29 January 2019

জানেন কি মহাত্মা গান্ধী ১২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছিলেন? এটাও জেনে নিন ওঁনার প্রাণনাশের কতবার চেস্টা করা হয়েছিল।

মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর আগে পাঁচবার ওঁনার প্রাণনাশের চেস্টা করা হয়েছিল। কি ভাবে তিনি বেঁচে যান সে কথা জেনে নিন -

১) ২৫শে জুন, ১৯৩৪, গান্ধীজীর পুনে কর্পোরেশন অডিটরিয়ামে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। একই রকম দেখতে দুটি গাড়ী নিয়ে গান্ধীজী ও অনান্যরা গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হন। তার মধ্যে একটি গাড়ীতে ছিলেন গান্ধীজী ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী।  সৌভাগ্যক্রমে তাদের গাড়ীটি রেলের ক্রসিংয়ে আটকে যায়। কিন্তু অন্য গাড়ীটি সময় মত চলছিল।সেটাকে একটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

২) এর দশ বছর পরে জুলাই ১৯৪৪ সালে, দ্বিতীয় বার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়। আগা খান প্রাসাদ গৃহবন্দী থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গান্ধীজীর ম্যালেরিয়া রোগ ধরা পরে। নিরিবিলিতে বিশ্রাম নেবার জন্য ওঁনাকে পুনের কাছাকাছি এক পাহাড়ী রিসোর্টে পাঠানো হয়। ১৮-২০ জনের একটি দল পুনে থেকে বাস ভাড়া করে সেখানে গিয়ে গান্ধী বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে। গান্ধীজী চেয়েছিলেন প্রতিবাদকারী দলের নেতার সাথে আলোচনায় বসতে। দলের নেতা নথুরাম গডসে সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। সান্ধ্য প্রার্থনা সভার সময় পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। নথুরাম গডসে গান্ধী বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে  হাতে ছুরি নিয়ে গান্ধীজীর দিকে তেরে যায়। সৌভাগ্যক্রমে, মানিশংকর পুরোহিত ও ভিল্লার গুরুজী গডসেকে ধরে আটকায়।

৩) তৃতীয়বার চেস্টা করা হয় ১৯৪৪ সালে। আলী জিন্নার সাথে গান্ধীজীর একটি সভা হবার কথা ছিল যেটা হিন্দু মহাসভা মানতে চায়নি। নথুরাম গডসের দল গান্ধীজীকে নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে। গান্ধীজী যাতে সভা করার জন্য বোম্বে থেকে বেড়োতে না পারেন সেজন্য নথুরাম গডসে তার দলবল নিয়ে আশ্রম ঘিরে রাখেন। কিন্তু নথুরাম গডসেকে সেখানকার লোকজন আটক করে এবং জানা যায় সেই সময়েও গডসের কাছে অস্ত্র ছিল।

৪) চতুর্থ চেষ্টাটি ছিল ১৯৪৬ সালের জুন মাসে। যখন গান্ধী স্পেশাল নামে ট্রেনটি পুনে যাওয়ার পথে লাইন চ্যুত হয়ে যায়। কিন্তু ট্রেন চালক দক্ষতার সাথে  ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্বেও ট্রেনটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন এবং যাত্রীরা বেঁচে যায়। এর কিছুদিন পর এক প্রার্থনা সভায় ঘটনাটি স্মরণ করে গান্ধীজী বলেন, ঈশ্বরের কৃপায় আমি মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমি কারোর ক্ষতি করিনি। আমি বুঝতে পারছি না কেন আমার জীবনের ওপর এত আক্রমনের করা হচ্ছে। গতকালের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। আমি এখন মরবো না, আমি ১২৫ বছর বাঁচতে চাই।

৫) পঞ্চমবার প্রাণনাশের চেষ্টাটি হয় ২০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে। কিছু সমস্যার কারণে গান্ধীজীর সভা শুরু করতে দেরী হয়। সেই দিন মাদনাল পাহাওয়া ও নাথুরাম গডসে সহ অন্যান্যরা মিলে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিড়লা ভবনে সভায় জড় হন। মূল পরিকল্পনাটি ছিল পডিয়ামের কাছাকাছি একটি বোমা নিক্ষেপ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার পর গান্ধীজীকে গুলি করে হত্যা করা। কিন্তু উপস্থিত কয়েকজন তাদের সন্দেহ করায় পরিকল্পনাটি সফল হয়নি। তারা একটা ছোট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্যাক্সি করে পালিয়ে যায়। কিন্তু মদনলাল ধরা পড়ে যায় যিনি জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়ে ছিলেন যে সাত সদস্যের দলটি গান্ধীজীকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

নাথুরাম গদসে তার গ্রামের বাড়িতে লুকিয়ে থাকার পর স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ও এগারোটি বুলেট কিনে ২৯শে জানুয়ারি দিল্লী পৌঁছায় এবং ৩০শে জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে গান্ধীজীকে হত্যা করে।



No comments:

Post a Comment