20 April 2019

১০০ বছর হয়ে গেল জালিয়ানওয়ালা বাগের বালক ও শিশু সহ নিরপারাধ নারী পুরুষদের উপর ব্রিটিশ শাসকদের নিশংস হত্যাকান্ড।


প্রবল রাষ্ট্রক্ষমতা অসহায় মানুষের উপআর অত্যাচার করলে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে - এই বার্তাটাই দিয়ে গেল জালিয়ানওয়ালাবাগ। শোনা কথা অনাথ কিশোর উধম সিংহ সেদিন আহত হয়ে সারা রাত পড়ে থাকার পর সকালে এক মুঠো রক্তাক্ত মাটি তুলে ফিরে এসে শপথ নিয়ে ছিল এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেবার। শুধু উধম সিংহ নয় সমগ্র ভারতবাসী শপথ নিল প্রতিশোধ নেবার। এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সারা দেশে এমনকি সারা বিশ্বে নিন্দা ও সমালোচনার বন্যা বয়ে গেল। গান্ধিজী তার ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় লেখেন এই শয়তান সরকারের সংশোধন সম্ভব নয়, একে ধ্বংস করতেই হবে। কবিমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও চুপ থাকতে পারেন নি। গ্রেফতারের পরোয়ানা না করে তিনি চেয়েছিলেন অমৃতসরে গান্ধিজীর সাথে সভা করতে। কবি নিজের নাইটহুড প্রত্যাখ্যানের চিঠি লিখে  করে পাঠালেন বড়লাটের কাছে। নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।" আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে মানব দরদী ইংরেজ সাহেব দীনবন্ধু এন্ড্রুজ পাঞ্জাবে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইংরেজ সরকার তাঁকে পাঞ্জাবে যেতে দিল না। এটাই হল ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজের শেষের শুরু।

১০০ বছর হয়ে গেল জালিয়ানওয়ালা বাগের বালক ও শিশু সহ নিরপারাধ নারী পুরুষদের উপর ব্রিটিশ শাসকদের নিশংস হত্যাকান্ড। ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ার জন্মেছিলেন এই পাঞ্জাবে ভারতের মাটিতেই। এই হত্যাকান্ডের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই।

১৯১৪ সালের জুলাই মাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিলো। ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যুদ্ধে অংশ নিলে পরাধীন দেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। এই কথায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত  গান্ধিজী সহ অনেকেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে যুদ্ধে ভারতবাসীকে উৎসাহিত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য মারা যায় তার মধ্যে অধিকাংশই ছিল পাঞ্জাবের।

পাঞ্জাবের দন্ডমুন্ডের কর্তা স্যর মাইকেল ও'ডোয়্যার ৬ বছর ধরে কড়া শাসনে বেঁধে রেখেছিল পঞ্চনদীর দেশকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নানা সুবিধার লোভ দেখিয়ে শুধু পাঞ্জাব থেকেই প্রায় ৫ লাখ পুরুষকে যুদ্ধে পাঠানো গিয়েছিল। ১৯১৭ সালের দিকে আর কেউ যুদ্ধে নাম লেখাতে চাইল না। শুরু হল অত্যাচার। মিলিটারিতে নাম লেখাতে শুরু হল জোর জবরদস্তি এবং শাস্তি। এই বছর হয় অতি বৃষ্টি, সাথে ম্যালেরিয়া আর প্লেগ মহামারি। এই সময় ব্রিটিশ সরকার দমন পীড়নের মাধ্যমে সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কন্ঠরোধ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে সচেষ্ট হয়। এই উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার বিচারপতি রাউলাটের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ‘সিডিশন কমিশন’ গঠন করে। ভারতীয়দের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করে।

১৯১৮ সালের শেষের দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। এই যুদ্ধে জার্মানি ইংল্যান্ড তথা মিত্রবাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়। কিন্তু ভারতীয়দের প্রতি ইংরেজ সরকারের নীতিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেসব সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদেরকে বেকার করে নিজেদের গ্রামে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  ভারতবাসীর মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। এই সন্দেহ থেকেই ক্ষোভ এবং ইংরেজ বিরোধী মনোভাবের সূচনা ঘটে। এই বছর অনাবৃষ্টি,অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে এক কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

