20 February 2019

শরৎচন্দ্র বসু ছিলেন  ব্যারিস্টার, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক, কংগ্রেস দলীয় ও ফরোয়ার্ড ব্লক এর নেতা। আজ ওঁনার ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভাই বোনেদের মধ্যে মেজদা শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে ছিল তাঁর অন্তরঙ্গতা। প্রথম থেকেই শরৎচন্দ্র বসু নেতাজীর বৈপ্লবিক চিন্তাধারাকে সমর্থন করতেন। দুজনের ব্যস্তময় জীবনেও জড়িয়ে থাকতো কিছু মজার মজার ঘটনা। একবার খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় সুভাষচন্দ্র লিখেছেন "আমি বনকুসুম তৈল মাখিয়া দেখিলাম উহা অত্যন্ত উপকারী"। এই বিজ্ঞাপন দেখে শরৎচন্দ্র বসু তাঁকে ডেকে বলেন " সুভাষ তুই একটা কাজ কর। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তোর আগের এবং এখনকার দুটো ছবি পাঠিয়ে দে, তাহলেই তেলের উপকারিতা বোঝা যাবে।" ছোটবেলায় নেতাজীর ঘন চুল থাকলেও পরে তা কমে গিয়েছিল। আর একদিনের ঘটনা। মিটিং-এ নেতাজীকে যেতে হবে দূরে ট্রেনে করে। সবাই তৈরী হয়ে আছেন কিন্তু নেতাজী যখন তৈরী হলেন তখন ট্রেন ছাড়তে বাকি মাত্র সাত মিনিট। এর পরে আর কোনো ট্রেন নেই। এই ট্রেন মিস করলে আর মিটিং এ যাওয়া হবে না। তখন কলকাতার জ্যাম না থাকলেও সাত মিনিটে এলগিন রোড থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানো সম্ভব নয়। শেষমেশ শরৎচন্দ্র বসু হাওড়া স্টেশনে ফোন করে নানা কারণ দেখিয়ে ট্রেনটিকে আটকান। নেতাজীও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। গান্ধিজী কলকাতায় শরৎচন্দ্র বসুর বাড়ীতে উঠলে গান্ধিজীর অটোগ্রাফ নেবার জন্য সেখানে জমা পড়তো অনেক খাতা। প্রতি অটোগ্রাফের জন্য গান্ধিজী নিতেন ৫ টাকা। একদিন  শরৎচন্দ্র বসু নেতাজীকে বলেন "তোরও টাকার খুব দরকার। তোর সইয়ের জন্য ২ টাকা নে না।" নেতাজী এর উত্তরে বলেন "ওসব আমার দ্বারা হবে না"। এ রকমই ছিল শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে নেতাজীর সম্পর্ক। আজ শরৎচন্দ্র বসুর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা।

জানকীনাথ বসুর পুত্র ও সুভাষচন্দ্র বসুর মেজ ভাই শরৎচন্দ্র বসু  ৬ই সেপ্টেম্বর,১৮৮৯ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।  শরৎচন্দ্র বসু  ছিলেন  ব্যারিস্টার, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক, বঙ্গীয় আইন সভায় বিরোধী কংগ্রেস দলীয় নেতা ও ফরোয়ার্ড ব্লক এর নেতা।  কলকাতায় স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড যান। চিত্তরঞ্জন দাশের অনুপ্রেরণায় শরৎচন্দ্র বসু রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বেঙ্গল কংগ্রেসের সভাপতি হন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকা সম্পর্কিত ইস্যুতে তিনি ১৯৪৭ সালে তাঁর সদস্য পদ ত্যাগ করেন। একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি হিসেবে শরৎচন্দ্র বসু বাংলা বিভাগের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি সমাজ ও ভাষার ভিত্তিতে গঠিত স্বশাসিত সমাজতান্ত্রিক রাজ্যের সমন্বয়ে একটি অখন্ড ভারত গঠনের পক্ষে ছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তাঁর চিন্তাধারার যথেষ্ট মিল ছিল। সোহরাওয়ার্দীও এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মিলিত স্বাধীন বাংলা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। উভয় নেতা পরবর্তী সময়ে একটি অখন্ড স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক হয়ে কাজ করেন।

শরৎচন্দ্র বসু ভারতীয় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের একজন নৈতিক সমর্থক ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হয়ে আদালতে বিনা পারিশ্রমিকে সওয়াল করতেন। তার স্ত্রী শ্রীমতি বিভাবতী বসুও গান্ধীবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগী ভূমিকা নেন। ১৯৫০ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি শরৎচন্দ্র বসুর কলকাতায় মৃত্যু হয়।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।






No comments:

Post a Comment