11 February 2019

আজ ১১ই ফেব্রুয়ারি, বাংলা সাহিত্যের রম্য রচনায় প্রবাদপুরুষ সৈয়দ মুজতবা আলীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।

সৈয়দ মুজতবা আলী রম্য রচনায় বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ। মানুষকে হাসানোর কাজটি অতি সহজে করেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। যে কোনো বক্তব্যকে নিয়ে তিনি হাস্যরস করেছেন। রম্য রচনার রস সহজে যাতে পাঠক আস্বাদন করে, একটু হলেও হাসির খোরাক জোগায় সে চেষ্টাই তিনি জীবনভর করে গেছেন।

তাঁর ‘রসগোল্লা’ রম্য রচনাটি পড়লে হেসে লুটোপাটি খেতে হয়। গল্পের মুল চরিত্র ঝান্ডুদা বন্ধুর মেয়ের জন্য এক টিন ভ্যাকুম প্যাকেটজাত মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছে। ইতালির কাস্টমস অফিসারের সাথে তা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাদের সে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছেনা যে  প্যাকেট খুললেই মিষ্টি নষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে নানা হাস্যরসাত্মক ঘটানোর পরেও ঝান্ডুদাকে মিস্টির প্যাকেট খুলতে হয়। আর প্যাকেট খোলার পরে ঘটে সেই আসল ঘটনা। কিছু বুজে উঠার আগেই ঝান্ডুদা ক্ষেপে রসগোল্লা নিয়ে অফিসারের নাকে-মুখে লেপে দেয়। আর সকলকে রসগোল্লা বিলিয়ে দেয়। সকলেই রসগোল্লার রসে মজে আরোও রসগোল্লা খেতে চায় কিন্তু ততোক্ষণে সব শেষ। রসগোল্লার রসে মজে ঝান্ডুদাকে ক্ষমা করে দেন কর্তৃপক্ষ আর সেই যাত্রায় ঝান্ডুদা বেঁচে যায়।

স্ত্রীর দ্বারা স্বামী নির্যাতনের কাহিনীর সাথে  রঙ চড়িয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন ‘দাম্পত্য জীবন’। যেখানে স্বামীরা স্ত্রীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মিছিল-মিটিং করে। এমন একটি সভা চলা কালে শোনা গেল স্ত্রীরা ঝাঁটা নিয়ে সভা পন্ড করতে আসছে। এই খবর রটার সাথে সাথে সভাস্থল খালি হয়ে গেল। একমাত্র সভাপতি সেখান থেকে নড়ল না। পাঠকের মনে হতে পারে তাহলে সভাপতিই একমাত্র বীরপুরুষ যে কিনা সভা ছেড়ে পালাইনি। আসলে ব্যপারটা ছিল অন্যরকম। দারোয়ান গিয়ে দেখল সভাপতি মারা গেছে। সভাপতির চিরতরে পালানোটা ট্রাজেডি কিন্তু এখানেও পাঠকের মনের কোণে অদ্ভুত হাসির সুড়সুড়ি দেয়।

শান্তিনিকেতন ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘রবি-পুরাণ’। শান্তিনিকেতনে এক মারাঠি ছেলে রবীন্দ্রনাথকে সন্ন্যাসী ভেবে তাঁকে একটি আধুলি দিয়েছিলো। রবিঠাকুর সে নৈবেদ্য গ্রহণ করেছিল। এখানে মুজতবা আলী আরো যোগ করেছেন রবিঠাকুরের কাছ থেকে একবার একটা লোক দশ টাকা ধার নিয়ে বলেছিল আমি চির ঋণী হয়ে থাকলাম। রবিঠাকুর তার নাতি দিনেন্দ্রনাথকে বলেছিল লোকটার শত দোষ থাকলেও একটা গুণ ছিল। লোকটা সত্যভাষী। এই কাহিনী আমাদের রসের সন্ধান দেয়।

শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামে হাতে লেখা ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন– দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন। তাঁর বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণকাহিনি। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ “দেশে বিদেশে’, ‘শব্নম্’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘হিটলার’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘ধূপছায়া’, ‘জলে ডাঙায়’, ‘মুসাফির’, ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘অবিশ্বাস্য’, ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’, ‘টুনিমেম’, ইত্যাদি।

সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৪ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে। তাঁর পিতা সৈয়দ সিকান্দার আলী। তাঁর পৈতৃক ভিটা হবিগঞ্জে।
পিতার বদলীর চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথম দিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবী, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইটালীয় ভাষাশিক্ষা লাভ করেন।

১৯৪৯-এ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নরসিংহদাস সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হন। ১৯৬১ সালে  তাঁকে আনন্দ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে ফেরেন ১৯৭২-এ। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিশেবে পান একুশে পদক ২০০৫ (মরণোত্তর)।

সৈয়দ মুজতবা আলীর বাংলাদেশেই ১১ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ সালে জীবনাবসান হয়। আজ ওঁনার ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।

ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন।  জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।


No comments:

Post a Comment