১৯১৯ সালের ১৮ই মার্চ  সিডিশন কমিশনের সুপারিশ সমূহের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ সরকার এক দমনমূলক আইন চালু করে। এই আইনই সাধারণভাবে কুখ্যাত ‘রাউলাট আইন’ নামে পরিচিত। এই আইনে জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।
ভারতীয়দের জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই আইনের বিরুদ্ধে চারিদিকে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় আইন সভার সমস্ত ভারতীয় সদস্য প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন । মদনমোহন মালাব্য, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, মাজহার উল হক আইন পরিষদের সদস্য পদে ইস্তফা দেন। চরমপন্থীরা তো বটেই সুরেন্দ্রনাথ সহ সকল নরমপন্থী নেতা এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। গান্ধিজী সর্বভারতীয় আন্দোলনের ডাক দেন।

১৯১৯ সালের মার্চ মাসে গান্ধিজীর ডাকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ হরতাল হয় ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। গান্ধিজী সত্যাগ্রহের হুমকি দেন। কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে স্থানীয় কংগেস নেতা সইফুদ্দিন কিচলু ও সত্যপালের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ এবং হিন্দু-মুসলমান- শিখের অভূতপূর্ব যোগদান ইংরেজ প্রশাসকদের খুবই চিন্তা ও অস্বস্তিতে ফেলেছিল। এই দুই নেতা রাওলাট-এর নামে সদ্য চালু হওয়া কালা কানুনের স্বরূপ পঞ্জাববাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছিলেন। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হল কোনো জনসভায় ভাষণ না দেওয়ার।

এপ্রিল মাসে গান্ধিজী সত্যাগ্রহ তথা রক্তপতহীন আন্দোলনের মাধ্যমে এর রাওলাট আইনের প্রতিবাদের আয়োজন করেন। ৬ই এপ্রিল বিরাট এক জনসমাবেশে সইফুদ্দিন কিচলু ও সত্যপালের বিরুদ্ধে ফতোয়া প্রত্যাহারের দাবি ওঠে। পুরো অমৃতসর শহর স্তব্ধ করে হরতাল পালিত হয়।

৭ই এপ্রিল পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধিজীকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সরকার গান্ধিজীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর পরও বিক্ষোভ কমেনি। ধর্মঘটে এবং বিক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় সরকারী দপ্তর এবং যানবাহন। সাদা চামড়ার ইউরোপীয় কর্মকর্তা এবং অধিবাসীদের উপরও ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের উপরও আক্রমণ করা হয়। মোম্বাইতে জনতা পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
এপ্রিল মাসের গোড়ায় রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সভা, হরতাল, হিন্দু- মুসলমান সম্প্রীতির আবহ ব্রিটিশ শাসকদের ক্রমশই বিচলিত করে তুলছিল।  ৮ই এপ্রিল ডেপুটি কমিশনার আরভিং লেফটেনান্ট গভর্নর মাইকেল ও'ডোয়্যার কে চিঠি লিখে মেশিনগান, সাঁজোয়া গাড়ি আর বাড়তি সেনা চেয়ে নেন।

১০ই এপ্রিল ১৯১৯ সালে সইফুদ্দিন কিচলু ও সত্যপালকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় অজানা গন্তব্যে। এই খবর ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে ক্ষুব্ধ জনতা পথে নামলেন। আগুন জ্বলল অমৃতসর শহরে। মানুষ নেতার মুক্তির দাবিতে হাঁটল শহরের ডেপুটি কমিশনারের সাথে দেখা করতে চেয়ে। মিলিটারি পিকেট তাদের পথ আটকায়। ব্যারিকেট ভেঙ্গে এগোনের চেস্টা করলে শুরু হয় গন্ডগোল। জনতার উপর গুলি চললে মারা যায় ২০-৩০ জন। এরপর জনতাকে আর আটকানো গেল না। তাদের একাংশ উন্মত্ত হয়ে আক্রমণ করল টাউন হল, দুটো বিদেশী ব্যাংক, টেলিগ্রাফ আর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। মারমুখী জনতার হাতে মারা গেল পাঁচজন সাহেব। অমৃতসর শহরে ১৩০ জন ইংরেজ নর-নারীকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নেটিভদের শিক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে শহটাকে মিলিটারির হাতে তুলে দেওয়া হয়।

