08 April 2019

আজ ৮ই এপ্রিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


বঙ্কিমচন্দ্র-শরৎচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ - ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণে বঙ্কিমচন্দ্রই ছিলেন প্রথম এবং অগ্রগণ্য সাহিত্যিক। 

আজও আমরা সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে মনে রেখেছি, গ্রহণ করেছি তাঁর রচিত 'বন্দেমাতরম্' সংগীত যা ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসাবে স্বীকৃত। আজ ৮ই এপ্রিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৩৮ সালের ২৬ শে জুন, চব্বিশ পরগণা জেলার  নৈহাটির কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মেদিনীপুরের কলেক্টর। জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁটালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তাঁর অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়।

তখনকার দিনে খুব অল্প বয়সেই ছেলেদের বিয়ে দেওয়া হত। সেই রেওয়াজ অনুযায়ী ১৮৪৯ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বঙ্কিমচন্দ্রের বিয়ে হয় ৫ বছরের এক বালিকার সাথে। যশোরে চাকরিতে থাকাকালীন ১৮৫৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের স্ত্রী মারা যান। পরের বছর জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। রাজলক্ষ্মী দেবী সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন- "আমার জীবন অবিশ্রান্ত সংগ্রামের জীবন। একজনের প্রভাব আমার জীবনে বড়ো বেশী রকমের- আমার পরিবার। আমার জীবনী লিখতে হলে তাঁর সম্পর্কেও জানা দরকার। তিনি না থাকলে আমি কী হতাম তা বলতে পারি না।"

১৮৫৩ সালটি বঙ্কিমচন্দ্রের জীবনে একটি  স্বরণীয় বছর। তখন প্রভাকরে উত্তর-প্রত্যুত্তরে কবিতা লেখা যুবক লেখকদের একটা মহা উৎসাহের ব্যাপার ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র প্রথমে প্রভাকরে লিখে কাব্য রচনার অভ্যাস শুরু করেন। এই বছর প্রভাকর পত্রিকার কবিতা প্রতিযোগিতায় বঙ্কিমচন্দ্র অংশগ্রহণ করেন এবং পুরস্কার হিসাবে লাভ করেন ২০ টাকা। পরবর্তীকালে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন সংবাদ প্রভাকরের কবিবর ঈশ্বরগুপ্তের সহায়তা না পেলে তিনি গদ্য-পদ্য রচনা প্রকাশ করতে পারতেন না।

১৮৫৭ সালে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে পরের বছর ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মত বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পাশ করেছিলেন মাত্র দুজন- বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। আইন পড়া শেষ হওয়ার আগেই যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কলেক্টরের চাকরি পান।

কাজের সূত্রে বঙ্কিমচন্দ্রকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত। বহু মানুষের দুঃখ বেদনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। এইসব বিষয়গুলিকে পাথেয় করে তিনি একের পর এক উপন্যাস রচনা করেছেন।

১৮৬৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস
দুর্গেশনন্দিনী মুদ্রিত ও প্রচারিত হয়। এই উপন্যাস সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিবনাথ শাস্ত্রীর কথায় "দুর্গেশনন্দিনীতে আমরা যাহা দেখিলাম, তাহা অগ্রে কখনও দেখি নাই। এরূপ অদ্ভুত চিত্রণ শক্তি বাংলাতে কেহ অগ্রে দেখে নাই। দেখিয়া সকলে চমকিয়া উঠিল।"  তারপর লেখা হল 'কপালকুণ্ডলা'। যে তুলি 'দুর্গেশনন্দিনী'র নয়নানন্দকর কমনীয়তা তুলে ধরেছিল সেই তুলি 'কপালকুণ্ডলা'য় গাম্ভীর্য রসপূর্ণ ভাব সৃষ্টি করল।

স্বদেশবাসীদের মনে দেশপ্রেম জাগানোর উদ্দেশ্যে তিনি আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী এবং সীতারাম প্রকাশ করেন। আনন্দমঠ উপন্যাসে যে ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে সম্রাজ্ঞী বিদ্রোহের কথা তুলে ধরা ছিল সে যুগের বিপ্লবীদের কাছে তা ছিল 'গীতা'র মতো। আনন্দমঠ উপন্যাসে বন্দেমাতরম সংগীত দেশপ্রেমের শ্রেষ্ঠ গান রচনা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর এই বন্দেমাতরম গণপরিষদে স্তোত্র হিসাবে গৃহিত হয়।

তাঁর বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল এবং রজনী আধুনিক পারিবারিক উপন্যাসের উৎসস্থল। মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও পরনারীর সাথে সম্পর্কের জটিলতা এগুলোতে পরিস্ফুট হয়েছে। ক্রমে প্রকাশিত হয় মৃণালিণী, ইন্দিরা, রাজসিংহ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। সীতারাম বঙ্কিমচন্দ্রের সর্বশেষ উপন্যাস। এছাড়া কমলাকন্তের দপ্তর, ধর্মতত্ত্ব, রম্যরচনা; শ্রীমদভগবত গীতা ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করে তিনি অমর হয়ে আছেন। এই সব রচনা-উপন্যাস বঙ্কিমচন্দ্রেকে বাংলা সাহিত্যের শীর্ষস্থানে পৌঁছেদিল। হলেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৮৭২ সালে মাসিক পত্রিকা 'বঙ্গদর্শন' প্রকাশ হলে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভার আর একটা দিক দেখা গেল।

দীর্ঘ ৩৩ বছর বঙ্কিমচন্দ্র সরকারী পদে বহাল থেকে ১৮৯১ সালে অবসর গ্রহণ করে চলে আসেন কলকাতার পটলডাঙায়। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তাঁর বহুমূত্র রোগ ধরা পরে এবং এই রোগের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ১৮৯৪ সালের ৮ই এপ্রিল  কলকাতায় বঙ্কিমচন্দ্র পরলোকগমণ করেন।

স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে - ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। 

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment