22 February 2019

আজ আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ আজাদের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। উঁনি মৌলানা আজাদ নামেই পরিচিত ছিলেন।


আজ আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ আজাদের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। উঁনি মৌলানা আজাদ নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি  ছিলেন পণ্ডিত, কবি, সাংবাদিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। এছাড়া তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় দক্ষ ছিলেন। জেনে নিন ওঁনার কিছু কথা।

১) মৌলানা আজাদর পিতার নাম মাওলানা খাইরুদ্দিন ও তাঁর মা ছিলেন শেখ মোহাম্মদ জাফর ওয়াত্রির মেয়ে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় পীর খাইরুদ্দিন স্বপরিবারে মক্কায় চলে যান। ১৮৮৮ সালের ১১ই নভেম্বর মৌলানা আজাদ মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। 
২) ১৮৯০ সালে মৌলানা আজাদের বাবা স্বপরিবারে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। মৌলানা আজাদ কলকাতার মাদ্রাসায় ৮ বছরের পাঠক্রম মাত্র ৪ বছরেই শেষ করেন।

৩) তিনি মিশরে যান এবং মাত্র ১৯ বছর বয়সে আজাহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ শেষ করে স্বদেশে ফেরেন। তখন মিশরে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল এবং তাতে তিনি অনুপ্রাণিত হন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি পীরের পদ গ্রহণ করেননি।

৪) বিদেশ থেকে ফিরে এসে মৌলানা আজাদ বিপ্লবী শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ ও শ্রীশ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণায় ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। প্রকৃতপক্ষে একদিকে তিনি ছিলেন একজন গোপন বিপ্লবী এবং অন্য দিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রকাশ্য কর্মী।

৫) মৌলানা আজাদের সম্পাদনায় ‘আল-হেলাল’  নামে একটি প্রগতি চেতনার পত্রিকা প্রকাশিত হত। পত্রিকাটি ছিল সংস্কারমুক্ত এবং আধুনিক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ। পত্রিকাটি ব্রিটিশ সরকারের রোষাণলে পড়ে। কলকাতা থেকে তাকে ১৯১৬ সালে রাঁচিতে নির্বাসিত করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তার ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

৬) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে তিনি বিভিন্ন স্থানে তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ ভাষণের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।

৭) মৌলানা আজাদ মহাত্মা গান্ধীর  অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তিনি ভারতীয় ন্যশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন। স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মৌলানা আজাদ গ্রেপ্তার হন এবং এক বছর কারাগারে ছিলেন।

৮) ১৯২৩ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ট হিসেবে মৌলানা আজাদ কংগ্রেসের একটি সেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি  দু’বার ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।রাজনৈতিক জীবনের ১১ বছর তিনি কারাগারে কাটান।

৯) মৌলানা আজাদ জালিয়ানওয়ালাবাগ ও খিলাফৎ আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা  পালন করেন।

১০) তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হবে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য, আর সে ঐক্যের ভিত্তিমূল হবে রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সেক্যুলার ধারণা। তিনি সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। ভারতকে ভাগ করা তিনি মেনে নিতে পারেন নি।

১১) ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার পর তিনি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন। তিনি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্থাপন করেন।

১২) মৌলানা আজাদ ছিলেন তুখোড় বক্তা। তিনি ১৯০৪ সালে লাহোরে বিদ্বজন সভায় আমন্ত্রণ পেয়ে যোগদান করেন। সেখানে তিন ঘন্টা বক্তৃতা দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। ইন্দিরা গান্ধী তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, যখনই আজাদ আনন্দ ভবনে থাকতেন, খাবারের টেবিল মানুষে ভরপুর থাকত; এমনকি অনেকে তার কথা শুনতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। দীর্ঘ বাক্যকে এক বা দুই বাক্যে ভেঙে বলার এক জাদুকরী ক্ষমতা ছিল আজাদের, যা শ্রোতাদের ওপর অসামান্য প্রভাব বিস্তার করত।

১৩) রাজনীতির পাশাপাশি ইসলামের ওপরও তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মুক্তচিন্তা সমৃদ্ধ গ্রন্থের জন্য তিনি সমানভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন। ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ তার লেখা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি মূল্যবান গ্রন্থ।

১৪)  ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮ সালে দিল্লিতে তিনি মারা যান। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার মৌলানা আজাদকে  ভারতরত্ন পুরষ্কারে ভূষিত করে। 

১৫) তার জন্মবার্ষিকীতে ভারতে "জাতীয় শিক্ষা দিবস" হিসেবে পালিত হয়।

১৬) ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে এই মহান গুণী মানুষকে নিয়ে তার আত্মজীবনীর উপর প্রথম সিনেমা "ও জো থা এক মাসিহা মৌলানা আজাদ" সারা দেশে মুক্তি পায়।

প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। যে কোনো বিষয়ে জানা- অজানা তথ্য আমাদের সাথে আপনিও শেয়ার করতে পারেন।১০০০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লিখে ছবি সহ মেইল করুন  wonderlandcity.net@gmail.com ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

No comments:

Post a Comment