পরের দিন ১১ই এপ্রিল সকাল থেকেই অমৃতসরের মাথার উপর চক্কর মারছিল যুদ্ধ বিমান। রাস্তায় কারফিউ ও সেনা টহল। আগের দিনের ঘটনায় মৃতদের দেহ সতকারে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা সহ চলল যথেচ্ছ ধরপাকড়। রাতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার অমৃতসরে পৌঁছে শহরের  দায়িত্ব নিলেন। সে দিন গভীর রাতে বিদ্যুৎহীন করে দেওয়া হল অমৃতসর শহরটাকে। জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হল।

১২ই এপ্রিল সকাল থেকেই অমৃতসরের মাথার যুদ্ধ বিমান নজর রাখছিল শহরের উপর। শহরের অলিগলিতে সেনা নামল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার দুটি সাঁজোয়া গাড়ী নিয়ে বেরোলেন শহর পরিদর্শনে। বিনা অনুমতিতে শহরে প্রবেশ বা বার হওয়া নিষিদ্ধ। মিলিটারি পরাক্রম দেখিয়ে অমৃতসর শহর দখল হয়ে গেল। নোটিশ ঝুলিয়ে শহরের কিছু জায়গায় মিটিং- জমায়েত নিষিদ্ধ করা হল।

১৩ই এপ্রিল, ১৯১৯ সালের সেই অভিশপ্ত দিন। এদিন শহরের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি ঠিক করলেন বিকেলে একটা শান্তিপূর্ণ মিটিং করে কিচলু ও সত্যপালের মুক্তির দাবি তুলবেন। তার সাথে ১০ তারিখের অনভিপ্রেত ঘটনার পর সাধারণ মানুষের চরম হয়রানি ও যথেচ্ছ প্রেফতারের বিরুদ্ধেও কথা হবে। সেদিন ছিল বৈশাখী মেলা উৎসবও। স্বর্ণমন্দিরের কাছাকাছি একটি বাগান জালিয়ানওয়ালা বাগে মিটিং এর স্থান ঠিক হয়। সেখানে মিটিং নিষেধের কোনো নোটিশ ছিল না। চারিদিকে  পুলিশের পাহারা থাকলেও বাগান চত্বরে ঢোকার মুখে ভিড় আটকানোর চেষ্টা হয়নি। সেখানে জমা হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার জনতা মিটিং শুরু হলে ডায়ার পরিকল্পনা করে ওই চত্বরে একমাত্র সরু যাতায়াতের গলির মুখে দুটো সাঁজোয়া গাড়ী লাগায়। রাস্তার দুধারে বসে গেল পুলিশ পিকেট। আকাশ পথে যুদ্ধ বিমান ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে নিল। তার পরেই ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নির্দেশে হাঁটু-গেড়ে বসা বালুচ ও গোর্খা সৈন্যরা শুরু করল গুলিবর্ষণ। বালক ও শিশু সহ নিরপারাধ নারী পুরুষদের উপর গুলি চলল ১৬০০ রাউন্ডের বেশী। বাগান থেকে বেরোনোর রাস্তা বন্ধ। প্রাণ বাঁচাতে বাগানের দেওয়াল টপকানোর অনেকে চেষ্টা করে। বাগানের মাঝখানে কুয়োতে অনেকে আবার ঝাঁপ দিয়ে গুলি এড়াতে চেয়েছিল। ১০ মিনিট ধরে চলে এই হত্যাকান্ড। সেদিন সরকারী হিসাবে মারা যায় ৩৭৯ জন এবং আহতের সংখ্যা ছিল ১২০০। কিন্তু বেসরকারী হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং আহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশী।
সন্ধ্যের পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার ক্যাম্পে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরোলেন রাত আটটার পর শহরে টহল দিতে। দেখে নিতে কেউ বাগানের দিকে যাচ্ছে কিনা মৃত প্রিয়জনদের খোঁজে।

