায়ের ১৫৩ তম জন্মবার্ষিকী। আসুন আজকের দিনে ওঁনাকে স্মরণ করি-

১) লালা লাজপত রায় পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে ২৮শে জানুয়ারি, ১৮৬৫ সালে একটি শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ওঁনার পিতা মুন্সি রাধা কৃষ্ণ আজাদ ছিলেন ফার্সী ও উর্দু সাহিত্যের একজন মহান পণ্ডিত। তার মা গুলব দেবী ছিলেন খুবই ধার্মিক প্রকৃতির মহিলা।

২) তিনি এক মহান ব্যক্তিত্যের মানুষ ছিলেন। ১৮৮৬ সালে, তাঁর পরিবার হিশারে স্থানান্তরিত হলে লালা লাজপত রায় সেখানে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেন। সেখানেই তিনি জাতীয়তাবাদী দিনানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতীর এর অনুগামী হন।

৩) লালা লাজপত রায়ের উদ্দোগে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ১৮৯৫ সালে প্রতিস্থাতা লাভ করে। তাছারাও  উনি লক্ষী বিমা কোম্পানী স্থাপন করেছিলেন।

৪) গান্ধী ও নেহেরুর আগে লালা লাজপত রায়ই জাতীয় কংগ্রেসের ১৯০০ সালের সেশনে ভারতীয়দের  আত্মনির্ভতার ওপর জোর দিতে বলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধী, অরবিন্দ ঘোষ, বাল গঙ্গাধর তিলক, বিপিন চন্দ্র পাল এবং অন্যান্য  স্বদেশী আন্দোলনের স্থপতিদের মধ্যে একজন ছিলেন। বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিন চন্দ্র পালের সহিত তিনি লাল-বাল-পাল নামেই বিখ্যাত ছিলেন। এই তিন নেতাই ভারতে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতার দাবী করেন এবং পরবর্তি সময়ে সমগ্র ভারতবাসী এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে।  ওঁনার সন্মানে ভারতে একটি ডাকটিকিটও প্রকাশ করা হয়।

৫) লালা লাজপত রায় উচ্চতর বিদ্যার্জনের জন্য ১৯০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং বিদ্যার্জন শেষ করে দেশে ফিরে আসার পর ১৯২০ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। এই অধিবেশনগুলিতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিপ্লবী ভারতীয়রা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের সিদ্ধান্ত নিত।

৬) লালা লাজপত রায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং রাওলাট আইনের বিরোধিতা শুরু করেন। ব্রিটিশরা রাওলাট আইন তৈরী করেছিল যাতে যারা প্রতিবাদের মাধ্যমে তাদের আঘাত করার হুমকি দেবে সে সব ভারতীয়কে জেলে পুরতে পারে। এই নতুন আইনের বিরোধিতা করার সাহস দেখানোর জন্য লালা লাজপত রায়কে পাঞ্জাবের কেসারি (পাঞ্জাবের সিংহ) শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল।

৭) তিনি একদিকে যেমন ছিলেন বিপ্লবী ও নেতা তেমনই তিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত লেখক।  History of the Arya Samaj, England's Debt to India, The Problems Of National Education In India, Swaraj and Social Change, The United States of America, A Hindu's impressions and a study এরকমই বেশ কিছু বই তিনি লিখেছেন। তিনি হিন্দি ভাষায়  শিবাজী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন এবং পাঞ্জাবে পাঞ্জাবি ভাষাকে সরিয়ে হিন্দি ভাষা প্রচলন করার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেন।

৮) ১৯২৮ সালে লাহোরে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতে সাংবিধানিক সংস্কারের সুপারিশের জন্য সাইমন কমিশনকে ভারতে  পাঠানো হয়েছিল। সাইমন কমিশনের আগমনের প্রতিবাদে লালা লাজপত রায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন। তখনকার পুলিশ সুপার স্কট তাদের আটকাতে লাঠি চার্জের আদেশ দেন। পুলিশ এই সময় লাজপত রায়ের বুকের উপর আঘাত করে। দুর্ভাগ্যবশত, এই আঘাতের ফলে রায়ের মৃত্যু হয়। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভগত সিং ও তার সহযোগীরা স্কটকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্কটের পরিবর্তে, তারা ভুল করে সহকারী পুলিশ সুপার সান্ডারকে হত্যা করে। রায়ের সম্মানে ১৭ই নভেম্বর তার মৃত্যু বার্ষিকীতে শহীদ দিবস হিসাবে উদযাপিত হয়।

৯) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তার সাহসীকতার জন্য লালা লাজপত রায়কে 'ভারতের চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের স্তম্ভ' হিসাবে বিচার করা হয়। তাঁর সম্মানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল খোলা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment