28 February 2019

আজ ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারী, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের মৃত্যুদিন। তাঁর শেষের দিনগুলি খুবই দুর্দশার মধ্যে কাটে। আমরা জেনে নি শেষের দিনগুলি তাঁর কেমন কেটেছিল। এর মধ্যে কি জওহরলাল নেহেরুর কোনো হাত ছিল?

ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম রাষ্ট্রপতি, জাতীয় কংগ্রেস নেতা ও একজন প্রথিতযশা আইনজীবী। তিনি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্যতম স্থপতি।

তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই  প্যাটেল, খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী কে এম মুন্সি ও কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর কাছে গেলে, গান্ধীজি তাঁদের  পুনর্নির্মাণের কাজে উৎসাহ দেন। কিন্তু এ বিষয়ে নেহেরুর মত ছিল না। গান্ধীজি ও সর্দার প্যাটেলের মৃত্যুর পর নেহেরুর  সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের বিরোধিতা চরমে ওঠে। তিনি কে এম মুন্সিকে নানা ভাবে মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে বাধা দেন। কিন্তু কে এম মুন্সিক নেহেরুর কথায় সায় না দিয়ে মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজটি এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৫১ সালের মে মাসে কে এম মুন্সি  ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদকে দিয়ে মন্দিরের শিলান্যাস করান।

এই সময় প্রধানমন্ত্রী  জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ ও কে এম মুন্সির মধ্যে তিব্র মতান্তর দেখা দেয়। নেহেরু  মুন্সীর বিরুদ্ধে ‘হিন্দু-পুনরুত্থানবাদ’ তথা ‘হিন্দুত্ববাদ’ প্রচারের তকমা লাগিয়ে তীব্র ভর্ৎসনাও করেন। কিন্তু মুন্সী  তাঁর সিদ্ধান্তে অটল।

মন্দির নির্মান সমাপ্ত হলে, মুন্সী স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদকে শুভ-দ্বারোদঘাটনের জন্য সসম্মানে আমন্ত্রণ জানান। তখন নেহেরু রাজেন্দ্র প্রসাদ কে সোমনাথ মন্দিরের উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে নিষেধ করেন। কিন্তু নেহেরুর রক্তচক্ষুকে আমল না দিয়ে তিনি উপস্থিত হলেন সোমনাথ মন্দিরে এবং সেখানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণও দিলেন।

এই ঘটনার পর থেকে নেহেরু রাজেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে  নজিরবিহীন আচরণ শুরু করেন। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তাঁর দিল্লীতে বসবাসের ব্যবস্থা করতে অস্বীকার করেন নেহেরু। একজন ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতির যা যা সম্মান বা অধিকার পাবার কথা ছিল, তার সব কিছু থেকেই ওই রাজেন্দ্র প্রসাদকে বঞ্চিত করা হয়। অগত্যা নিরুপায় রাজেন্দ্র প্রসাদ তাঁর আদি নিবাস পাটনায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু সেখানেও তাঁর নিজস্ব কোন সংস্থান ছিল না। শেষমেশ পাটনার সদাকৎ আশ্রমের একটি আলো-বাতাসহীন বদ্ধ কুঠুরিতে রাজেন্দ্র প্রসাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে। আবদ্ধ ঘরে থাকতে থাকতে ক্রমশঃ দেখা দিল শ্বাসকষ্ট আর কাশির সঙ্গে উঠতে লাগল কফ।

শুধু নেহেরুই নন, সেদিন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির অসুস্থতার খবর পাবার পরও এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, যিনি নূন্যতম চিকিৎসার সুবিধা তাঁর কাছে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছিলেন! বিহারে তখন কংগ্রেসেরই রাজত্ব, সুতরাং বলাইবাহুল্য কোন এক অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর সুচিকিৎসা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে চিরবঞ্চিত রইলেন।

রাজেন্দ্র প্রসাদ আর দশজন সাধারণ রোগীর মতোই চিকিৎসার জন্য প্রায়ই পাটনার মেডিক্যেল কলেজে যেতেন। সেখানে যে মেশিনটিতে তাঁর চিকিৎসা হত, সেটিকেও পর্যন্ত দিল্লী পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। অর্থাৎ রাজেন্দ্র প্রসাদকে প্রকারান্তরে তিলে তিলে মারার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত ভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছিল।

একবার  জয়প্রকাশ নারায়ণ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সদাকৎ আশ্রমে গিয়ে পৌঁছান। রাজেন্দ্রপ্রসাদের অবস্থা দেখে তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান! আর একমূহুর্তও অপেক্ষা না করে তিনি তাঁর অফিসারদের নির্দেশ দেন, রাজেন্দ্র প্রসাদের ঘরটিকে অবিলম্বে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য। সেই মত কাজও শুরু হয়। কিন্তু রাজেন্দ্র প্রসাদ আর বেশি দিন বাঁচেন নি। সেই ঘরেই ২৮শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৩ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়।

ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৪ সালে বিহারের সেয়ান জেলাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯১৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় স্বর্ণপদক সহ পাশ করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পি এইচ ডি ডিগ্রী প্রাপ্ত হন।

আজ ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment