প্রভাবতী দেবী সরস্বতী গোবরডাঙার কাছে খাঁটুরা গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আইনজীবী। প্রভাবতী দেবীর প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও খুব অল্প বয়েসেই পিতার উৎসাহে কীটস, শেলী, বায়রন প্রভৃতি কবির কবিতা পড়ে ফেলেন।
মাত্র ৯ বছর বয়েসে তার বিয়ে হয় কিন্তু বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। তাই তিনি বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই পিতার কাছে ফিরে আসেন।
প্রভাবতী দেবী ব্রাহ্ম গালর্স ট্রেনিং কলেজ থেকে টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট অর্জন করে উত্তর কলকাতার সাবিত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করেন ও পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উদ্যোগে তিনি কলকাতা পুরসভা পরিচালিত বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
মাত্র ১১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ‘গুরুবন্দনা’ প্রকাশ পায় তত্ত্বমঞ্জরী পত্রিকায়। প্রথম গল্প ‘টমি’ প্রকাশ পায় অর্চনা পত্রিকায় ১৯২২ সালে। প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর বলিষ্ঠ লেখনী সেই সময় খুব নাম করেছিল। সামাজিক বিষয় ছিল তাঁর লেখার মূলধন। হিন্দু ধর্মের আদর্শ ও মূল্যবোধও পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। ১৯২৩ সালে তাঁর রচিত প্রথম ধারাবাহিক উপন্যাস ‘বিজিতা’ প্রকাশিত হয় জলধর সেন সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকায়। পরবর্তীকালে এই উপন্যাসটি বাংলা, হিন্দি ও মালয়লম ভাষায় যথাক্রমে ‘ভাঙাগড়া’, ‘ভাবী' ও ‘কুলদেবম্’ নামে চলচ্চিত্রও হয়। বাংলায় ‘ভাঙাগড়া’ ও হিন্দিতে 'ভাবী' চলচ্চিত্রগুলি
খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণা সিরিজের কৃষ্ণা নামের একটি মেয়ে ডিটেকটিভের সাহস ও দক্ষতা নিয়ে তিনি অনেকগুলি বই লিখেছিলেন। তিনি প্রথম বাংলা সাহিত্যে মেয়ে ডিটেকটিভের চরিত্র উপস্থাপনা করেন। সেই সময় তাঁর ‘ইন্টারন্যাশনাল সার্কাস’ ছোটদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল। তার উপন্যাস পথের শেষে 'বাংলার মেয়ে' নামে নাট্য রূপায়িত ও সাফল্যের সাথে অভিনীত হয়েছে। বাঁশরী, সারথি, উপাসনা, উদ্বোধন, সম্মিলনী, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় লেখালিখি করতেন। গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে তিনশোরও বেশি রচনা আছে তাঁর।
সাবিত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য লাভ করেন। কবিগুরুও তাঁকে সাহিত্য রচনাতে যথেষ্ট উৎসাহিত করেন। ‘মাটির দেবতা’ উপন্যাসটি হয়ত সেই উৎসাহের ফসল।
খাঁটুরার বঙ্গ বালিকা বিদ্যালয় যখন বিলুপ্তির পথে তখন প্রভাবতী দেবী নিজের প্রতিভা ও কর্মদক্ষতায় তাকে খাঁটুরা বালিকা বিদ্যালয় নামে পুনরুজ্জীবিত করে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও নারী প্রগতিতে তিনি বিশেষ ভাবে উৎসাহী ছিলেন। ওই অঞ্চলে সরোজ নলিনী নারী মঙ্গল সমিতির শাখা কেন্দ্রের সভানেত্রী ছিলেন। ‘বিপ্লবীর স্বপ্ন’ উপন্যাসটি প্রভাবতীর স্বদেশপ্রেমের সাক্ষ্য বহন করে।
তাঁর সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজ তাঁকে ‘সরস্বতী’ উপাধি দেন। এ ছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘লীলা পুরস্কার’ পান।
কলকাতার পাতিপুকুরে নিজ বাসগৃহে প্রায় মাস তিনেক গলব্লাডারের অসুখে ভুগে ১৯৭২ সালের ১৪ই মে প্রভাবতী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।
No comments:
Post a Comment