14 April 2019

আজ ১৪ই এপ্রিল ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেডকরের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেডকর ছিলেন ভারতীয় সংবিধান রচয়িতা, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, হরিজনবন্ধু, লেখক, বৌদ্ধধর্ম সংস্কারক, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রূপকার। তিনি বাবাসাহেব  নামেও পরিচিত ছিলেন।

বোম্বের এলফিনস্টন হাই স্কুল, শিক্ষক একটি সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসা একজন ছাত্রকে ডাকলেন। ছাত্রটি  ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলে  মুহূর্তের মধ্যে  পুরো ক্লাসে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। অন্যান্য ছাত্ররা তাদের টিফিন বক্স রাখতো ব্ল্যাকবোর্ডের পেছনে। ছাত্রটি ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে আসার আগেই সবাই তাড়াহুড়ো করে নিজেদের টিফিন বক্স সরাতে লাগলো। কারণ ছাত্রটি কাছাকাছি আসলে যে, তাদের খাবার অপবিত্র হয়ে যাবে।

ছাত্রটির পরিবার দাপোলি থেকে সতরে চলে আসে। ছাত্রটি ক্লাসের ভেতরে ঢোকার সুযোগ পেলেও বেঞ্চিতে বসতে পারতেন না। ক্লাসের এক কোনে নিজের নিয়ে আসা পাটের বস্তাটি বিছিয়ে বসে পড়তেন। দিনশেষে আবার সেটি নিয়ে যেতেন সঙ্গে করে। কারণ স্কুল পরিষ্কার করা কর্মচারীও সেটি স্পর্শ করতেন না। স্কুলের ট্যাপ খুলে বা জগ থেকে তার জল খাবার অনুমতি ছিলো না। কারণ তাঁর ছোঁয়ায় এসব অপবিত্র হয়ে যাবে। কেবল যখন উচ্চ বর্ণের কেউ ট্যাপ খুলে দিত বা জগ থেকে জল ফেলত তখনই তার জল খাবার সুযোগ মিলত। এ ‘নিচু’ কাজটার দায়ভার সাধারণত স্কুলের পিয়নের কাঁধেই পড়তো। সে জগ থেকে জল ঢালত ছাত্রটির জন্য। অন্য কেউতো কাছেই ঘেঁষতো না তেমন। যেদিন পিয়ন থাকতো না, সেদিন তাকে তৃষ্ণার্ত হয়েই কাটাতে হতো।

কী প্রচণ্ড ঘৃণা! কেন? কারণ ছাত্রটি যে জন্মেছেন নিন্মবর্ণের পরিবারে। মহর পরিবারে জন্ম নেওয়া একজন দলিত তিনি। এতক্ষণ যে ছাত্রটির কথা বলেছি তার পুরো নাম ভীমরাও রামজি আম্বেডকর। দলিতরা যাকে ভালোবেসে ‘বাবা সাহেব’ বলে ডাকেন। পরবর্তীকালে যিনি হয়ে উঠেছিলেন তুখোড় অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি হয়েছিলেন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী, ভারতীয় সংবিধানের মুখ্য স্থপতি। তবে সবচেয়ে আগে তার যে পরিচয়টি দেয়া দরকার তা হলো, বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ১৯৯০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি ‘ভারতরত্ন’-তে ভূষিত করা হয় তাকে।

ভীমরাও রামজি আম্বেডকর জন্মেছিলেন ১৮৯১ সালের ১৪ই এপ্রিল ভারতের মধ্যপ্রদেশের মোহ অঞ্চলে। রামজি মালোজি শাকপাল ও ভীমাবাই এর চতুর্দশ সন্তান ছিলেন তিনি। তার পূর্বপুরুষদের অধিকাংশই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মূলত পিতার ইচ্ছাতেই তার স্কুলের পাঠ শুরু হয়। সেখানে দলিত হওয়ার কারণে তিনি শৈশবেই যে তীব্র বিদ্ধেষের মুখোমুখি হয়েছেন তা উপরের ঘটনাগুলো থেকে কিছুটা টের পাওয়া যায়।

এই বিদ্ধেষ শুধু মাত্র স্কুলেই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্কুলের বাইরেও এ হেনস্থা তাঁর পিছু ছাড়েনি। তারা যে পাড়ায় থাকতেন যেখানে অধিকাংশই উচ্চবর্ণের হিন্দু ছিল। সেখানে কোনো নাপিত তাদের চুল কেটে দিতো না, কোনো ধোপা তাদের কাপড় কেঁচে দিতো না। তার বড় বোনকেই তার ও তার ভাইদের চুল কেটে দিতে হতো।
তীব্র হতাশা থেকেই জন্ম হয় সমাজ সংস্কারকদের, বিপ্লবীদের। কেননা এ হতাশাই এনে দেয় সমাজ বদলানোর জিদ। যা ভি আর আম্বেডকরের মনেও তীব্রভাবে জেগেছিল। তিনি তার জীবনের মিশন হিসেবে নিয়েছিলেন বর্ণবৈষম্য দূরীকরণকে। দলিতদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন গোটা ভারতে। তাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এক সুন্দর ভবিষ্যতের। আর এসব কারণেই তিনি দলিতদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ভালোবাসার ‘বাবা সাহেব’।

১৯০৩ সালে আম্বেডকর মাত্র ১২ বছর বয়সে হিন্দু রীতিতেই ৯ বৎসরের দাপোলির মেয়ে “রামাবাই”এর সাথে হয়। বিয়ের পর সপরিবারে তিনি মুম্বাইয়ে চলে আসেন। যেখানেই আম্বেডকর এলফিন্‌স্টোন রাস্তার পাশের সরকারি বিদ্যালয়ের প্রথম অস্পৃশ্য  ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন।

ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রথমে শিখধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হলেও শিখদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক টেকেনি। ১৪ই অক্টোবর ১৯৫৬ সালে তিনি নাগপুরে লক্ষ লক্ষ অনুগামীসহ তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।

আম্বেডকর ডায়াবেটিস রোগে শারীরিক অবনতির জন্য ১৯৫৪ সালে জুন থেকে প্রায় ৫-৬ মাস তিনি শয্যাগত ছিলেন ও তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারান। তিনি ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে তাঁর দিল্লিতে বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment