02 March 2019

আজ ২রা মার্চ প্রাচ্যের নাইটেঙ্গল, স্বাধীন ভারতের প্রথম রাজ্যপাল সরোজিনী নাইডুর ৭০তম প্রয়াণ দিবস।


আজ ২রা মার্চ প্রাচ্যের নাইটেঙ্গল, স্বাধীন ভারতের প্রথম রাজ্যপাল সরোজিনী নাইডুর ৭০তম প্রয়াণ দিবস। এই উপলক্ষে  তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনেকে তাঁকে ভারতীয় "কোকিল" এবং "প্রাচ্যের নাইটেঙ্গল" নামে ডাকেন। আর আপামোর ভারতবাসী  তাঁকে চেনে সরোজিনী নাইডু নামে।

হায়দ্রাবাদের এক হিন্দু পরিবারে ১৩ই ফেব্রুয়ারী ১৮৭৯ সালে সরোজিনী নাইডু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের মুনসীগঞ্জ জেলায়। পিতা অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সুপণ্ডিত। সরোজিনীর মায়ের নাম বরদাসুন্দরী।

সরোজিনী মাত্র বারো বছর বয়সে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে শিক্ষাজগতে এক অনন্য নজীর সৃষ্টি করেন। ছোট বয়স থেকেই তিনি সুন্দর কবিতা লিখতেন। মাত্র ছয় দিনে তেরোশো লাইনের একটি কাব্য তিনি লিখেছিলেন। তাঁর প্রথম কবিতার বই লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলি দেশ-বিদেশে যথেষ্ট খ্যাতিলাভ করে। তিনি ইংরাজিতে দু’হাজার লাইনের একটি নাটিকা রচনা করে সকলকে চমকে দেন। পিতা অঘোরনাথ তাঁর এই অভাবনীয় কীর্তি দেখে চমৎকৃত হন। অঘোরনাথ এই নাটিকাটি ছাপিয়ে  হায়দ্রাবাদের নিজাম বাহাদুরকে উপহার দিয়েছিলেন। সরোজিনীর মনের ইচ্ছা ছিল বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার। এই কথা নিজাম জানতে পেরে বার্ষিক ৩০০ পাউন্ড বৃত্তি ধার্য করে দিলেন আর সেই বৃত্তি নিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সরোজিনী ইংল্যান্ড গিয়ে কিংস কলেজ এবং কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষালাভ করেন। ইংরেজি কবিতা রচনার জন্যে তিনি ‘প্রাচ্যের নাইটেঙ্গল’ নামে পরিচিতি পান। সরোজিনী উর্দু, তেলুগু ও ফারসি ভাষা শিখেছিলেন। 

১৭ বছর বয়সে সরোজিনী চট্রোপাধ্যায় ডঃ মুথিয়ালা গোবিন্দরাজুলু নাইডুর প্রেমে পরেন এবং ১৯ বছর বয়সে পডাশোনা সমাপ্ত করে তাঁর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। উল্লেখ্য, সেই যুগে অসবর্ণ বিবাহ সমাজে নিষিদ্ধ ছিল। সরোজিনী ব্রাহ্মণ হলেও গোবিন্দরাজুলু ছিলেন অব্রাহ্মণ। ১৮৯৮ সালে মাদ্রাজে তাঁদের বিবাহ হয়। বিয়ের পরে তার নামের সাথে স্বামীর উপাধী ধারণ করে সরোজিনী নাইডু নামে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁদের চারটি সন্তান হয়ে ছিল। জয় সূর্য, পদ্মজা, রণধীর ও লীলামণি। কন্যা পদ্মজা পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হন। সরোজিনী নাইডু ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী অন্যদিকে বিশিষ্ট কবি।

সরোজিনী দেবী ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯১৯ সালে ভারতীয় নারীর অধিকার সাব্যস্ত করার জন্যে ইংল্যান্ডে যান সরোজিনী। ১৯২৫ সালে তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বিশেষত নারীজাতির মুক্তি আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, হিন্দু- মুসলিম ঐক্য, সমাজ ও আইন সংস্কার অভিযানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল।

সরোজিনী নাইডু গান্ধীজীর সংস্পর্শে এসেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সরোজিনী নাইডুর সম্পর্ক এতটাই অন্তরঙ্গ ছিল যে গান্ধীজি তাকে "মিকি মাউস" বলে ডাকতেন। দুজনের প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল লন্ডনে। সেই ব্যাপারে সরোজিনী নাইডু লিখেছিলেন, "একজন ছোটখাটো চেহারার মানুষ। মাথায় একটাও চুল নেই। মেঝেতে কম্বল পেতে বসে তিনি তেলে ভেজানো টম্যাটো খাচ্ছিলেন তখন। সারা পৃথিবীর মানুষ তখন গান্ধীজীকে চেনে। সেই মানুষটাকে ওইভাবে দেখে আমি হেসে ফেলেছিলাম। উনি চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, 'নিশ্চয়ই আপনিই মিসেস নাইডু? এতটা অশ্রদ্ধা আর কে-ই বা করতে পারে আমাকে? আসুন, আমার সঙ্গে খাবার শেয়ার করুন।" এইভাবেই সরোজিনী নাইডু আর গান্ধীজীর সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল।

১৯৪৯ সালের ২রা মার্চ এলাহাবাদে নিজের অফিসেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান সরোজিনী নাইডু।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।


No comments:

Post a Comment