14 February 2019

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা।

বাংলার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে উজ্জীবিত করতে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। বাংলার চিত্রকলাকে বিশ্বের দরবারে অন্য মাত্রায় প্রতিষ্ঠা করার উদ্দোগে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অনস্বীকার্য।  গগনেদ্রনাথের ছবির ভেতর দিয়ে বাংলার চিত্রকলা চর্চা সম্পূর্ণ একটা নতুন দিশা পেয়েছিল। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে যেভাবে আলোছায়া স্থাপত্যের নির্মানগত কারনে বাড়ীর দেওয়াল, বারান্দায় বা সিঁড়ির খাঁজে পরতো এবং আলোছায়ার টুকরোতে স্পেসকে ভাগ করে দিত গগনেন্দ্রনাথ তাকেই ছবিতে ও আলোকচিত্রে তুলে এনেছিলেন। এই ছবির চরিত্র কিছুটা কিউবিস্ট চিত্রকরদের সাথে মেলে বলেই স্টেলা ক্রামরিশ তাঁকে "অ্যান ইন্ডিয়ান কিউবিস্ট" বলে আখ্যা দিয়েছেন।

গগনেন্দ্রনাথ প্রথম হরিনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাশ্চাত্য জলরঙে ছবি আঁকা শিখেন। পরে জাপানি শিল্পী ইওকোহামা (ওকাকুরু) এবং টাইকান (তাইকোয়ান)-এর দ্বারা তিনি প্রভাবান্বিত হন। রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতির জন্য কয়েকটি চিত্র তিনি অঙ্কন করেন যেগুলিতে জাপানি প্রভাব স্পষ্ট।

তাঁর ব্যঙ্গচিত্রে বাঙালীয়ানার ছাপ দেখা যায়। ১৯১১ সালে মোহনবাগান ইংরেজ দলকে হারিয়ে আই এফ এ শীল্ড জয় করে। তখন বাঙালী আর ফুটবল মিলে মিশে এক হয়ে যায়। পাড়ায় পাড়ায় তখন ফুটবল ক্লাব তৈরী করার হিড়িক পড়ে যায়। এখানে ঠাকুরবাড়ী পিছিয়ে থাকবে কেন। গগনেন্দ্রনাথ জুড়িগাড়ী হাঁকয়ে মাঠে গেলেন মোহনবাগানের খেলা দেখতে। তিনি মাঠে পৌঁছালে শুরু হয় বৃষ্টি। সাথে ছাতা না থাকায় তিনি গাড়ী থেকে নেমে আর খেলা দেখলেন না। বাড়ী ফিরে খেলার মাঠের ছবি আঁকলেন। সেখানে শুধু ছাতা আর ছাতা। নেই কোথাও বারপোস্ট, নেই বল।

তিনি পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। সে সময় শুভ কাজে সেলাই করা পোষাক পড়নো হতো  না। গগনেন্দ্রনাথ মেয়েকে শাড়ি ও ব্লাউজ পড়িয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে আসেন। সেলাই করা পোশাক দেখে পাত্রের বাবা আপত্তি জানায়। কিন্তু গগনেন্দ্রনাথ প্রমাণ  করিয়ে দেখান যে সেই বস্ত্রে কোনো সেলাই নেই। ব্লাউজ নিপুন ভাবে আঠা দিয়ে জোড়া দেওয়া আছে। রবীন্দ্রনাথ পরিণত বয়সে তিব্বতি বকু ধরনের যে জোববা পরতেন তার নকশা সর্বপ্রথম গগনেন্দ্রই করেন।

১৮৬৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভাইপো। তিনি ছিলেন একজন বঙ্গীয় ঘরানারচিত্র ও কার্টুনশিল্পী।

মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর তাঁর স্কুলের পড়াশুনা বন্ধ হয়। তার বদলে শুরু হয় জমিদারির কাজ এবং সে সঙ্গে পরিবারের প্রধান হিসেবে সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালন। কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সাহিত্যে তাঁর ছিল প্রবল আগ্রহ। স্কুলের বন্ধন ছিন্ন হওয়াতেই তিনি স্ব-শিক্ষার সুযোগ পান, যেমনটি পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

অভিনয়কলাতেও গগনেন্দ্রনাথের দক্ষতা ছিল। তিনি জোড়াসাঁকোর বিচিত্রা হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফাল্গুনী  নাটক মঞ্চস্থ করেন এবং স্বয়ং রাজার ভূমিকায় অভিনয় করেন। অ্যানী বেস্যান্ট তাঁর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

গগনেন্দ্রনাথ ১৯২৬ সালে শিশু সাহিত্য ভোঁদড় বাহাদুর রচনা করেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারী,১৯৩৮ সালে। তার ৩০ বছর পর ভোঁদড় বাহাদুর প্রকাশিত হয়। আজ ওঁনার ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment