22 February 2019

আজ ২২শে ফেব্রুয়ারী, ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ১৯২তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আজকের দিনে জাতীয়তাবোধ,স্বদেশপ্রীতি ইত্যাদি শব্দগুলি খুব আলোচিত হচ্ছে। আজ ২২শে ফেব্রুয়ারি, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক ও জাতীয়তাবাদী ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ১৯২তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর সম্বন্ধে এই বিষয়ে নিচের  অনুচ্ছেদটি খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

"স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস" গ্রন্থে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের  ইতিহাসবোধ, স্বদেশপ্রীতি এবং কল্পচেতনার এক অনবদ্য সমন্বয় ঘটেছে। এ গ্রন্থে তিনি কাল্পনিক ঘটনার মাধ্যমে ভারতের জাতীয় চরিত্রের দুর্বলতার দিকগুলি চিহ্নিত করেছেন। এখন যে সময়টার কথা বলছি তখন বঙ্কিমচন্দ্র ঠিক লিখতে শুরু করেননি। হিন্দু কলেজের  ছাত্র মাইকেল মধুসূদন দত্তের বন্ধু জাতীয়তাবাদী ভূদেব মুখোপাধ্যায় লেখালেখি করছেন। হিন্দু কলেজের এক ইংলিশ শিক্ষক একবার লিখলেন, "ভারতীয়দের কোন জাতীয়তাবোধ নেই"। এর উত্তরে ভূদেব মুখোপাধ্যায় লিখলেন-"স্বামীর প্রতি পিতৃগৃহের অপমানে দেহত্যাগ করেছিলেন সতী, সুদর্শন চক্রে কাটা সতী’র দেহের নানা অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে সেখানেই ভারতের তীর্থস্থান। তবে সতী সব মিলিয়ে এক: সব তীর্থ মিলে একই ভারত মাতা। সেটাই ভারতীয় জাতীয়তাবোধ। সদা জাগ্রত"। একবার তিনি বলেছিলেন "ভারতবর্ষ একটা মহাদেশ। এই মহাদেশের অন্তর্গত প্রত্যেক বিভাগের নেতাদের যত্নে যদি সমস্ত দেশ মিলিত হতে পারে তাহা হইলে এক মহাজাতির অভ্যুত্থান কল্পনা করিতে পারি..... "। এরকমই ছিল ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের  জাতীয়তাবোধ ও স্বদেশপ্রীতির ভাবনা।

১৮২৭ সালের এই দিনে ভূদেব মুখোপাধ্যায় কলকাতার হরীতকীবাগান লেনে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খ্যাতনামা পন্ডিত বিশ্বনাথ তর্কভূষণ। ভূদেব মুখোপাধ্যায় পেশাগতভাবে ছিলেন এক শিক্ষক এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গের নবজাগরণের এক অন্যতম পুরোধা। তাঁর লেখায় আধুনিক চিন্তাসমুহ তৎকালীন নবীন সাহিত্যগোষ্ঠীর মধ্যে এক গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে যাঁদের অন্যতম হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও  হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।

১৮৫৭ সালে বাংলা সাহিত্যে প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস "অঙ্গুরীয় বিনিময়" নামে একটি বই প্রকাশ করেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়। এই বইয়ে "অঙ্গুরীয় বিনিময়" ছাড়া অন্য  আরেকটি উপন্যাস ছিলো যার নাম "সফল স্বপ্ন"। উপন্যাস দুটিতে ঐতিহাসিক তথ্যনিষ্ঠার সাথে সচেতন ফিকসনের যোগ আছে। বলা হয় বাংলা সাহিত্যে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখবার প্রথম উদাহরণ ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের। পরে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসে অঙ্গুরীয় বিনিময়-এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।

হিন্দি ভাষার উন্নয়নেও ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্মরণীয়। স্কুল পরিদর্শক থাকাকালীন তাঁর প্রচেষ্টায় বিহারে অসংখ্য হিন্দি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা পুস্তকের হিন্দি অনুবাদকরণ এবং মূল হিন্দি পুস্তক রচনায় সচেষ্ট ছিলেন। তাঁরই প্রস্তাব অনুযায়ী বিহারের আদালতসমূহে ফারসির পরিবর্তে হিন্দি ভাষা প্রবর্তিত হয়। হিন্দিকে সর্বভারতীয় ভাষারূপে গ্রহণ করা উচিত বলেও তিনি মনে করতেন।

সংস্কৃতর প্রতি তাঁর আত্মিক অনুরাগের পরিচয় হিসেবে (মূলত ভাষার উন্নতির জন্য) তিনি তাঁর পিতার নামে বিশ্বনাথ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছিলেন। এছাড়াও বিশ্বনাথ চতুষ্পাঠী এবং মায়ের নামে ব্রহ্মময়ী ভেষজালয় স্থাপন করেছিলেন। ভূদেব মুখোপাধ্যায়কে ভারতচিন্তার পথপ্রদর্শক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ভূদেব মুখোপাধ্যায় ছাত্রদের পাঠোপযোগী অনেক গ্রন্থও রচনা করেছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, পুরাবৃত্তসার, ইংল্যান্ডের ইতিহাস, রোমের ইতিহাস, ক্ষেত্রতত্ত্ব , বাংলার ইতিহাস, পুষ্পাঞ্জলি  ইত্যাদি। সাহিত্য, ধর্মশাস্ত্র, সমাজ, শিক্ষা, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের গভীর পান্ডিত্যের স্বাক্ষর মেলে। তাঁর কর্মের সম্মান স্বরূপ ১৮৭৭ সালে তিনি সরকার কর্তৃক সি.আই.ই উপাধি লাভ করেন। ১৫ই মে ১৮৯৪ সালে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

আজ ২২শে ফেব্রুয়ারী, ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ১৯২তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment