04 February 2019

আজ বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক সতেন্দ্রনাথ বসুর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ওঁনার প্রতি রইল আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আজ ৪ঠা ফেব্রুয়ারী জাতীয় অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসুর প্রয়াণ দিবস।

বিজ্ঞানের জগতে যার অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবেনা তিনি হলেন  মহা বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। যিনি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারী উত্তর কলকাতার গোয়া বাগান অঞ্চলে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ নম্বর ঈশ্বর মিত্র লেনে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ২৪ পরগণার কাঁড়োপাড়ার সন্নিকটে বড়োজাগুলিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা সুরেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ব ভারতীয় রেলওয়ের হিসাবরক্ষক এবং মা আমোদিনী দেবী ছিলেন আলিপুরের মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা। সত্যেন্দ্রানাথ বসু সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন।

তিনি ছিলেন একজন বাঙালী পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থ বিজ্ঞান। আইনস্টাইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী ছিলেন সত্যেন বোস, তাঁরা এক সাথে গবেষণা করেন বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় নিয়ে, যা সাড়া পরেছিলো গোটা দুনিয়ায়। যে আবিষ্কারের কারনে বিজ্ঞান অনেক দুর এগিয়েছিলো তা হলো বোসন কণা। এমনকি এই বোসন কণার সাথে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও অনেক মৌলিক বিষয় যুক্ত করেন যার নামকরন করা হয় বসু-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন। হিগসবসোন কণা আবিস্কারের পর তার নাম নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ কর্মজীবনে যুক্ত ছিলেন তিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা, ঢাকা ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মাদাম কুরী প্রমুখ মণীষীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আবার অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রাখতেন তিনি। তিনি শুধুমাত্র বাংলায়  বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই ছিলেন না, সারা জীবন ধরে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ধারাটিকেও জারি করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর অমর উক্তি, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।” বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান পরিচয় নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন নিরলস, কর্মঠ ও মানবদরদী মণীষী। বিজ্ঞানের পাশাপাশি সঙ্গীত ও সাহিত্যেও ছিল তাঁর আন্তরিক আগ্রহ ও বিশেষ প্রীতি।এক কথায় তিনি ছিলেন একজন মানবিক মানুষ।

কিন্তু দুঃখের বিষয় আইনস্টাইন আমাদের কাছে যতটা পরিচিত,  সত্যেন্দ্রনাথ বসু ততটা পরিচিত নন। আমাদের প্রজন্ম দূরের আইনস্টাইকে চিনে কিন্তু কাছের সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে চিনেনা। এর কারণ প্রচারমাধ্যমে আইনস্টাইন সুযোগ পেয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসুর চেয়ে বেশি। এ ছাড়া স্বদেশী বিজ্ঞানসাধকের প্রতি আমাদের উৎসাহ খুবই কম। এটা আমাদেরই দীনতা।জাতি হিসেবে আমরা কখনই নিজেদের মেধাকে মূল্যায়ন করতে শিখিনি। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আইনস্টাইনের অবদানের চেয়ে বেশি।

তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন।

No comments:

Post a Comment