গোটা পঞ্জাব জুড়ে চালু হল সামরিক শাসন। চলল ২ মাস ধরে ধরপাকড় ও অসহ্য নির্যাতন সাথে হেনস্থা। এই হত্যাকান্ড ব্রিটিশ সরকার সম্বন্ধে ভারতীয়দের মোহভঙ্গ ঘটল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন রূপ সারা বিশ্বের কাছে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছিল। এর পরে গান্ধিজী দেশে বৃহত্তর গণ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন যার পরিণত রূপ ছিল অহিংসা আন্দোলন।

নারকীয় এই গণহত্যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। সেই সময় এন্ড্রুজ সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে। নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য তিনি পাঞ্জাব যাবার মনস্থির করেন। কিন্তু ইংরেজ সরকার মানব দরদী ইংরেজ সাহেব দীনবন্ধু এন্ড্রুজকে পাঞ্জাবে যেতে দিল না। এন্ড্রুজ যখন অমৃতসর রেল স্টেশনে পৌঁছান তখন তাঁকে আটক করে দিল্লিতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও এই হত্যাকান্ডে চুপ থাকতে পারেন নি। তিনি এন্ড্রুজকে গান্ধিজীর কাছে পাঠান যাতে তিনি এবং গান্ধিজী অমৃতসরে গিয়ে আর্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু গান্ধিজী সেই সময় অমৃতসরে গিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে চান নি।
প্রতিবাদী রবীন্দ্রনাথ ৩০শে মে সারা রাত জেগে কবি নিজের নাইটহুড প্রত্যাখ্যানের চিঠি লিখে ৩১ মে ভোরবেলা তার করে পাঠালেন বড়লাটের কাছে। নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।" এই পত্রের প্রতিলিপি লন্ডনের শহরে বিলি হয়।

ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ বাড়তে থাকে। ১০২০ সালের মার্চ মাসে জেনারেল ডায়ারকে পদত্যাগ করিয়ে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারত ও ইংল্যান্ডে ডায়ার খুবই নিন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ব্রিটিশ শাসক দলের কাছে বীর সম্মান পান। ডায়ার পরে নিজে তার কাজের জন্য অনুশোচনা করতেন।
জীবনের শেষ দিন গুলি ডায়ারের ভালো কাটেনি। একের পর এক স্ট্রোকের  কারণে বেশ কিছুদিন  পক্ষাঘাত এবং বাকরোধে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী  ছিলেন। ১৯২৭ সালে ইংল্যান্ডের সমারসেট কাউন্ট্রিতে সেরিব্রাল হেমারেজে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুশয্যায় তবে তিনি বলেছিলেন -
"অমৃতসরের পরিস্থিতি যারা জানত তাদের অনেকেই বলেছেন আমি ঠিক করেছি ... আবার অনেকেই বলেছেন আমি ভুল করেছি। আমি মরে আমার সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে জানতে চাইব আমি ঠিক না বেঠিক"।

কথিত আছে জালিয়ানওয়ালা বাগের সভায় অনাথ কিশোর উধম সিংহ আহত হয়ে সারা রাত পড়ে থাকার পর সকালে এক মুঠো রক্তাক্ত মাটি তুলে ফিরে এসে শপথ নিয়ে ছিল এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেবার। একুশ বছর পর ১৯৪০ সালে এই শপথ আংশিক ভাবে পূরণ করেন। নাম পাল্টে আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপ হয়ে তিনি লন্ডনে পৌঁছান। মাইকেল ও'ডোয়্যার লন্ডনের সভায় বক্তৃতা দেবার সময় উধম সিংহ সামনে থেকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। দ্রুত বিচারের পর উধম সিংহের ফাঁসি হয়।  জালিয়ানওয়ালা বাগে তাঁর চিতাভষ্ম রাখা হয় এবং সেখানে তাঁর একটা মূর্তিও বসেছে।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment