19 February 2019

আজ আমরা শিবাজী জয়ন্তী উপলখ্যে শিবাজী মহারাজের কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোচনা করবো যেটা আজকের দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক।

১৬৩০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী  শিবাজী ভোঁসলে, যিনি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ নামে পরিচিত, মহারাষ্ট্রের পুণের কাছে একটি পার্বত্য দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। আজ আমরা শিবাজী মহারাজের কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোচনা করবো যেটা আজকের দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক।

তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক। যে সেক্যুলারিজমের কথা আজকাল বারবার বলা হয়, শিবাজি মহারাজ প্রকৃত অর্থেই ছিলেন সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শাসক। মুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলতেন। তাঁর সেনার মধ্যে অনেকে ছিলেন মুসলিম। নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁর নাটক "ছত্রপতি শিবাজী" তে শিবাজী মহারাজের ধর্মনিরপেক্ষতার নির্দশন খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই নাটকের কিছু অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

 "দৃত। একজন মুসলমান সৈনিক রাজদর্শন প্রার্থনা করে।

 শিবাজী। ল’য়ে এসো।

 সুরেরাও। বোধ হয়, বিজাপুরের দূত। ( মুসলমান সৈনিকের প্রবেশ )

শিবাজী। সৈনিক, তোমার মন্তব্য প্ৰকাশ করো।

মুসলমান। মহারাজ, আমরা সপ্তশত মুসলমান, বিজাপুরের সৈনিক দল পরিত্যাগ ক’রে মহারাজের অধীনে কৰ্ম্ম প্রার্থনা করি।

শিবাজী। এ প্রার্থনার কারণ কি?

মুসলমান। মহারাজ, যদিচ বিজাপুর মুসলমান রাজ্য, তথায় আমাদের দুরবস্থার পরিসীমা নাই। জাইগিরদারের পীড়ন, উচ্চ রাজকৰ্ম্মচারীর পীড়ন, সুলতানের পীড়ন, আমরা মুসলমান হ’য়েও আমাদের স্বাধীনতা নাই- অধীনের অধীন। কিন্তু মহারাজের রাজ্যে মুসলমানেরা মহারাষ্ট্রের ন্যায় স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা প্ৰয়াসে মহারাজের আশ্রয় গ্ৰহণ করেছি, আশ্রিতকে বর্জন করবেন না।

শিবাজী। এ সম্বন্ধে আপনাদের মতামত কি?

যেসজনীকঙ্ক। বিজাপুরের সুলতানের সহিত আমাদের শক্ৰতা। এঁরা মুসলমান, এঁদের উপর বিশ্বাস স্থাপন কতদূর সঙ্গত, তা মহারাজ বিচার করুন।

আবাজী। মহারাজ, আমার বিবেচনায় সঙ্গত।  আমাদের বিজাপুরের সহিত শক্রতা সত্য, কিন্তু সমস্ত মুসলমানেব সহিত শক্রতা নয়। বিজাপুবের অধীনে অনেক উচ্চপদস্থ হিন্দু কৰ্ম্মচারী আছেন, এমন কি মহারাজের পিতৃদেব কর্ণাটে তাঁর সেনাপতি। আমাদের সৈনিক-কাৰ্য্যে মুসলমান কি নিমিত্ত নিযুক্ত না হবে?

শিবাজী। আবাজী, তোমার প্রস্তাব অতি সঙ্গত। হে মুসলমান বীর, আজ হ'তে তোমরা আমার সৈন্যদলভুক্ত। প্রজা আমার পুত্রের ন্যায় প্ৰিয়। তোমাদের যখন আমার প্রজা হবার বাসনা, তোমরাও জনে জনে আমার পুত্রের ন্যায় আদরণীয়! তোমাদের বাহুবলে অনেক শত্রু পরাজিত হবে, এইরূপ আমার প্রত্যাশা। আমরা ব্ৰাহ্মণ, ক্ষত্ৰিয়,বৈশ্য ও শূদ্র চারি জাতির স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র ধারণ করেছি, তোমরাও সেই স্বাধীনতার অধিকারী। স্বাধীনতার জন্য অস্ত্ৰ ধারণ ক’রে, জন্মভূমির মুখোজ্জ্বল করবে সন্দেহ নাই। আমার সম্পূর্ণ ধারণা, প্ৰজাপীড়ক ওমরাও-চালিত বিজাপুর দরবার, তোমাদের স্বাধীনতা অপহরণ করেছে। আজ হ’তে তোমরা স্বাধীন মহারাষ্ট্র প্রদেশে স্বাধীন। সাধারণ শত্রু বিরুদ্ধে জাতিভেদ কখনই হবে না। জাতিভেদ শত্রুর বাহু বলবান করে। জাতি-বিরোধে শত্রুর পদানত হওয়া অনিবার্য্য। স্বাধীন মহারাষ্ট্র প্রদেশে ধর্ম প্রভেদ বা জাতি প্রভেদে পরস্পর বিরোধের সম্ভাবনা নাই। স্বাধীনতাপ্রিয় মনুষ্যমাত্ৰই একজাতীয়। স্বাধীনতায় তারা একসূত্রে আবদ্ধ। যে স্বাধীনচেতা, তার হৃদয়ে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ নাই। ভেদবুদ্ধি কাপুরুষের হৃদয়ে, কাপুরুষে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ করে। সে ভেদাভেদ স্বাধীন মহারাষ্ট্রে নাই, পরমানন্দে স্বাধীন মহারাষ্ট্রে স্বাধীনতা ভোগ করো। তোমার সহচরীগণকে ল’য়ে এসো, আমি জনে জনে পুত্ৰ সম্বোধনে সম্ভাষণ করবো।

মুসলমান। মহারাজ, কৃতদাস আপনার উদারতায় চির আবদ্ধ।"

শিবাজী মহারাজ মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান করতেন। মহিলাদের হেনস্থা বা তাঁদের ওপর কোনওরকম হিংসার ঘটনা বরদাস্ত করতেন না। কঠোর হাতে তা দমনের পক্ষপাতী ছিলেন। অনেকের বিশ্বাস, মা জিজামাতার প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকেই তিনি মহিলাদের সম্মান করতে শিখেছিলেন। সেনাদের উদ্দেশে কঠোর নির্দেশ থাকত, একজন কোনও মহিলার ওপরও অত্যাচার করা চলবে না। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে, কঠোর শাস্তি হত। নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁর নাটক "ছত্রপতি শিবাজী" তে শিবাজী মহারাজের মহিলাদের সম্মানের নির্দশন ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই নাটকের শিবাজী মহারাজের কিছু কথা  আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

"যদি কীৰ্ত্তিমান হ’বার উচ্চ আশা করো, মাতৃজ্ঞানে পরস্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। ব্যভিচারীর ধ্বংশ অনিবাৰ্য্য। পুরাণ পাঠে অবগত আছ,-সীতার অপমানে লঙ্কা ধ্বংশ হয়, দ্রৌপদীকে উরু প্রদর্শনে দুৰ্য্যোধনের - উরু ভঙ্গ হয়। সাবধান, ব্যভিচারীর উন্নতি নাই। বীরগণ, হৃদয়ে ধারণা রাখো, নারীর সহ আমাদের বিবাদ নাই, কিরূপে রমণীকে সন্মান করতে হয়, মহারাষ্ট্র তা প্রচার করবে। আমরা জন্মভূমির কাৰ্য্যে ব্ৰতী, মাতৃকাৰ্য্যে ব্ৰতী, নারীর অপমানে মাতার অপমান হবে।"

আজ আমরা নিজের প্রয়োজনেই ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে অনেক বেশি করে মনে রাখবো। ভারতের জন্য লড়াই করতে তাঁর সাম্রাজ্যের প্রত্যটি মানুষকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর আমেরিকা ভ্রমণের সময় ছত্রপতি শিবাজী সম্বন্ধে বলেছিলেন, "শিবাজী এমন একজন মহান জাতীয় নায়ক যিনি মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলামুক্ত করেছিলেন"।

আজ ১৯শে ফেব্রুয়ারী ৩৮৯তম শিবাজী জয়ন্তী উপলখ্যে তাঁকে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা।


প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment