ভারতের বিপ্লবী ও কমিউনিস্ট নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৮৮৭ সালের ২২শে মার্চ পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার আড়বেলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ১৯১৬ সাল পর্যন্ত এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। তিনি গ্রেফতারি এড়ানোর জন্য সানফ্রান্সিসকোতে মানবেন্দ্রনাথ রায় এই ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। এই বিপ্লবী কমিউনিজমের ধ্যান-ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
মানবেন্দ্রনাথ রায় জাতীয় বিপ্লববাদী দল ‘অনুশীলন সমিতি’র সদস্য ছিলেন। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তিনি পাড়ি দেন বিদেশে। জাপান, চীন হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান।বিপ্লবী জীবনে নানা দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন। একসময় তিনি ফিলিপিনস জাপান হয়ে ১৯১৬ সালে নিউইয়র্ক চলে আসেন। এখানেই দেখা হয় লালা লাজপত রায়ের সাথে। এখানে এসে মানবেন্দ্রনাথ মার্কসবাদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং মার্কসবাদ চর্চা শুরু করেন। একদিন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি সভা শেষ করে ফেরার পথে গ্রেফতার হন। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর মার্কিন গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে মেক্সিকোতে পালিয়ে যান।
১৯১৭ সালে মেক্সিকোতে গিয়ে সমাজবাদী চিন্তা তাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। সেখানকার সমাজবাদী দল সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেন। সেই পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। ১৯১৯ সালে রুশ কমিউনিস্ট নেতা লেনিনের দূত মাইকেল বরোদিনের সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের পরিচয় হয়। কমরেড বরোদিনের কাছে রায় মার্কসবাদের শিক্ষা লাভ করেন। ১৯১৯ সালে তিনি সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টিকেই মার্কসবাদী দলে রূপান্তরিত করেন এবং মেক্সিকোর কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে পৃথিবীর প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়। মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তাসখন্দে প্রবাসী ভারতীয় ও দুজন বিদেশি মহিলাকে নিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। এই দু জন মহিলাদের মধ্যে একজন ছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী ইভলিন ট্রেন্ট এবং অন্যজন ছিলেন অবনী মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী রোজা ফিটিনগফ। ১৯২১ সালে তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আন্তর্জাতিকের অনুমোদন পায়।
১৯২৭ সালের মে মাসে তিনি চীন দেশে হয়ে তিনি বার্লিন যান। সেখানে এক বছর কাটান। এ সময় ইভলিন ট্রেন্টের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মানবেন্দ্রনাথ মস্কোতে ফিরে আসেন।
১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে মানবেন্দ্রনাথ ভারতে চলে আসেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। ১৯৩১ সালের ২১ জুলাই বোম্বের এক হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশ তার বিরুদ্ধে কানপুর যড়যন্ত্র মামলা (১৯২৪) দায়ের করে। তাঁকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি জেলখানায় বসে প্রচুর পড়াশোনা এবং লেখালেখি করেন।
১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে মানবেন্দ্রনাথ ভারতে চলে আসেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। ১৯৩১ সালের ২১ জুলাই বোম্বের এক হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশ তার বিরুদ্ধে কানপুর যড়যন্ত্র মামলা (১৯২৪) দায়ের করে। তাঁকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি জেলখানায় বসে প্রচুর পড়াশোনা এবং লেখালেখি করেন।
১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে মানবেন্দ্রনাথ কংগ্রেসে যোগদান করেন। কিন্তু কংগ্রেসে মার্কসবাদ সুবিধা করতে পারেনি। জনমানুষের তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারেনি। যে কারণে গান্ধীর সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতপার্থক্যের বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ১৯৪০ সালের অক্টোবরে মানবেন্দ্রনাথ রায় কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন। একই বছর ‘লীগ অব র্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন’-এর সিদ্ধান্ত হয় লীগের সবাই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করবেন এবং সংগঠনের নতুন নাম হবে ‘র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি’। নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি আন্দোলনের রূপ পাল্টায়। ১৯৪২ সালে কংগ্রেসের ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের বিরোধিতা করার কারণে মানবেন্দ্রনাথ ও র্যাডিক্যালদের অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
মানবেন্দ্রনাথ রায় অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। ১৭টি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তার রচিত ৬৭টি গ্রন্থ ও ৩৯টি পুস্তিকার কথা জানা যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘নিউ হিউম্যানিজম’ (১৯৪৭), মাই মেমোয়ার্স (১৯৫৪), রেভলিউশন অ্যান্ড কাউন্টার রেভলিউশন ইন চায়না, রিজন রোমান্টিসিজম অ্যান্ড রেভলিউশন ইত্যাদি।
মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯৫৪ সালের ২৪-২৫শে জানুয়ারি মধ্যরাতে দেরাদুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।
No comments:
Post a Comment